কয়লা পাচারের অন্যতম পাণ্ডা কয়েক জন মাফিয়াকে আগেই ধরা হয়েছিল। এ বার দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানা এলাকা থেকে এক লোহা মাফিয়াকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধরা পড়েছে তার এক শাগরেদও।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত লোহা মাফিয়া রাজা গুণ ও তার শাগরেদ ডালিম রায় এবিএল এলাকায় জাতীয় সড়কের ধারে ধাবার পিছনে লোহার কাঁটা চালাতো। তাদের বিরুদ্ধে বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি এবং বিওজিএল থেকে লোহার যন্ত্রাংশ চুরি করে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭২ সালে তৎকালীন সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা বিওজিএল কারখানায় চশমার বাইফোকাল লেন্স, সামরিক বিভাগের অপটিক্যাল লেন্স, ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে ব্যবহৃত ফিল্টার গ্লাস প্রভৃতি তৈরি হত। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে কারখানাটি পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। হাইকোর্টের নির্দেশে কারখানাটি লিক্যুইডেটরের অধীনে চলে যায়। এর পরেই দুষ্কৃতীরা সেখানকার যন্ত্রাংশ সাফ করতে নেমে পড়ে বলে অভিযোগ।
আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি বন্ধ হয়েছিল ২০০২ সালে। খনির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন রকম যন্ত্রপাতি তৈরি হত ওই কারখানায়। কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ পাহারা দেওয়ায় বিওজিএল-এর মতো সেখানে রমরমা কারবার চালাতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। ২০১০ সালের ১১ জুন তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কনসোর্টিয়াম মিলিত ভাবে হাইকোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ দর দিয়ে কারখানার দায়িত্ব পায়। কিন্তু কারখানা খোলা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই গত ৩০ মে ভোরে সিআইএসএফ কারখানা ছেড়ে চলে যায়। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, এর পরে সেখানেও লোহাচোরেদের লাইন পড়ে যায়। সে সময়ে পুরভোটের মরশুম হওয়ায় সে ভাবে নজরদারি চালানো যায়নি বলে পুলিশের দাবি। ভোট মিটে যাওয়ার পরে পুলিশি প্রহরা বাড়ে। কয়েক জন চোরকে ধরাও হয়। চুরি যাওয়া সামগ্রীর কিছু-কিছু উদ্ধার হয়। কিন্তু দলের পাণ্ডা রাজা গুণ অধরাই ছিল।
এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদবের বক্তব্য, যারা লোহার কাজকারবার চালায় তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য সব থানাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা পাওয়ার পরে পুলিশ বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছে। গত কয়েক দিনে মেন গেট এলাকার লোহা মাফিয়া গোপাল জয়সওয়ালের ডেরাতেও একাধিক বার হানা দেওয়া হয়েছে। যদিও তাকে পাওয়া যায়নি। ওয়ারিয়া এলাকার লোহা মাফিয়া পদারথ রামের চার সহযোগী গ্রেফতার হয়েছে। আরও তিন জনকে খোঁজা হচ্ছে। নজরে রয়েছে বেনাচিতির শেখ শহিদ ও মুসা, গোপালপুরের চিত্ত শীলের মতো মাফিয়ারাও। যে সমস্ত কারখানা মাফিয়াদের থেকে লোহা কেনে সেগুলির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে। সেই সব কারখানার লোকজনও এই অবৈধ কারবারে জড়িত কি না, পুলিশ সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। |