অ্যাপল স্টোরের সামনে রাত কাটানোর তোড়জোড় করছে কোনও এক সদ্যযুবক।
ইন্টারনেটে আগাম বিক্রি ভেঙে দিচ্ছে অ্যাপলেরই পুরনো রেকর্ড।
খবরের কাগজে আর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত বিশেষজ্ঞরা।
ছবিগুলো আর বদলায় না। আইফোন হোক, বা আইপড, আইপ্যাড অ্যাপলের নতুন যন্ত্র বাজারে আসার আগের দিন যেন টাইম মেশিনে একই আবহের পুনরাভিনয়।
২০১২-র সেপ্টেম্বরেও সেই একই ছবির কোলাজ। আগামিকাল আমেরিকা-সহ কয়েকটি দেশের বাজারে আসছে আইফোন-৫। যার ঠিক আগের সংস্করণ আইফোন-৪এস-এর আত্মপ্রকাশের (৪ অক্টোবর, ২০১১) কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রয়াত হন অ্যাপলের প্রাণপুরুষ স্টিভ জোবস। কাজেই জোবস-বিহীন অ্যাপলের প্রথম আইফোন বাজারে আসা নিয়ে চর্চা ও আবেগের মিশেল কোথায় পৌঁছয়, তা নিয়ে কৌতূহল সারা দুনিয়ার।
কিন্তু ওই ‘উন্মাদনা’র আবহটাই শেষ কথা নয়। বরং কোথাও যেন তার চেয়েও বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াচ্ছে আইফোন-৫-এর ‘সূক্ষ্মতা’। অ্যাপলের সিইও টিম কুক অন্যান্য মোবাইল নির্মাতাদের এ বছর যে চ্যালেঞ্জটা ছুড়েছেন, তার সারমর্ম পারো তো এত পাতলা একটা স্মার্টফোন বানিয়ে দেখাও! |
বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন... |
|
|
আইফোন-৫ মাত্র ৭.৬ মিলিমিটার পুরু। অ্যাপলের দাবি, দুনিয়ায় এর চেয়ে পাতলা স্মার্টফোন নেই।
গত ১২ সেপ্টেম্বর সানফ্রান্সিসকোয় নতুন আইফোনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সেই কথাই বলেন সংস্থার বিপণন বিভাগের কর্তা ফিল শিলার। বলেন, “এত ছোট, অথচ এত কাজের একটা জিনিস কেউ বানাক দেখি!” তাই ওয়েবসাইটেও অ্যাপলের ঘোষণা “এটাই আমাদের তৈরি সব চেয়ে পাতলা যন্ত্র। যে সব সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি এতে ভরা রয়েছে, তা আপনারা আশা করতে পারতেন একটা দুর্দান্ত হাতঘড়িতে, কিন্তু কোনও স্মার্টফোনে নয়।”
আইফোন ৪এসের চেয়েও হাল্কা, পাতলা এবং বড় স্ক্রিনের এই আইফোন-৫। আইফোন ৪এস ছিল ৯.৩ মিলিমিটার পুরু। স্ক্রিনটা ছিল সাড়ে তিন ইঞ্চির। আইফোন ৪এস বাজারে আসার পর বহু অ্যাপল-ভক্তও ঠিক এই ব্যাপারটা নিয়ে ক্ষোভ জানান। এক জন এমনও বলেছিলেন, “মনে হচ্ছে, আইফোন ৪-এর গায়ে কয়েকটা ‘এস’ স্টিকার লাগিয়ে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল আবির্ভাব মঞ্চে জোবসের অনুপস্থিতি। গোলগলা কালো টি-শার্ট আর নীল জিন্স পরা স্বয়ং অ্যাপল-জনকের নতুন যন্ত্র হাতে নিয়ে খুঁটিনাটি বোঝানোটাই ছিল একটা দেখার মতো ব্যাপার। কিন্তু সে বার আইফোন ৪এসের খুঁটিনাটি বুঝিয়েছিলেন সংস্থার অন্য এক কর্তা, সিইও কুক নন। জোবসের উত্তরসূরির যোগ্যতা নিয়ে তখন থেকেই একটা সন্দেহের মেঘ দানা বেঁধেছিল অনেকের মনে। ‘আইফোন-৫’ নামের অস্ত্রে সেই মেঘ অনেকটাই হয়তো কাটিয়ে দিল কুক-বাহিনী। নয়া আইফোনে ৪ ইঞ্চির স্ক্রিন। আইফোন ৪এসের ওজন ১৪০ গ্রাম। আর আইফোন-৫? ১১২ গ্রাম! এক বিশেষজ্ঞ সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “আইফোন-৫ হাতে নেওয়ার পরে আইফোন-৪এস ধরলে মনে হবে, যেন একটা পেপারওয়েট ধরে আছেন!” কাঠামোটাই কাচ ও অ্যালুমিনিয়ামের। তা ছাড়া আছে ৪জি ব্যবহারের ‘এলটিই’ প্রযুক্তি। যাতে ইন্টারনেট করা যাবে আগের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে। ৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাতেই ছবি তোলা যাবে ২৮ মেগাপিক্সেল মাপের। কম্পিউটার বা মিউজিক সিস্টেমের সঙ্গে আইফোন জোড়ার ‘কানেক্টর’টিও (যার নাম ‘লাইটনিং’) এ বার অনেক ছোট। তাই পুরনো আইফোনের কানেক্টর এই ফোনে জুড়বে না। তার জন্য বিশেষ অ্যাডাপ্টর লাগবে। তা ছাড়া, আইফোন ৪এসের জন্য মাইক্রো-সিম লাগত। নয়া সংস্করণে লাগবে আরও ছোট ‘ন্যানো-সিম’।
