চাঁদা তুলে ভ্যান চালকের ছেলের হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার করালেন পড়শিরা। দেড় বছরে ছেলের হৃদযন্ত্রে ফুটো থাকার কথা চিকিৎসকের কাছে জানতে পেরে মাথায় বাজ পড়েছিল উপেন রায়ের। চিকিৎসক তাঁকে জানিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচারের জন্য বাইরে নিয়ে যেতে হবে। খরচ হবে ১ লক্ষ টাকার বেশি। দুই ছেলে, স্ত্রী নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটে ভ্যানচালক উপেনবাবুর। তিনি হিসেব করে দেখেন, দরমা বেড়ার বাড়ি সুদ্ধ কলোনির কাঠা খানেক জমি এমনকি রুজির উপায় একমাত্র ভ্যান রিকশাটি বিক্রি করেও চিকিৎসার খরচ উঠবে না। তাই শহরে থেকেই ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকেন। সম্প্রতি ছেলের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। জিভে ঘায়ের সংক্রমণ হয়। শ্বাস নিতে না পেরে ছটফট করতে থাকে। এর পরেই উপেনবাবু সব পড়শিদের কিছু খুলে বলেন। পড়শিরাই চাঁদা তুলে প্রায় ৭০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। অগস্ট মাসে দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকের নির্দেশ মতো দু-তিন মাস অন্তর দুর্গাপুরে যেতে হবে। সোমবার ট্রেনে ওঠার আগে উপেনবাবু বললেন, “এক সময়ে ভেবেছিলাম ছেলেকে আর বাঁচাতে পারব না। অস্ত্রোপচারের পরে ছেলে এখন আবার স্বাভাবিক হয়েছে। পাড়ার লোকেরা না থাকলে এর কিছুই হতো না।” |
জলপাইগুড়ি শহরের পান্ডাপাড়ার শেষ বাতির কলোনির বাসিন্দা উপেনবাবু।এক কাঠারও কিছু কম পরিমাণ জমিতে একটি দরমা বেড়ার ঘরেই দুই ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। ঘরের পাশেই রাখা ভ্যান রিকশা। বছর পাঁচেক আগে ছোট ছেলের জন্ম হয়। বরাবরই দুর্বল ছেলের বয়স দেড় বছর হয়ে গেলেও অন্য শিশুদের মতো দাঁড়াতে পারে না। সারাদিন ঝিমিয়ে থাকতে লক্ষ করে উপেনবাবু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি হৃদযন্ত্রে ফুটো থাকার কথা জানান। বছর চারেক কষ্টেসৃষ্টে চিকিৎসা চালিয়েছেন। গত বছরের শেষে ছেলের শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় উপেনবাবু পাড়ার লোকজনদের সাহায্যে চাঁদা তুলে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে যান। ওই হাসপাতাল জানায়, বিনা খরচে অস্ত্রোপচার করাতে ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে। ছ’মাসের মধ্যে যে ভাবে হোক অস্ত্রোপচার না হলে ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেয় হাসপাতাল। এলাকায় ফিরে পাড়া-পড়শি ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ সব খুলে বলে উপেন। তাদের সহযোগিতাতেই প্রায় ২০ হাজার টাকাতে গত অগস্ট মাসে দুর্গাপুরের হাসপাতালে অস্ত্রোপোচার হয়ে গিয়েছে। উপেনবাবুর ছেলের.বারবার যাতায়াত এবং ওষুধের খরচ রয়েছে। পড়শিরা ঠিক করেছেন তারাই এই খরচ চালাবেন। প্রতিবেশি সুব্রত মজুমদার বলেন, “ভ্যান চালিয়ে দিনে একশো টাকাও রোজগার হয় না উপেনের। ছেলের চিকিৎসার টাকা ও কী ভাবে টাকা জোগাড় করবে? সব কিছু শুনে আমরাই এগোলাম। অল্প অল্প টাকা দিলাম। পরিচিতদের থেকে চাঁদা তুললাম। দেখতে দেখতে টাকা জোগাড় হয়ে গেল।” পঞ্চায়েত প্রধান সীতারাম মাহাতো বলেন, “বাইরে পাঠালেই হবে না। উপেন ভাল ভাবে কথাই বোঝাতে পারে না। বেঙ্গালুরু বা দুর্গাপুর, প্রতিবারই ওঁদের সঙ্গে পাড়া থেকে কাউকে পাঠানোও হয়।” |