|
|
|
|
প্রবন্ধ ১... |
সংস্কার দরকার, গরিবের জন্যই দরকার |
সংস্কার হোক। সরকারের কাজ সংস্কারের সুফল গরিবের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
বললেন ভারতের সদ্য-প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, বিশ্বব্যাঙ্কের মুখ্য
অর্থনীতিবিদ
কৌশিক বসু |
আর্থিক সংস্কার ঠিক কতটা প্রয়োজন?
নীতিগত ভাবে আমি মনে করি, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে সব রকম আর্থিক সংস্কার সাধারণ মানুষের জন্য, এমনকী গরিবতম মানুষের জন্যও প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সংস্কার হোক। তার পরে সরকারের ভূমিকা হোক সংস্কারের সুবিধাগুলি গরিবের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। আমি সংস্কারে খুবই বিশ্বাস করি ঠিকই, কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না যে সংস্কার করে ছেড়ে দিলে গরিবদের আপনিই লাভ হবে। কিন্তু প্রথম থেকেই যদি সংস্কার না হতে দিই, সেটা একটা ভুল চিন্তাধারা। পশ্চিমবঙ্গেও দেখেছি তিরিশ বছর ধরে, বাজারের গতিপ্রকৃতিটাকেই থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাজারটাকে থামিয়ে দিলে তো গোড়ার পদক্ষেপটাই করা হচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার কি শেষ বেলায় বাজারের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল?
মনে হয়, শেষ বেলায় বুঝতে পেরেছিল। হয়তো পালাবদলের পাঁচ-ছ’বছর আগে। তার কারণ, ওরা চিনকে দেখে। চিন ১৯৭৮ পর্যন্ত, মানে মাওয়ের জমানায়, বাজারে বিশ্বাস করত না। জোরজবরদস্তি করে থামাতে গিয়েছে। তার উল্টো ফল হয়েছে। ১৯৫৮’য় গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড হচ্ছে, সাধারণ চাষিদের উৎপাদন বাড়ানোর উৎসাহ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে জোটবদ্ধ চাষ করা হল। মাও জে দংয়ের ধারণা ছিল, এক সঙ্গে সবাই কাজ করলে বিরাট উৎপাদন হবে। উল্টো হল। উৎপাদন ভেঙে পড়ল ১৯৫৮ থেকে ’৬১, দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তার পরে ষাটের দশকের শেষে সাংস্কৃতিক বিপ্লব হল। আবার উল্টো ধাক্কা এল। এইগুলো আমরা দেখেছি। চিন নিজেও বুঝল। দেং জিয়াও পিং এলেন সত্তরের দশকের শেষে। নীতি বদলে গেল। বাজারকে নিজের নিয়মে চলতে দিতে হবে, এটা সি পি এমও শেষের পাঁচ বছরে বুঝতে পেরেছিল। ওদের একটা সমস্যা হল, ক্যাডারদের কুড়ি-পঁচিশ বছর ধরে যা শেখানো হয়েছে, তা বদলানো মুশকিল। তবে শীর্ষনেতৃত্ব বুঝে গিয়েছিল। কিন্তু তত দিনে অর্থনীতির অধঃপতন শুরু হয়ে গিয়েছে। |
|
আত্মঘাতী? আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতায় মিছিলে হাঁটছেন
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এ এফ পি |
এর ফলে কি পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক উন্নয়নেও পিছিয়ে পড়েছে?
সি পি এম সরকার বলত, আমরা বৃদ্ধিতে বিশ্বাস করি না, মানুষের উন্নয়নে, সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বাস করি। সি পি এম হয়তো সত্যিই বিশ্বাস করে। কিন্তু উন্নয়নের যে সব মৌলিক দিকগুলিকে, সামাজিক উন্নয়নের যে সব সূচককে বামেরা গুরুত্ব দেয়, সেখানেই অধঃপতন হয়েছে। অর্থাৎ নীতিগত ভাবে কোথাও একটা ঘাটতি হয়েছে। ১৯৫১ সালের জনগণনায় সাক্ষরতার হারে পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে এগিয়ে থাকা পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে। এখন নেমে গিয়ে জাতীয় গড়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। বামফ্রন্টের সদিচ্ছা ছিল। ওদের মধ্যে দুর্নীতি ছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু খুবই কম। স্রেফ ভাবনার ভুলে পারল না। বাজারটাকে তুমি যদি আদর্শগত বিষয় হিসেবে দেখো, তা হলে মুশকিল। বাজার হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণের মতো, থাকবেই, কিছু করার নেই। সেটা আদর্শগত ভাবে নাকচ করতে গেলে মারাত্মক ভুল হবে। সেটাই পশ্চিমবঙ্গের বিরাট ক্ষতি হল। ওরা ভুল বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু সংশোধন করার আগেই নির্বাচনে হেরে গেল।
পশ্চিমবঙ্গ বরাবর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার দিকে অভিযোগ তুলেছে। রাজ্যের পিছিয়ে পড়ার জন্য এটা কতটা দায়ী?
