রোগীদের তখন ঘুমোনোর সময়। এক নার্স হঠাৎ দেখলেন, মহিলা ওয়ার্ডের শৌচাগার থেকে প্রায় বিবস্ত্র এক রোগিণীকে নিয়ে বেরোচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণির এক পুরুষ কর্মী। তাঁরও পোশাক আলুথালু। অত রাতে ওই কর্মী ওখানে কী করছেন? এ নিয়ে গুঞ্জন, উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত তারই সূত্র ধরে ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করলেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। ইতিমধ্যেই তাঁকে সাসপেন্ড করেছে স্বাস্থ্য দফতরও। ঘটনাস্থল, লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতাল।
ওই কর্মীর সাফাই, ওই রোগিণী পোশাক পরতে চাইছিলেন না। তিনি তাঁকে পোশাক পরাতে নিয়ে যান।
সোমবার রাত ন’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফিমেল ওয়ার্ডে ঢুকেছিলেন প্রেমনাথ প্রসাদ (৪৮) নামে ওই কর্মী। কিছুক্ষণ পরে এক রোগিণীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় তাঁকে শৌচাগার থেকে বেরোতে দেখে আঁতকে ওঠেন ওয়ার্ডের নার্স। তাঁর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় অন্য রোগিণীদেরও। তাঁদের কান্নাকাটিতে পুরুষ ওয়ার্ড থেকেও কর্মীরা ছুটে আসেন। সকলকে দেখে পালাতে চেষ্টা করেছিলেন প্রেমনাথ। কিন্তু ধরা পড়ে যান।
মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে ২৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ওই হাসপাতালে। রাতে পুরুষদের ওয়ার্ডে দু’জন পুরুষ কর্মী পাহারা দেন, মহিলাদেরও ওয়ার্ডেও থাকেন দুই মহিলা কর্মী। তা সত্ত্বেও সকলের চোখের সামনে দিয়ে এক জন পুরুষ কর্মী কী ভাবে এক রোগিণীকে নিয়ে মহিলাদের শৌচাগারে ঢুকলেন, এই ঘটনায় উঠেছে সেই প্রশ্নও।
হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত মৈত্র এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর দাবি, “হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগিণীরা সম্পূর্ণ নিরাপদ।” তা হলে এমন ঘটল কী ভাবে? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দেননি।
প্রেমনাথের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কসবা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “অভিযোগ গুরুতর। মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-অধিকর্তা তাপস নন্দীকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। পুলিশও তদন্ত করছে।”
কিছু দিন আগে হুগলির গুড়াপের এক হোমে এক মানসিক রোগিণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। বাধা দিতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন ওই মহিলা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ঘটনা তত দূর গড়ানোর আগেই তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এ দিন বিকেলে ওই রোগিণীর মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নার্স ছায়া বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, প্রেমনাথকে মহিলাদের শৌচাগার থেকে বেরোতে দেখে তাঁর এবং কুন্তি নামে এক আয়ার সন্দেহ হয়। তিনি প্রেমনাথকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তিনি ওই রোগিণীকে নিয়ে মহিলাদের শৌচাগারে ঢুকেছেন? তখনই প্রেমনাথ রোগিণীকে পোশাক পরানোর সাফাই দেন।
সোমবার ওই সময়ে পুরুষদের ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ছিলেন বিনোদ রাই নামে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “রাতে চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে বাইরে বেরিয়ে সব জানতে পারি।” বিনোদ আরও জানিয়েছেন, অধিকাংশ সময়েই ওয়ার্ড-মাস্টার হাসপাতালে থাকেন না। ওই রাতেও ছিলেন না।
পুলিশ জানায়, প্রেমনাথ আদতে বিহারের আরা জেলার বাসিন্দা। তাঁর পরিবার সেখানে থাকে। বছর তিনেক আগে ওই হাসপাতালে কাজে যোগ দেওয়ার সময় থেকে লাগোয়া একটি বস্তিতে থাকেন প্রেমনাথ। পুলিশ ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই রোগিণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে।” পুলিশ জানায়, সোমবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ ওই ঘটনা ঘটলেও কী কারণে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ কসবা থানায় অভিযোগ জানালেন, তারও তদন্ত হচ্ছে। হাসপাতালের সুপার এবং ওয়ার্ড মাস্টারের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে চাইছে পুলিশ। |