|
|
|
|
বেশি দামে সার বিক্রি, ‘শো-কজ’ বিক্রেতাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের পরেও আবার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বিশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে জেলায়। ‘অবৈধ’ এই কারবার রুখতে ইতিমধ্যেই একাধিক সার বিক্রেতাকে শো-কজ ও সাসপেন্ড করেছে প্রশাসন। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বস্তার গায়ে লেখা কোম্পানি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে যাতে কেউ সার বিক্রি করতে না পারেন এবং চাষিরাও যাতে তা না কেনেন তার জন্য জোরকদমে নজরদারি চালাচ্ছে কৃষি দফতর। জেলা উপ কৃষি-অধিকর্তা (প্রশাসন) তপন ভুঁইয়া বলেন, “এ বার প্রথম থেকেই বেশি দামে যাতে সার বিক্রি না হয় তার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছি। সাসপেন্ড, সতর্ক থেকে শো-কজ সবই করা হয়েছে। প্রতি মহকুমায় টাস্ক ফোসর্ গড়া হয়েছে যাঁরা কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন। এছাড়াও যাতে কোনও ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর যাতে রেক থেকে মাল নামিয়ে ভিন রাজ্যে পাচার না করতে পারেন তার জন্যও গড়া হয়েছে কমিটি। জানানো হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকেও।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এখন জমিতে আউস এবং আমন ধানের চাষ হচ্ছে। ক’দিন পরেই শুরু হবে রবি চাষ। কিছু এলাকায় সব্জি চাষও হচ্ছে। এই সব ধরনের চাষেই প্রয়োজন বিভিন্ন প্রকার সারের, যেমন, পটাশ, ফসপেট, ডিএপি, ইউরিয়া। কৃষি দফতর জানিয়েছে, আগে সরকারই সারের মূল্য ঠিক করত। কিন্তু সম্প্রতি সারের দাম ‘ডি-কন্ট্রোল’ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিরাই দাম ঠিক করে। তবে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ যদি বেশি দামে বিক্রি করেন, তার জন্য কৃষি দফতর সমস্ত রকম আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। ২০১১ সাল থেকেই এই চড়া দামে সার বিক্রি বন্ধ করতে নানা পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। সরকারি ভাবে লিফলেট বিলি করে চাষিদের সচেতন করাও শুরু হয়। এ বছর জেলায় চাহিদার তুলনায় পযার্প্ত সারও রয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু কিছু চাষি বেশি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ। তপনবাবু বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত জেলায় ২১৪ জন সার বিক্রেতাকে শো-কজ করেছি। চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের ২ জন ডিলারকে সাসপেন্ড করেছি। আর জেলায় মোট ৫৫ জনকে সতর্ক করেছি। অভিযান এখনও চলছে। পাশাপাশি যাতে চাষিরাও সতর্ক হল তার জন্য প্রচারও চালানো হচ্ছে।”
কিন্তু কৃষি দফতরের এত সতর্কতা সত্ত্বেও কেন বেশি দামে চাষিদের সার কিনতে হচ্ছে। দফতর সূত্রে খবর, সার বিক্রেতাদের বেশি দাম নেওয়ার প্রবণতা এবং কিছু কিছু চাষির সচেতনতার অভাবই এর কারণ। তবে নিয়ম মেনে খুচরো সার বা বস্তা রসিদ কেটেই বিক্রির কথা বলা হচ্ছে। চন্দ্রকোনার শ্রীনঘরের চাষি পুলক ঘোষ, অশোক পাল, কেশপুরের বাবলু খান, দাসপুরের নিমাই কোলে, ঘাটালের জয়ন্ত মণ্ডল, শ্রীমন্ত দাসেরা বলেন, “আমরা এত কিছু বুঝিনি। তাছাড়া বিক্রেতারা কোনও রসিদও দেননি। ফলে বস্তা পিছু ৫০-৬০ টাকা দিয়ে সার কিনেছি।” কৃষি দফতর জানিয়েছে, এখনও ডেবরা, শালবনি, দাসপুর, ঝাড়গ্রামের বেশ কিছু এলাকায় এ ধরনের অভিযোগ আসছে।
সংগঠন সূত্রে খবর, দুই জেলায় ৫২ জন ডিস্ট্রিবিউটর এবং ৩ হাজার ৬০০ জন খুচরো বিক্রেতা রয়েছেন। তার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৩২ জন ডিস্ট্রিবিউটর এবং ২৩০০ জন খুচরো বিক্রেতা রয়েছেন। দুই জেলার কৃষি সহায়ক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নন্দলাল ঘোষ বলেন, “আমরাও সতর্ক রয়েছি। প্রতিটি সদস্যকে এমআরপি মূল্যে সার বিক্রি করার জন্য নির্দেশও দিয়েছি। তাতে কাজও হচ্ছে। তবে গ্রামগঞ্জের কিছু কিছু বিক্রেতারা বেশি দাম যে নিচ্ছে-তা ঠিক। আমরা তা দ্রুত বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং সমস্ত সদস্যদের নিয়ে বৈঠকও করব, যাতে সরকারি নিয়ম মেনে রসিদ কেটে সার বিক্রি করা হয়।” |
|
|
|
|
|