হ্যাটট্রিক করলে টোলগেকে কোলে তুলে নাচব

প্রশ্ন: গত বছর প্রচুর গোল করা সত্ত্বেও ব্যর্থ মোহনবাগান। দু’বছর ট্রফি নেই। অধিনায়ক হিসাবে শিলিগুড়িতে প্রথম এলিট টুর্নামেন্ট খেলতে এলেন। চাকাটা ঘুরবে?
ওডাফা: মোহনবাগানের মতো ঐতিহ্যশালী ক্লাবের ক্যাপ্টেন হতে পেরে আমি আপ্লুত। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি অধিনায়ক হতে চাইনি। দেবাশিস (দত্ত) যখন বলল ব্যারেটোর জায়গাটা আমাকে নিতে হবে তখন প্রথমে দ্বিধায় ছিলাম। আসলে অধিনায়ক হলে আমার ঘুম চলে যায়। চাপ বেড়ে যায়। বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়ে। চার্চিলেও তাই হয়েছিল। কিন্তু আমি আই লিগ জিতেছিলাম। এ বার ট্রফি পাওয়ার চিন্তায় আমার ঘুম চলে গেছে। দেখা যাক ঈশ্বর কী চান?

প্রশ্ন: কিন্তু আপনার ঈশ্বর যদি আপনাকে প্রশ্ন করেন, ফেড কাপ না আই লিগ কোনটা চান? তা হলে?
ওডাফা: দু’টোই দেশের সেরা টুর্নামেন্ট। দু’টোই জিততে চাই। কিন্তু একটা বাছতে বললে বলব ফেড কাপ। এদেশে খেলতে এসে সব পেয়েছি, এটা কখনও ছুঁয়ে দেখিনি।

প্রশ্ন: গত বছর দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন কিন্তু ট্রফি জিততে পারলেন না? কেন?
ওডাফা: গত বছরও খুব ভাল টিম ছিল। আমরাই নিজেদের তৈরি করতে পারিনি। তা ছাড়া আমি, ব্যারেটো আর সুনীল ছেত্রীর মধ্যে দু’জনকে বাছতে গিয়েও সমস্যা হয়েছিল কোচেদের।

প্রশ্ন: এ বার তা হলে আপনি ট্রফি জেতার ব্যাপারে এত আশাবাদী?
ওডাফা: এ বার আমাদের প্রস্তুতি খুব ভাল হয়েছে। টোলগে, ইচে, স্ট্যানলি আসায় টিমের শক্তি অনেক বেড়েছে। লিখে নিন, আমরা যদি একটা পরিবারের মতো নিজেরা খেলি তা হলে ভারতের কোনও টিম আমাদের থামাতে পারবে না।

প্রশ্ন: স্ট্রাইকাররা খুব স্বার্থপর হয়। আপনি তিন বার আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। টোলগেও প্রচুর গোল করেন। টোলগে যদি কোনও ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে তা হলে কেমন লাগবে আপনার?
ওডাফা: বিশ্বের সব স্ট্রাইকারই স্বার্থপর হয় মানছি। কিন্তু সেই ধারণাটা আমরা দু’জনে এ বার বদলে দেব দেখবেন। টোলগে যদি হ্যাটট্রিক করে তা হলে আমি সবার আগে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে নাচব। আর ও যদি সর্বোচ্চ গোলদাতা হয় তা হলে একটা পার্টি দেব। আরে আমি তো টিমের অধিনায়ক। টোলগে গোল করলে তো আমার টিমই জিতবে। আমি গোল করলাম কি করলাম না, ডোন্ট কেয়ার। ট্রফি জিতলেই আমি খুশি। দেবাশিসরা খুব চেষ্টা করছে। ট্রফি না জিতলে কে আমি, কে টোলগে!
মোহনবাগানের দুই অস্ত্র: প্র্যাক্টিসে ওডাফা-টোলগে।
মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

প্রশ্ন: টোলগে আর আপনি ঠিক করেছেন স্ট্রাইকারের গা থেকে ‘স্বার্থপর’ শব্দটা মুছে দেবেন। কেমন যেন লাগছে। দেশের দুই সেরা বিদেশি স্ট্রাইকার ‘বন্ধু’!