আমার মনে হয় না। যদি এই ধরনের বঞ্চনা থেকেও থাকে, তা আংশিক ব্যাপার। তার জন্যই রাজ্য পিছিয়ে পড়ল, তা মানি না। আবার বলছি, আসলে চিন্তাধারায় দোষ। তুমি চাইছ, শিল্পসংস্থাকে তোমার রাজ্যে এত টাকা মাইনে দিতে হবে। সেই চাওয়াটা খুবই ভাল, কিন্তু যদি এত বেশি চাও যে শিল্প আসবেই না, তা হলে সেটা খারাপ নীতি। আজকের দিনে পুঁজি এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে তো বটেই, একটা দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যায়। ভারতে বসে ভাবতে হয়, আমরা যদি পুঁজির উপর বেশি কর বসাতে চাই, সেটা চিনে চলে যাবে, দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যাবে, ফিলিপিন্সে চলে যাবে। কাজেই বুদ্ধি খরচ করতে হবে, কতটা দাবি করা উচিত। পশ্চিমবঙ্গ তিরিশ বছর ধরে ভুল করেছে। আমরা এত বেশি দাবি করছিলাম যে রাজ্য থেকে ক্রমশ শিল্প বিদায় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিকে আসতে কেউ বাধ্য করতে পারে না। এটা তো বেসরকারি বিনিয়োগ। এটা ঠিকই যে বড় শিল্প সংস্থার শ্রমিকদের বেশি বেতন দেওয়া উচিত। কিন্তু তাদের অন্যত্র চলে যাওয়ারও পথ খোলা রয়েছে। এটা মনে রেখে দাবি করতে হবে। নইলে বোকামি হবে। তারই ফলাফল তিরিশ বছর ধরে আমরা ভোগ করেছি। আশা করি, এখন পরিস্থিতি বদলাবে।
এখন নতুন সরকারও কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছে। আর্থিক দায়বদ্ধতা, করবণ্টন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই সমস্যাটা গোটা ভারতেই রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, পঞ্জাবের আর্থিক অবস্থা খারাপ। অর্থ কমিশন কিছু নিয়ম করে দিয়েছে। এই নিয়মের বাইরে গিয়ে কতটা আর্থিক সাহায্য করা যাবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পশ্চিমবঙ্গের জন্য যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তিন দশক পরে পালাবদল হয়েছে। অতএব বিশেষ সাহায্য দেওয়া হোক। কিন্তু অন্য রাজ্যগুলিও সেই দাবি করতে পারে। সবাইকে সাহায্য করতে আরম্ভ করলে, কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতি সামাল দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতেও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ আসবে বলে মনে হয়। রাজ্যগুলিকে কতটা স্বাধীনতা দেওয়া হবে, কতটা আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা নিয়ে আরও বিতর্ক হবে। আরও নতুন চিন্তাধারা আসা প্রয়োজন। দেখা যাক, নতুন অর্থ কমিশন তো বসছে। তার থেকে কিছু নতুন ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ টানার জন্য জন্য কী করা প্রয়োজন?
প্রথমত, মনস্থির করতে হবে যে বিদেশি বিনিয়োগ চাই কি না। বুঝতে হবে যে বিদেশি পুঁজি দানখয়রাত করতে আসছে না, লাভের জন্যই আসছে। তাই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সামলে রাখতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে অনেক দিন ধরে দ্বিধা ছিল, বিদেশি পুঁজি চাই কি চাই না। এখানেও বোকামি হয়েছে। ভারত পুঁজিবাদী অর্থনীতি। পুঁজিবাদকে ভাল লাগুক বা না লাগুক, তার বিকল্প নেই। বাম সরকার চিনকে দেখে জমি অধিগ্রহণ করতে গেল। চিনকে দেখে ঠিক করল, এই ভাবে জমি অধিগ্রহণ করব। কিন্তু এ দেশে তো চিনের মতো ব্যবস্থা নেই। তাই ভারতীয় ব্যবস্থার মধ্যে চিনের নীতি প্রয়োগ করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেল। সফল হল না। এর মধ্যে আদর্শের কোনও ব্যাপার নেই, সাধারণ বুদ্ধির ব্যাপার।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও তো নিম্ন গতি এসেছে, রাজ্য অনেক পিছিয়ে পড়েছে?
