স্কুলে যাওয়ার পথে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে অভব্যতা করছিল এক দুষ্কৃতী। স্থানীয় এক লরিচালক ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাঁকে সপাটে চড় কষিয়ে দেয় ওই দুষ্কৃতী। আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি চালানোর হুমকি দেয়। এরপরে সকলের সামনে দিয়েই মোটরবাইকে চড়ে পালায় ওই যুবক। গোটা ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় মানুষ পথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুঁটে মণ্ডল ওরফে আব্বাস নামে দেগঙ্গার ইয়াসপুরের বাসিন্দা ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। তার খোঁজ চলছে বলে জানান আইসি শুভাশিস বণিক।
|
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের বেড়াচাঁপা-বাদুড়িয়া রোডে নগরকচুয়া হাটখোলা বাজারের কাছে। সেখান থেকে কয়েকশো মিটার দূরে বুনারআটি ইউসুফ ইসমাইল মেমোরিয়াল হাইস্কুলে পড়ে মেয়েটি। পুলিশকে ওই কিশোরী জানিয়েছে, সকালে স্কুলে যাচ্ছিল সে। হঠাৎই এক যুবক তার পথ আটকায়। অশালীন মন্তব্য করে। প্রতিবাদ করায় হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। ওড়না কেড়ে নেয়। মেয়েটি বলে, “এ সব দেখে এক ড্রাইভারকাকু এগিয়ে এসেছিলেন। ছেলেটা ওঁকেও চড় মারে। তত ক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছ। আমি কাঁদতে কাঁদতে চলে যাই।”
যিনি লরি থামিয়ে নেমে এসে প্রতিবাদ করেছিলেন, সেই মুনাজাদ মণ্ডলের কথায়, “ছেলেটাকে আমি বলেছিলাম, কেন বিরক্ত করছ ওকে? বলতেই ছেলেটা আমাকে চড় মারল। আমি তো হতভম্ব।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আব্বাস এলাকার ছোটখাট মস্তান।
|
লরির খালাসিরও কাজ করে। এ দিন ঘটনার সময়ে তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল। তাতে আগ্নেয়াস্ত্র আছে বলে আশপাশের লোকজনকে হুমকি দেয় আব্বাস। চোখ রাঙিয়ে বলে, কেউ এগিয়ে এলেই গুলি চালিয়ে দেবে। ইতিমধ্যে মোটর বাইকে চেপে হাজির হয় তার এক সাগরেদ। ওই বাইকে চেপেই এলাকা ছাড়ে আব্বাস।
মেয়েটি স্কুলে পৌঁছে কাউকে কিছু জানায়নি। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে স্কুলে হাজির হন গ্রামবাসীরা। প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ মণ্ডলের কাছে ঘটনার ‘প্রতিকার’ চান। প্রধান শিক্ষক জানান, ঘটনার বিন্দুবিসর্গ কিছু জানেন না তিনি। এমনকী দশম শ্রেণির কোন ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটেছে, তারও খোঁজ নেই তাঁর কাছে। গ্রামবাসী এবং অভিভাবকদের একাংশ তাতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ ওঠে। গোলমাল শুরু হওয়ায় স্কুল ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে বেলা ১১টা নাগাদ কিছু লোক স্কুলের সামনের রাস্তায় অবরোধ শুরু করে।
পুলিশ আসে। পুলিশের কাছে আব্বাসের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষক। বেলা ২টো নাগাদ অবরোধ ওঠে। শম্ভুনাথবাবু বলেন, “গ্রামবাসী ও অভিভাবকেরা অযথাই আমার উপরে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। আমি ঘটনাটি তখনও জানতাম না। তা ছাড়া, আমার এ ব্যাপারে কিছু করার আছে বলেও প্রাথমিক ভাবে মনে হয়নি। স্কুল চত্বরে ঘটলে অবশ্যই আমার দায়িত্ব ছিল। তবে পরে আমিই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি।”
খালেক মণ্ডল, সালাউদ্দিন মণ্ডলদের বক্তব্য, “দিনের পর দিন ওই স্কুলের সামনে ইভটিজাররা জমায়েত হচ্ছে। কটূক্তি করা হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।” স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির ছাত্র কামাল মণ্ডল, মাসুম বিল্লারাও বলে, “স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু যুবক মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদেরও হুমকি দেয়।” |