স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরে রেলপথ সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের কাজ আটকে রয়েছে। ওই জেলায় নতুন তিনটি রেলপথ সম্প্রসারণ কাজে রেলের তরফে জমি নির্ধারণে ব্যক্তিগত আপত্তি জানিয়ে ৩০০’র উপর বাসিন্দা স্থানীয় বিডিও অফিসগুলিতে অভিযোগ দাখিল করেন। প্রায় এক বছর কেটে গেলেও রেলের তরফে ওই অভিযোগ নিয়ে শুনানীর কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সংশ্লিষ্ট উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের ডিআরএম অরুণ শর্মা বলেন, “জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় গতি আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে বসে বেশকিছু দাবি, আপত্তি মীমাংসা হয়েছে।” রেল সূত্রের খবর, সময় অনুযায়ী হিলি-বালুরঘাট, বুনিয়াদপুর-কালিয়াগঞ্জ এবং বুনিয়াদপুর-ইটাহার ভায়া হরিরামপুর দক্ষিণ দিনাজপুরের এই তিনটি নতুন রেলপথ তৈরিতে জমি অধিগ্রহণ শুরু না হওয়ায় ‘প্রকল্প খরচ’ দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, রেলপথের জন্য চিহ্নিত করা জমি বাদ দিয়ে অন্য অংশ অধিগ্রহণের জন্য অনেকে আবেদন করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে অন্যের জমি জবরদখল করে বসবাসকারীরা জমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করে বসেছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “জমি অধিগ্রহণ নীতি অনুযায়ী রেল দফতর সরাসরি বাসিন্দাদের জমি অধিগ্রহণ করবেন। জেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।” ইতিমধ্যে জেলাশাসক সমস্যা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বালুরঘাটে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। আলোচনার পর উপস্থিত প্রতিনিধিদের সকলেই দ্রুত জমি অধিগ্রহণের পক্ষে মত প্রকাশ করে রেলপথ সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হন। বৈঠকে রেলের তরফে জানানো হয়েছে, উপযুক্ত দাম দিয়ে জমি কেনা হবে। জমির মালিকদের রেলের তরফে একটি শংসাপত্র দেওয়া হবে। ওই শংসাপত্র দেখিয়ে পরিবারের একজন রেলের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের সুযোগ পাবেন বলে জানানো হয়েছে। বালুরঘাটের বাম সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার জানান, “জমির মালিকদের পরিবারের একজনকে সরাসরি রেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হলে অধিগ্রহণ নিয়ে কোনও সমস্যা থাকবে না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “রেলের তরফে বাজার মূল্য অনুযায়ী জমির দাম দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে। তা ছাড়া শংসাপত্রের মাধ্যমে পরিবারের একজন চাকরির সুযোগ থাকছে। স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর প্রচার করে কাজের গতি আটকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। জেলার উন্নয়নের স্বার্থে মানুষের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রের খবর, ২০১০ সালে বালুরঘাট থেকে হিলি পর্যন্ত ২৯ কিমি দীর্ঘ রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ১৭০ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা খরচ সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদন করে রেল বোর্ড। প্রথম দফায় ২০ কোটি টাকা মঞ্জুর করে বর্তমানে বালুরঘাট এবং হিলির দিকে পাঁচটি সেতু তৈরি ছাড়া জমি অধিগ্রহণের কাজ তেমন এগোয়নি। আবার, দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর থেকে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ পর্যন্ত ৩৪ কিমি দীর্ঘ রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ২০০৬ সালে তৎকালিন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদের আমলে সমীক্ষার প্রস্তাব রেল বোর্ডে জমা পড়েছিল। ২০১০-১১ সালে ২০৫ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা বাজেটে ধরা হয়। প্রথম দফায় ১০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়। কিন্তু কাজ এগোয়নি। এরপর রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে গতবছর ফের টেকনিক্যাল সমীক্ষার পর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ধার্য হয় ২২৩ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। |