এটা খুব খারাপ লাগে। প্রচণ্ড শিক্ষিত রাজ্য, বেস্ট মাইন্ডস উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। গোড়ার দিকে যখন দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স-এ ছিলাম, প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম দশ জনের মধ্যে সাত জন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসত। আশির দশকে স্কুল ও স্নাতক স্তরে পড়াশোনা খুব ভাল হচ্ছিল। তার পর ঝপঝপ করে নেমে গেল। অনেকে ডিজাস্টার বলেন, আমি এতটা খারাপ বলি না। কিন্তু মান নেমেছে, সেটা তো অনস্বীকার্য। পশ্চিমবঙ্গ সকলের চেয়ে এগিয়ে থাকত। আমেরিকায় ভারতের আর কোনও কলেজের নাম না জানলেও, কর্নেল-এ বসে, হার্ভার্ড-এ বসে প্রেসিডেন্সি কলেজের নাম জানে সবাই। এটা বিরাট সাফল্য ছিল।
ভুল হল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমান হবে, এটা ভাবতে গিয়ে। এলিট প্রতিষ্ঠান থাকতেই হবে। প্রেসিডেন্সির শিক্ষকরা গ্রামে গিয়ে পড়াবেন... তত্ত্বে শুনতে খুব ভাল লাগে যে সবাই সমান শিক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু ভারতে ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয়, সবাইকে সমান মানে রাখতে গেলে সবগুলোই মাঝারি মানের হবে। আর্থিক ভাবেও সম্ভব নয়। আমেরিকাও পারবে না। আমেরিকা নীতি নিল ৫০টা ভাল প্রতিষ্ঠান হতে দাও, বাকিগুলো টিচিং শপ হোক। পশ্চিমবঙ্গে এলিট প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দেওয়া হল। এটা বিরাট ক্ষতি করেছে।
সমাধান কোথায়?
নতুন করে তো চেষ্টা হচ্ছে। প্রেসিডেন্সিতে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। গোটা দেশে বেশ কিছু এলিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতেই হবে। পরিষ্কার করে বলি, আমি আর্থিক এলিটিজম-এর পক্ষপাতী নই। আমি এখানে ইন্টেলেকচুয়াল, সায়েন্টিফিক এলিটিজম-এর কথা বলছি। উচ্চশিক্ষাকে বাঁচাতে গেলে সেটা ছাড়া গতি নেই। আর্থিক নীতিতে ভুল হলে দু’তিন বছরে সামনে নেওয়া সম্ভব। শিক্ষা নীতিতে ভুল হলে ১০-১৫ বছরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
|
পড়তে চাই, লিখতে চাই, ছবি আঁকতে চাই |
সৃষ্টিশীল কাজ?
ছবি আঁকি। ভাল আঁকি তা নয়, আঁকতে ভালবাসি। চারকোল, অয়েল এবং অ্যাক্রিলিক করি। গত কয়েক বছরে শুধু কয়েকটা নিমন্ত্রণের কার্ড এঁকেছি। যেটা আর একটু দক্ষতার সঙ্গে করি, তা হল ছবি দেখা। |
আর সাহিত্য?
শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’। রোমান্টিক, ভীষণ সুন্দর। সব বাঙালির মতো রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম, এই ত্রয়ীর লেখা পড়ে বড় হয়েছি। গভীরতম হলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে ‘শ্রীকান্ত’ ফেভারিট। শরৎচন্দ্রের রোমান্টিক আবেদন খুব ভাল লাগে। |
|
আমার মনে হয় আমার ভাল ছবি দেখার চোখ আছে। অনেক অনামী শিল্পীদের ছবি কিনেছি, যারা পরে নাম করেছে। দর্শন নিয়ে পড়াশোনার শখ আছে। আড়াই বছরে ছুঁইনি। অমর্ত্যদার কাছে পিএইচ ডি করেছি। উনি একটা দিকে দার্শনিক। আমারও দর্শনে খুবই আগ্রহ। |
|
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বনাগরিক ছিলেন। নেহরুর মধ্যেও এটা ভীষণ ভাবে ছিল। সেটা খুব টানে। রবীন্দ্রসঙ্গীত সারা ক্ষণ শুনি। আমার স্ত্রী মহারাষ্ট্রের হলেও রবীন্দ্রসঙ্গীত দারুণ ভালবাসে। ‘শেষের কবিতা’ সিনেমা হচ্ছে শুনেছি। সিনেমা দেখাও বন্ধ ছিল। |
আমার কিছু আনইউজুয়াল দার্শনিক বিশ্বাস আছে। সেগুলো নিয়ে এক দিন লিখতে চাই। অতএব অনেক পরিকল্পনা। তাই পড়তে চাই, লিখতে চাই, ছবি আঁকতে চাই। |
আগে আধুনিক শুনতাম না।
এখন সুমন, অঞ্জন, লোপামুদ্রা ও
নচিকেতা খুব ভাল লাগে। |
|
|
পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষের হাল শোধরানোর জন্য কী করা উচিত?
