এই প্রথম কোনও একটি ব্যাচের ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে কাজে উৎসাহ দিলেন। নতুন অফিসারদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। উন্নয়নের কাজে মন দিন।” ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে ব্লকে ব্লকে বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকাও যাতে সময়মতো খরচ করা হয়, সেই ব্যাপারে অফিসারদের যত্নবান হতে বলেছেন মমতা।
এত দিন শুধু নতুন আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাতের রীতি ছিল। সেই রেওয়াজ ভেঙেই নতুন ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও)-দের সঙ্গে মঙ্গলবার মহাকরণে বৈঠক করেন মমতা। মহাকরণ সূত্রের খবর, আগেকার বাম সরকারের সমালোচনা করে তিনি বৈঠকে বলেন, এতদিন পঞ্চায়েত পরিচালনার কাজ একটি দলের কুক্ষিগত ছিল। কিন্তু এখন থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা পঞ্চায়েতের কাজ পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। তাঁরা যেন নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করে কাজ করেন।
অফিসারেরা কী ভাবে কাজ করবেন, কী ভাবে অবসর কাটাবেন, সেই ব্যাপারেও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “অনেক নোটবুক কিনে কাজ ভাগ করে লিখে রাখুন। তাতে কোনও কাজ ভুলে যাবেন না। টেনশন-মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। এমন কিছু করবেন না, যাতে রাতের ঘুম নষ্ট হয়। অবসরে গান শুনুন।” বৈঠকেই তাঁকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনান পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় ও সুচেতনা দাস নামে দুই অফিসার।
ডব্লিউবিসিএস (এগ্জিকিউটিভ) অফিসারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ চাকির কথায়, “এর আগে, গত ২১ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী টাউন হলে ৮০০ জন অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এ দিন নতুন অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকের ফলে তাঁরা নিঃসন্দেহে কাজে উৎসাহ পাবেন।” ২০০৯ সালের পাশ করা ৪৯ জন ডব্লিউবিসিএস (এগ্জিকিউটিভ) অফিসারের প্রশিক্ষণ চলছে গত দু’বছর ধরে। কিছু দিনের মধ্যেই বিভিন্ন ব্লকে তাঁদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা। তাঁদের মধ্যে ৪৪ জন এ দিন মহাকরণে আসেন। তিন জন জঙ্গিপুরে নির্বাচনের কাজের দায়িত্ব পাওয়ায় এবং দুই মহিলা অফিসার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় আসতে পারেননি।
মহাকরণ সূত্রের খবর, প্রশাসনের তৃণমূল স্তরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অফিসার হিসেবে বিডিওদের কী কী গুরুদায়িত্ব, তা বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ইন্দিরা আবাস যোজনা ও সাংসদ তহবিলের টাকা যাতে ঠিকঠাক খরচ হয়, অফিসারদেরই সেই দায়িত্ব নিতে বলেন তিনি। মানুষ অভিযোগ জানাতে এলে তাঁরা যাতে বিডিও-দের কাছ থেকে সাহায্য ও ভাল ব্যবহার পান, সেই ব্যাপারে সচেতন হওয়ার অনুরোধও জানান মমতা। বলেন, “কঠোরতা ও কোমলতার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে প্রশাসনিক কাজ চালাতে হবে।”
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, অর্থসচিব এইচ কে দ্বিবেদী, কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাসও এ দিনের বৈঠকে ছিলেন। মহাকরণ সূত্রের খবর, সারের কালোবাজারি রোখা, কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া এবং নতুন কিষান মান্ডি তৈরির ব্যাপারে অফিসারদের উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন কৃষিসচিব। আর অর্থসচিব বলেন, এই অফিসারদের হাত দিয়েই কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। তাই বিশেষ ভাবে সচেতন থাকতে হবে তাঁদের। টাকা যাতে নয়ছয় না-হয়, সেটা দেখতে হবে। আবার টাকা থাকা সত্ত্বেও কোনও কাজ যাতে আটকে না-যায়, নজর রাখতে হবে সে-দিকেও।
মুখ্যসচিব সমরবাবু নতুন অফিসারদের বলেন, “সব কিছু নির্দেশ দিয়ে হয় না। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে হয়।” |