রাত ন’টা। আদুল গা। পরনে মলিন পাজামা। খালি পায়ে রীতিমত হাঁফাতে হাঁফাতে উদভ্রান্তের মতো যিনি থানায় ঢুকলেন, তাঁর বয়স নয় নয় করে বাহাত্তর হবে। সটান ডিউটি অফিসারের টেবিলে গিয়ে ওই প্রৌঢ়ের অনুনয়, “একবার আমার বাড়ি যেতে পারবেন স্যার? ছেলে মদ খেয়ে বাড়ি ঢুকে রীতিমত তান্ডব চালাচ্ছে। আমাকে বেধড়ক মেরেছে। ওর মাকেও এতক্ষণে মেরে ফেলল কি না কে জানে!’’
নবদ্বীপ তমালতলা লেনের বাসিন্দা কুমারেশ দাসের এমন কাতর অনুনয় ফেলতে পারেননি ওই ডিউটি অফিসার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ গিয়ে হাজির হয় ওই প্রৌঢ়ের বাড়িতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের অনুরোধেই সে রাতে ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। বুঝিয়ে সুঝিয়ে মা বাবার কাছে ক্ষমা চাইয়ে সে রাতে ফিরে এসেছিল পুলিশ। রবিবারের রাতের ওই ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ‘গুণধর’ ছেলে। সোমবার বিশ্বকর্মা পুজোর দুপুরে আকন্ঠ মদ খেয়ে আরও জনা কয়েক মদ্যপ সঙ্গী নিয়ে বাড়ি ফিরে ফের স্বমূর্তি ধারণ করে ছেলে রণজিত দাস। নবদ্বীপের এক সময়ের সম্পন্ন ব্যবসায়ী কুমারেশবাবু বলেন, ‘‘রবিবার রাতে পুলিশ ডাকার অপরাধে মঙ্গলবার দুপুরে বন্ধুবান্ধব ডেকে এনে আমাকে প্রায় মেরেই ফেলছিল। স্ত্রী কোনও মতে ছেলের হাত থেকে বাঁচিয়ে আমাকে বাইরে বের করে দেয়। এই রাগে বাড়ির টিভি থেকে শুরু করে বিছানাপত্র, আলমারি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে রণজিত। যাওয়ার আগে শাসিয়ে গিয়েছে, ‘পুলিশের বাবা এলেও তোকে বাঁচাতে পারবে না।’’’ বছর ছাব্বিশের রণজিত কী করে, কোথায় থাকে এই বিষয়ে কোনও পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি তার বাবা মা। কুমারেশবাবু জানান, ‘‘শুনেছি ও কলকাতায় কিছু একটা করে। কিন্তু কী করে জানি না। মাঝে মধ্যে বাড়ি এসে প্রচুর টাকা পয়সা চায়। আর সে সব না দিলেই তান্ডব শুরু করে। অনেক সহ্য করেছি আর নয়। একপ্রকার নিরুপায় হয়েই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।” নবদ্বীপের আইসি শঙ্কর কুমার রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলের বিরুদ্ধে একটা মামলা রুজু করা হয়েছে। ছেলেকে আমরা খুঁজছি।’’ |