|
|
|
|
এন আর এস: হাসপাতালে হামলা এখন যেন রোজনামচা |
প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে তাণ্ডব পরিজনদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাঙুরের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
এক প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রবিবার সন্ধ্যায় ওই হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কয়েকশো মানুষ। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক হাসপাতালের গেট আটকে রাখেন তাঁরা। অভিযোগ, ওই সময়ে কোনও অ্যাম্বুল্যান্সও ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে ভাঙচুরের চেষ্টাও চালানো হয়। অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানায় জনতা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অন্য রোগীর পরিজন ও হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশবাহিনী আসে। রাত ন’টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এনআরএসের সুপার স্বপন সাঁতরা গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ওই মহিলার সন্তান গর্ভেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় তিনি দু’দিন আগে হাসপাতালে আসায় চিকিৎসকেরা তখনই ভর্তি করে নিতে চান। কিন্তু পরিবারের লোকেরা রাজি হননি। আজ যখন ওই মহিলা আসেন, ততক্ষণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা সব রকম চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে বাঁচানো যায়নি, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।” |
|
হাসপাতালে হামলা ঠেকাতে পুলিশবাহিনী। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র |
বেলেঘাটার মুন্সিবাজারের বাসিন্দা ওই প্রসূতি সঞ্চিতা সাহা শনিবার সকালে এনআরএসে ভর্তি হয়েছিলেন। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, বেলা ১১টা নাগাদ তাঁরা জানতে পারেন, সঞ্চিতার গর্ভস্থ সন্তানটির মৃত্যু হয়েছে। এর পরে দ্রুত তাঁর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সঞ্চিতার ভাসুরের মেয়ে প্রিয়ঙ্কা সাহার অভিযোগ, আগাগোড়া বিনা চিকিৎসাতেই পড়ে ছিলেন সঞ্চিতা। রাতে তাঁর অবস্থা খারাপ হয়। রবিবার প্রিয়ঙ্কা বলেন, “কাকিমা যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। আমার কাকা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স দুর্ব্যবহার করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন। আজ সকালেও যখন তিনি কাতরাচ্ছেন, তখন বারবার ডাকা সত্ত্বেও কোনও ডাক্তার বা নার্স আসেননি। আমি কথা বলতে গেলে এক জন ডাক্তার আমাকে ধাক্কা মারেন।”
এ দিন বিকেলে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্চিতাকে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তিনি মারা যান। এর পরেই পরিবারের লোকেরা অভিযোগ তোলেন, সময়মতো চিকিৎসা না হওয়াতেই মৃত্যু হয়েছে সঞ্চিতার। তাঁরা হাসপাতালের গেট আটকে বসে পড়েন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কয়েকশো মানুষ হাসপাতালে জড়ো হন। তাঁদের দাবি ছিল, যে ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় মৃত্যু ঘটেছে সঞ্চিতার, তাঁদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা হোক। পরিস্থিতি সামাল দিতে এন্টালি থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের মধ্যস্থতায় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ সঞ্চিতার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই বধূর চার বছরের একটি মেয়ে আছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি তদন্ত করবেন? সুপার জানান, মৃতার পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে কিছু দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ম চালু করেছেন, কোনও হাসপাতালে প্রসূতি বা নবজাতকের মৃত্যু হলে তার বিস্তারিত তথ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই করা হবে। |
|
|
|
|
|