রাজ্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু কর বসাতে, সরকারি পরিষেবার জন্য চার্জ করতে আরম্ভ করতে হবে। এটা সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সাধারণ লোকের সস্তায় জিনিস কেনার প্রয়োজন অনেক। কিন্তু সবাইকে যদি সস্তায় দিতে আরম্ভ করি, তবে অর্থটা আসবে কোথা থেকে? আয় ও ব্যয়, দু’টোই মাথায় রাখতে হবে। প্রণব মুখোপাধ্যায় এটা বার বার মনে করিয়ে দিতেন।
পশ্চিমবঙ্গের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তা হলে কী করা প্রয়োজন?
আবার উচ্চশিক্ষাকে ভিত্তি করতে হবে। আমরা শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে ভাবছি, কিন্তু আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে, কোনটাকে কেন্দ্রবিন্দু করা উচিত, বলব উচ্চশিক্ষা। লক্ষ্য নিতে হবে, আগামী পাঁচ বছরে উচ্চশিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ যেখানে ছিল, সেখানে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা খুবই সম্ভব। এখনও, এত খারাপ অবস্থার পর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে, সব প্রতিষ্ঠানে, সব শহরে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র বোঝাই হয়ে রয়েছে। তাই পাঁচ বছর এ দিকে মন দেওয়া দরকার। তার ঢেউ উপচে গিয়ে পড়বে অন্যান্য ক্ষেত্রে। এখন মানব পুঁজি সবচেয়ে বেশি দরকার। এই যে আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালি, তার আগে ওখানে স্ট্যানফোর্ড, বার্কলে-র মতো প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে সেরা সেরা মস্তিষ্ক ছিল। তারই সুফল ফলল ব্যবসার ক্ষেত্রে। বেঙ্গালুরুতেও তাই হয়েছে। সেখানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স কাজ করছিল। তার পরে ইনফোসিস, উইপ্রো চলে এল। এর জন্য তো তেল বা মাটির তলার খনিজ দরকার নেই। শুধু ঠিক নীতি প্রয়োজন।
আপনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক?
এখনই সরকারে ফিরতে চাই না। তবে পরামর্শ চাইলে অবশ্যই দেব। কলকাতায় জন্মেছি, মানুষ হয়েছি। কলকাতার একটা অদ্ভুত টান হয়। পৃথিবীর খুব কম শহরে মানুষেরই এটা হয়। নিউইয়র্কাররা নিউইয়র্ককে ভীষণ ভালবাসে। লন্ডনের ক্ষেত্রেও এটা আছে। কলকাতাও তেমন। আমার খালি মনে হয়, কলকাতার এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরাট উন্নতির সম্ভাবনা আছে। পশ্চিমবঙ্গের মানব পুঁজি ভাল। আজকের দিনে সেটাই সবচেয়ে দামি পুঁজি। সেটাকে কেন্দ্র করে অনেক কিছুই করতে পারি আমরা। সেই কাজে নিজেকে লাগাতে চাই। তবে আপাতত বসে লিখতে ইচ্ছে করছে। আমার অধ্যাপক-গবেষক দিকটাই দিকটা বেশি জেগে উঠেছে।
কী লিখতে চাইছেন?
ভারতীয় অর্থনীতির উপর একটা সহজ বই। স্বচ্ছ, ঝরঝরে। সাধারণ ভোটাররা যদি বুঝতে পারেন, কোনটা ঠিক নীতি, তা হলেই অর্থনীতির মঙ্গল। সরকারের ভিতর থেকে যেটা দেখলাম, সেটাও লিখব। |
সাক্ষাৎকার: প্রেমাংশু চৌধুরী |
|
|
|
|
|