এই গোটা ব্যাপারটা ধরতে গিয়েই দামী ব্র্যান্ডের হাতঘড়ির উপমা টানছে অ্যাপল। তাদের বক্তব্য, হাল্কা ও সূক্ষ্ম অথচ উন্নততর আইফোন বানাতে গিয়ে তারা ধরে ধরে প্রতিটি যন্ত্রাংশ ছোট করেছে। অথচ ফোনের কোনও বিশেষ ‘ফিচার’ বা গুণমানের সঙ্গে আপস করা হয়নি। এবং এত কিছু করেও ন্যূনতম দাম সেই একই রয়েছে ১৯৯ ডলার।
ফলটাও হাতেনাতে দেখা যাচ্ছে। ১৪ সেপ্টেম্বর অনলাইন বিক্রি শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রেকর্ড ২০ লক্ষ অর্ডার জমা পড়েছে। অবস্থা এমনই যে, নতুন অর্ডারের ডেলিভারির তারিখ ৩-৪ সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে অ্যাপল। কাল ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, জাপান ও সিঙ্গাপুরেও বিক্রি শুরু হবে আইফোন-৫-এর। একসঙ্গে দু’টোর বেশি অবশ্য কেনা যাবে না।
কাজেই ‘সূক্ষ্মতা’ নিয়ে চর্চা থাকলেও ক্রেতাদের উৎসাহটাও একেবারে এড়িয়ে যাওয়া অন্যায়। এই ফাঁকতালে অবশ্য আর এক দফা অ্যাপল বনাম স্যামসাং দ্বৈরথের সিঁদুরে মেঘও জমছে। অ্যাপলের প্রযুক্তি চুরির দায়ে সম্প্রতি মার্কিন আদালতে জরিমানা হয়েছিল স্যামসাংয়ের। ইতিমধ্যে খবর, আইফোন-৫-কেও মামলায় টেনে আনার ছক কষছে স্যামসাং। তাদের দাবি, আইফোন-৫-এ অ্যাপল অন্তত তাদের ৮টা পেটেন্টধারী প্রযুক্তি ‘চুরি’ করবেই।
যন্ত্রপাগল হোক বা প্রতিদ্বন্দ্বী যন্ত্রনির্মাতা, আইফোনের অপেক্ষায় সকলেই একই নৌকার যাত্রী!
|
‘সাইজ জিরো’ মোবাইল
সংবাদসংস্থা • ওয়াশিংটন |
হাতের মুঠোয় ‘জিরো ফিগার’। শুধু তাই নয়, চেহারা এতটাই পাতলা ছিপছিপে, যে মানিব্যাগে ক্রেডিট কার্ডের পাশেই জায়গা করে নিতে পারবে নয়া হাতযন্ত্রটি। খুব শিগগির এমনই একটা ‘স্মার্ট’ ফোন উপহার দিতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। সে জন্য তাঁরা বানিয়ে ফেলেছেন ‘আল্ট্রাথিন’ লেন্স। তবে শুধু মোবাইলই নয়, ভবিষ্যতে এমনই ঝকঝকে, স্লিম-ট্রিম চেহারা পেতে চলেছে চশমা থেকে টেবিলে রাখা ল্যাপটপ, কিংবা ক্যামেরা। এই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা যাবে অত্যাধুনিক অণুবীক্ষণযন্ত্রও। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ধরনের ১৫০০টি লেন্স পাশাপাশি সাজিয়ে রাখলে, সেগুলি চওড়ায় চুলের থেকেও পাতলা দেখাবে। ইউরোপে চশমার লেন্সের উদ্ভব ১২০০ শতাব্দীর শেষের দিকে। চশমা কিংবা অণুবীক্ষণযন্ত্র, এর পর থেকেই লেন্সের ব্যবহার চলে আসছে। ‘ন্যানো লেটারস’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানী ফেডেরিকো ক্যাপাসো এবং তাঁর সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, যন্ত্রে যে লেন্সগুলি ব্যবহার হয়, সেগুলি যথেষ্ট পাতলা বা মসৃণ নয়। ফলে ছবি তুলতে সমস্যা হয়। সাবধানতার জন্য একসঙ্গে একাধিক লেন্স ব্যবহার করতে গিয়ে ওজন বেড়ে যায় যন্ত্রের। জায়গাও নেয় অনেক। জটিলতা কাটাতেই নয়া লেন্সের কথা মাথায় আসে বিজ্ঞানীদের। |