মিটতে চলেছে ঠাকুরনগরে কলেজ তৈরির জট। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে প্রস্তাবিত সহশিক্ষামূলক সরকারি কলেজের শিলান্যাস করতে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মঙ্গলবার আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) মিহির ভট্টাচার্য-সহ জেলা পুলিশের কর্তারা ঠাকুরনগরে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল ঘুরে দেখেন।
গত বিধানসভা ভোটের আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গাইঘাটার চাঁদতলার কাছে একটি সরকারি কৃষি খামারে মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে একটি কলেজের শিলান্যাস করেছিলেন। তারপর নির্বাচনে বামেদের পরাজয় ঘটে। ঠাকুরবাড়ির ছোটছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর এখন রাজ্যের মন্ত্রী। মূলত তাঁরই উদ্যোগে বর্তমান সরকার ওই কলেজটি গাইঘাটা ঠাকুরনগরে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এরপর জমি-জটে আটকে যায় প্রকল্পটি। অবশেষে মিটেছে সেই সমস্যা।
উচ্চশিক্ষা দফতরের নিয়মানুযায়ী, একটি কলেজ তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় ন্যূনতম ১৫ বিঘা বা ৫ একর জমি। ঠাকুরনগরে চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে যে জায়গাটি এই কলেজ তৈরির জন্য বাছা হয়েছে, তার পরিমাণ ৬ একর ৪৬ শতক। জমিটি ভূমি রাজস্ব দফতরের। |
কিন্তু ওই জমির মধ্যে একটি পুকুর থাকার ফলে কলেজের জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। এর সঙ্গেই ছিল পুকুর ভরাটের অভিযোগ। সমস্যা মেটানোর জন্য বৈঠকে বসেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস-সহ তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। সাধারণ মানুষের কাছে ‘সহযোগিতা’ চেয়ে আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ৬ জন বাসিন্দা মোট ১ একর ৭১ শতক জমি দান করতে সম্মত হয়েছেন। ওই জমি উচ্চশিক্ষা দফতরকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দফতরে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়-সহ জেলার এসডিও এবং বিডিওদের নিয়ে বৈঠকে কলেজ-সংক্রান্ত বিষয়টি দেখবার জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়। জেলাশাসকের নেতৃত্বে ওই কমিটি প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করে জানায় ওই জমিতে কলেজ তৈরি সম্ভব। এরপরেই কলেজটি তৈরির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “মতুয়া মহাসঙ্ঘের বড়মা বীণাপানি দেবীর ইচ্ছাতেই কলেজটি ওই জায়গাতেই করা হচ্ছে। বাম আমলে যেখানে কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেখানে কৃষি-সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ হবে। ওই প্রকল্প নিয়ে আগের সরকারের সদিচ্ছা ছিল না।” এলাকার বিধায়ক তথা ঠাকুরবাড়ির ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ বলেন, “আমার বাবা প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের স্বপ্ন ছিল এলাকায় একটি কলেজ তৈরি করার। এত দিন পরে সেই স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। এটা ঠাকুরনগরের মানুষের কাছে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা।” বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিত বিশ্বাসের কথায়, “জমিদাতাদের আমরা আর্থিক ভাবে কিছুটা সাহায্য করেছি। এলাকার শিক্ষাবিস্তারে তাঁদের অবদান মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে।” সূত্রের খবর, কলেজটির নাম প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নামে করার সুপারিশ করা হয়েছে। জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “২১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী আসছেন এই কলেজটির শিলান্যাস করতে।” |