ওডাফা: সে লাগতেই পারে। পুলিশ ম্যাচটা দেখেছেন। টোলগে কতগুলো গোলের পাস আমাকে বাড়িয়েছে। আমি কতগুলো ওকে বাড়িয়েছি। দু’জনেই গোল করেছি।

প্রশ্ন: তা হলে ভারতে দীর্ঘ ফুটবল জীবনে টোলগে-আপনি সেরা জুটি?
ওডাফা: না সেটা এখনও বলার সময় আসেনি। সবে তো শুরু করলাম। সিজনটা শেষ হোক। বিদেশি স্ট্রাইকারদের মধ্যে জর্জ একে, বোয়ে, ফেলিক্সের সঙ্গে এর আগে খেলেছি। এখনও পর্যন্ত ফেলিক্সের সঙ্গে খেলে সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছি। তবে টোলগের সঙ্গে মনে হচ্ছে জমবে।

প্রশ্ন: টোলগের সঙ্গে না হয় নিজের স্বার্থেই বন্ধুত্ব করেছেন। কিন্তু গোয়ার মাঠের সেই পরিচিত ‘শত্রু’ র্যান্টি মার্টিন্স এসে গিয়েছেন কলকাতায়। তা হলে এখানেও ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়ে গেল আপনার ?
ওডাফা: ডেম্পোতে র‌্যান্টিকে পিছন থেকে যারা পাস বাড়াত তারা সবাই সুপার্ব ছিল। ও শুধু পিছন থেকে ভাল বল পেত এবং সেটা জালে রাখত। দেখা যাক এখানে ও কী করে? অপেক্ষায় আছি।

প্রশ্ন: আপনি, টোলগে না র্যান্টি। কে হবেন এ বারের সর্বোচ্চ গোলদাতা?
ওডাফা: সেটা ঈশ্বর জানেন। উনিই সব ঠিক করেন। উনি না চাইলে শত চেষ্টা করেও সফল হওয়া সম্ভব নয়। আমি সময় পেলেই বাইবেল পড়ি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। কেন জানি না এ বার মনে হচ্ছে ঈশ্বর আমার কথা শুনবেন।

প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচেই আপনার মহা নায়ক হয়ে ওঠার টিম চার্চিল। সেখানে আবার কোচ সুভাষ ভৌমিক...?
ওডাফা: আরে এত দিন খেলছি। সবাই আমাকে চেনে। আমি আটকে গেলে টোলগে তো আছে। ও গোল করবে। তবে চার্চিলের বিরুদ্ধে ফেড কাপের প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার চোট আছে। পুলিশ ম্যাচের পর অনুশীলন করতে পারিনি। আজ করলাম। এই ম্যাচটা জিততে পারলে চাপ অনেক কমে যাবে।

প্রশ্ন: ওডাফা মানেই এত দিন ছিল শুধু ঝামেলা। চার্চিলে আপনি না কি নিয়মিত কোচ তাড়াতেন? কিন্তু দেড় বছর হয়ে গেল মোহনবাগানে। কোনও সমস্যা নেই। কী ভাবে বদলে ফেললেন নিজেকে? রসায়নটা।
ওডাফা: (উত্তেজিত) ওসব রটনা। আমি চার্চিলে ছয় বছর খেলেছি। কোনও কোচ তাড়াইনি। সব বাজে কথা। চার্চিলের কর্তারা যে-হেতু আমাকে ঘরের ছেলে বলত সেজন্যই ওরা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আমার নাম জড়াত। এই তো মোহনবাগানে স্টিভ-সুব্রত গতবার ছিল। এখন সন্তোষ কোচ হয়েছে। একজনও বলুক তাঁর সঙ্গে আমার কোনও দিন সামান্য তম গণ্ডগোল হয়েছে। তর্ক হয়েছে। এ জন্যই আমি ইন্টারভিউ দিতে চাই না।

প্রশ্ন: শুনেছি আপনার স্ত্রী এঞ্জেলো ওকোলি না কি আপনার ফিলোজফার-গাইড এবং মেন্টর?
ওডাফা: হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আসলে ও তো আমাদের দেশ নাইজিরিয়ার অনূর্ধ্ব ১৭ মেয়েদের জাতীয় দলের স্ট্রাইকার ছিল। আমিও স্ট্রাইকার। আমার যন্ত্রণা, দুঃখ, লড়াইটা খুব ভাল বোঝে। (হেসে) ও স্ট্রাইকার হলেও কিন্তু আমার বন্ধু। ও সঙ্গে থাকলে আমি ভাল খেলি।

প্রশ্ন: তা হলে এ বার শিলিগুড়িতে নিয়ে এলেন না কেন?
ওডাফা: আমার ছেলেদের পরীক্ষা চলছে। না হলে অবশ্যই আসত।

প্রশ্ন: আচ্ছা এই যে টোলগেকে নিয়ে তিন মাস ধরে দড়ি টানাটানি চলল, এটা কী ভাবে দেখছেন?
ওডাফা: খুব খারাপ ব্যাপার। বিদেশিদের কাছে খারাপ বিজ্ঞাপন। কলকাতাতেই এরকম হয়। আমি তো চার্চিলের ঘরের ছেলে ছিলাম। আমি যখন ওদের বললাম টিম ছাড়ছি ওরা বিশ্বাসই করছিল না। তা সত্ত্বেও কিন্তু আমাকে আটকায়নি। ফুটবলারদের ইচ্ছাকে সব সময়ই মর্যাদা দেওয়া উচিত।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.