শহর কলকাতা ও শহরতলিতে ডেঙ্গি কার্যত মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে আশঙ্কা করছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। এই অবস্থায় সারা রাজ্যে, বিশেষত কলকাতা ও সল্টলেকের ডেঙ্গি-পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে তারা। কমিশন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি-পরিস্থিতি এবং ওই রোগে ক’জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই ব্যাপারে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্বাস্থ্যসচিবকে। রোগের প্রকোপ রুখতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, রিপোর্টে তা-ও উল্লেখ করতে হবে।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, “কয়েক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গি নিয়ে শহর ও শহরতলিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ডেঙ্গি হানা দিয়েছে রাজভবনেও। ওই রোগে মৃতের সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যা বেরোচ্ছে, সরকারি তরফে তা মানা হচ্ছে না।” কমিশন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি কার্যত মহামারির পর্যায়ে পৌঁছনোয় মানুষের ‘বাঁচার অধিকার’ লঙ্ঘিত হচ্ছে। সেই কারণেই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ওই রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন। কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আগামী দিনে ডেঙ্গির প্রকোপ কমাতে ওই সংস্থার উন্নয়নে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিতে চলেছে, স্বাস্থ্যসচিবের রিপোর্টে তারও উল্লেখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার পদস্থ আধিকারিকেরা জানান, নির্মীয়মাণ বাড়িতে জমা জলে ডেঙ্গির মশা জন্মায়। তাই নির্মাণস্থল পরিষ্কার রাখা জরুরি। ঠিকাদারদের সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারদেরও সেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজের ফলে পরিবেশ দূষণ নিয়ে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল ইঞ্জিনিয়ার ও সার্ভেয়ারদের সংগঠন লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়ারস অ্যাসোসিয়েশন বা এলবিএসএ। সেখানেই এই নির্দেশ দেন পুর আধিকারিকেরা। পুরসভার চিফ মেট্রোপলিটন ইঞ্জিনিয়ার নীলাংশুভূষণ বসু (প্ল্যানিং ও ডেভেলপমেন্ট) বলেন, “নির্মাণস্থলে যাতে জল জমে না-থাকে, ইঞ্জিনিয়ারেরা সে-দিকে নজর রাখুন। নির্মাণস্থল অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পড়ে থাকছে। ঠিকাদারদের বলুন, নির্মাণস্থলে শ্রমিকদের জন্য পাকা শৌচাগার তৈরি করতে হবে।” পুরসভার ডিরেক্টর জেনারেল (বিল্ডিং) দেবাশিস কর জানান, শহর আবর্জনামুক্ত রাখতে ভ্যাটের সঙ্গেই ‘কম্প্যাক্টর’ যন্ত্র বসানো হচ্ছে। ভ্যাটে জঞ্জাল ফেললেই ওই যন্ত্র তা চাপ দিয়ে প্রায় মণ্ড পাকিয়ে ফেলবে। ফলে জঞ্জাল আর রাস্তায় পড়ে দূষণ ছড়াতে পারবে না। তিনি বলেন, “বড় বড় আবাসন প্রকল্পেও এই যন্ত্র বসানো যেতে পারে। তাতে আবর্জনা থেকে দূষণের আশঙ্কা কমবে।” |