|
|
|
|
সংসদের বিশেষ অধিবেশন চান আডবাণী |
খুচরো-যুদ্ধে মমতাকেও চায় বিজেপি |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী যে কাজ করতে সক্রিয় হয়েছিলেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতাতেও সেই কৌশলই অবলম্বন করতে চলেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। সে সময় প্রকাশ কারাটের কাছে পরমাণু চুক্তির বিরুদ্ধে একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়ে সংসদে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ করাতে চেয়েছিলেন আডবাণী। এ বারেও খুচরো-যুদ্ধে কংগ্রেসকে একঘরে করতে বিষয়টি নিয়ে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ করানোর জন্য আডবাণী অবিলম্বে সংসদের অধিবেশন ডাকার দাবি জানাতে চলেছেন।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ করাতে চাওয়ার পিছনে বিজেপির কৌশল ছিল কংগ্রেসকে কোণঠাসা করে ফেলা। আডবাণী-কারাট এ নিয়ে ফোনে কথাও হয়। কংগ্রেসকে বিচ্ছিন্ন করতে কারাট সেই প্রস্তাবে রাজিও হন। কিন্তু তখন বিজেপির ফাঁদে পা দিয়ে কংগ্রেস বিরোধিতায় রাজি হননি সীতারাম ইয়েচুরি। ফলে পিছিয়ে আসে সিপিএম।
খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে বিজেপি এবং বাম ২০ সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধ ডেকেছে। বিজেপির কৌশল হল, ভারত বন্ধের পরেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়ে অবিলম্বে সংসদের জরুরি অধিবেশন ডাকার দাবি জানানো হবে। সেই অধিবেশনের মূল আলোচ্যই হবে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি। সেই আলোচনার ভিত্তিতে খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতায় একটি প্রস্তাব পাশ করাতে চায় বিজেপি। আডবাণী চাইছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে এই দাবি জানানোর সময় তাঁদের সঙ্গে বাম-মুলায়ম-মায়াবতীর পাশাপাশি মমতাও সামিল হন। ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে একটি পত্রিকার অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে আডবাণী-কারাটের সঙ্গে হাজির থাকার কথা মুলায়মের। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে কথা হবে বলে মনে করছেন অনেকে। লোকপাল বিল নিয়ে ভোটাভুটির সময় রাজ্যসভায় যেমন একটা শাসক দল বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছিল, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ক্ষেত্রেও তেমন পরিস্থিতি তৈরি করাই এখন বিজেপির কৌশল। একই সঙ্গে কংগ্রেস বিরোধিতার এই মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে এনডিএ-র ঘরকে ফের গুছিয়ে তোলাও দলের লক্ষ্য। সে কারণেই মমতার ক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁকে কেন্দ্র-বিরোধিতার এই জোটে পেতে চাইছে তারা।
মমতা অবশ্য বিজেপির এই ফাঁদে পা দিতে রাজি নন। খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে মমতা আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলেও এই প্রশ্নে বামেদের ডাকা ২০ সেপ্টেম্বরের বাংলা বন্ধের তীব্র বিরোধিতা করছেন।
আডবাণী তৃণমূলকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, জাতীয় স্তরে যখন বন্ধ হয়, তখন সেটা কোন রাজ্যের ব্যাপার নয়। সিপিএমের বন্ধকে মমতা সমর্থন না-ও করতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্তরে যখন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রতিবাদ করে বন্ধ ডাকা হয়েছে, তখন মমতার উচিত তাকে সমর্থন করা। মমতা নিজের মতো করে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি বিজেপির কথা শুনতে নারাজ। ঠিক যেমন রাজি নন সিপিএমের ডাকা বন্ধকে সমর্থন করতে।
আডবাণী জানেন, রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করলেও কংগ্রেস এখনই বিশেষ অধিবেশন ডাকতে রাজি হবে না। তবুও বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।
আডবাণীর কথায়, “প্রণববাবু যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা লোকসভার নেতা, তখন তিনি একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত না হলে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত নেবে না সরকার। কিন্তু সরকার এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সেই কারণেই বিজেপি অবিলম্বে ওই বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানাচ্ছে।” কংগ্রেস তাঁদের প্রস্তাব না মানলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সরব হওয়ার ভাবনাও রয়েছে বিজেপির। |
|
|
|
|
|