ছেলে কি সত্যি মাওবাদী, অভিষেকের বাবা ধন্দেই
শৈশবে বাজারে এক বার পাঁঠা কাটা দেখে যে-ছেলে ভয়ে আর কোনও দিন বাজারে যায়নি, সে কী করে মাওবাদী হয়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে পারে, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ সেটা বুঝতে পারছেন না। চন্দননগরের বারাসত এলাকার বাসিন্দা অশেষ মুখোপাধ্যায় বুধবার জেনেছেন কলকাতা পুলিশের হাতে তাঁর একমাত্র ছেলে অভিষেকের ধরা পড়ার কথা। পুলিশের দাবি, বছর তিরিশের অভিষেক ওরফে অরণ্য মাওবাদীদের কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদক, বহু নাশকতার ঘটনায় জড়িত এবং জঙ্গলমহলে শীর্ষ মাওবাদী নেতা কিষেণজির তত্ত্বাবধানে তিনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
কিন্তু, একটি বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অশেষবাবু বুধবার তাঁর নিজের বাড়িতে বসে বলেন, “ছেলেবেলায় একবার পাঁঠা কাটা দেখে ও এত ভয় পেয়েছিল যে আর বাজারে যায়নি। সেই ছেলে মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত বলে যে প্রচার চলছে, তার কতটা সত্যি, তা নিয়ে কিন্তু সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।”
অভিষেকের বাবা অশেষ ও মা লেখা মুখোপাধ্যায়। ছবি: তাপস ঘোষ।
জুলাই মাসে পুরুলিয়ার বিরামডি স্টেশনে যৌথ বাহিনীর হাতে মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম ধরা পড়ার পরে পেশায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারক তাঁর বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী কেউই ছেলেকে দেখতে চান না। অন্য দিকে, অভিষেকের বাবা অশেষবাবু ও মা লেখাদেবী দু’জনেই বলেন, “ছেলেটাকে এখন এক বার দেখতে চাই।” তাঁরা এই ভেবেই খুশি যে, তাঁদের ছেলে হারিয়ে যায়নি। অবশেষে তার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
২০১০ সালের মার্চ মাসে রটে গিয়েছিল, লালগড়ের কাছে হাতিলোটের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন অভিষেক। পরে মাওবাদীরা একটি বিবৃতি দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিল, অভিষেকের কোনও ক্ষতি হয়নি। তার পর থেকে ছেলের আর কোনও খোঁজ তাঁরা পাননি বলে জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁরা ভেবেছিলেন, ছেলে কোনও দিনই ফিরবে না। পুলিশের বক্তব্য, ২০০৭ সালেই গা ঢাকা দেন অভিষেক। পরে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের শিবিরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু, তাঁর মা-বাবা জানিয়েছেন, ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল।
চন্দননগরের কানাইলাল বিদ্যামন্দির থেকে ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন অভিষেক। সেই সময়ে চন্দননগরের গোন্দলপাড়ায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকত ওই পরিবার। এম এ পাশ অভিষেক দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। যাদবপুরে ভর্তি হওয়ার পরে একটি মেসে থাকতে শুরু করেন অভিষেক। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন। বিভিন্ন গণ সংগঠনের নেতা-নেত্রীরাও সেই সময়ে তাঁর সঙ্গে বাড়িতে আসতেন বলে তাঁর বাবা-মা জানিয়েছেন। মাস ছয়েক আগে অভিষেকের মা-বাবা চন্দননগরের বারাসত এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে যান। অভিষেকের মা লেখাদেবী বলেন, “ছেলেটা কবিতা-উপন্যাস লিখত। যাদবপুরে পড়ার সময়ে ও যে ওই পথে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ওর ক্ষতি হওয়ার খবর রটার পরে প্রথম জানতে পারি ও মাওবাদী।”

এই সংক্রান্ত...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.