এম আর বাঙুর: হাসপাতালে হামলা এখন যেন রোজনামচা
রোগী-মৃত্যুর ঘটনায় এ বার প্রহৃত কর্মীরা
র জি করের পরে এ বার এম আর বাঙুর।
রোগীর মৃত্যুর পরে ফের মৃতের পরিবার এবং বহিরাগতদের হাতে আক্রান্ত সরকারি হাসপাতালের কর্মীরা। গত শুক্রবারই রোগী-মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তছনছ করে দেওয়া হয়েছিল আর জি কর হাসপাতালের একাংশ। রবিবার এম আর বাঙুরে পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ হয়নি। তবে, রোগীর আত্মীয়দের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরা।
বোড়ালের বাসিন্দা এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ। এর পরে গোলমাল চলে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে। তবে তার পরেও বিকেল পর্যন্ত বাইরে বেরোনোর সাহস পাননি হাসপাতালের কোনও কর্মীই।
অভিযোগ, ঘটনার সময়ে ওই হাসপাতালে যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন ছিল না। ফলে আক্রান্ত কর্মীদের বাঁচাতে হাসপাতালের অন্য কর্মীদেরই এগিয়ে আসতে হয় বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। আক্রান্ত হন হাসপাতালের মহিলা সহকারী সুপারও। অবশ্য যাদবপুর থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলেও জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মৃত রোগীর ক্ষুব্ধ পরিজনেরা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশ জানায়, মৃত রোগীর নাম শিবাবিস্তা ছেত্রী (৩৫)। শনিবার শেষ রাতে এলগিন রোডে একটি মোটরবাইক ওই যুবককে ধাক্কা মারে। বাঁ পা এবং মাথায় আঘাত-সহ তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শয্যা না থাকায় তাঁকে এম আর বাঙুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভোরে সেখানে ওই যুবক ভর্তি হন।
পরিজনদের অভিযোগ, ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ শিবাবিস্তাকে ভর্তি করে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁর পোশাক আনতে বাড়ি চলে যান তাঁরা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হাসপাতালে এসে তাঁরা দেখেন, শয্যায় রোগী নেই। তখনই তাঁরা শোনেন, শিবাবিস্তার মৃত্যু হয়েছে। চার ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে না রেখেই রোগীকে ডেড হাউসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। হামলাকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশকে সামান্য লাঠিও চালাতে হয়। ঘটনাস্থলে পাঁচ জনকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য ব্যক্তিগত জামিনে প্রত্যেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের সুপার সন্তোষকুমার রায়ের অভিযোগ, ওয়ার্ড মাস্টার সুব্রত মণ্ডল, রোগী-সহায়ক মিঠুন ঘোষ এবং সহকারী সুপার সেমন্তী মুখোপাধ্যায়কে মারধর করা হয়েছে। রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর পরিবারের লোকেরা এবং বেশ কয়েক জন বহিরাগত প্রথমে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সুব্রতবাবুর ঘরে চড়াও হয়। তাঁকে নাগাড়ে চড়-থাপ্পড় মারা হয়। হাসপাতালের খাতায় ইচ্ছাকৃত ভাবে রোগীর মৃত্যুর সময় বদলের জন্যও চাপ আসতে থাকে। সুব্রতবাবুকে বাঁচাতে ওই ঘরে পৌঁছে যান সহকারী সুপার সেমন্তীদেবী ও রোগী-সহায়ক মিঠুন ঘোষ। তাঁদের উপরেও চড়াও হয়ে হামলাকারীরা মারধর করে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
সেমন্তীদেবীর কথায়, “ওয়ার্ডের ভিতরে ঢোকার গেট বন্ধ করে দেওয়ায় হাসপাতালে ঢুকতে পারেনি হামলাকারীরা। কোনও পুরুষ পুলিশকর্মী ছিলেন না। ওয়ার্ড মাস্টারকে আমরা দু’জন আড়াল করে ছিলাম। আমাদেরও মারা হয়।”
রোগীর পরিবার অবশ্য হাসপাতাল-কর্মীদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, রোগীর অবস্থা যে আশঙ্কাজনক, হাসপাতাল তা জানায়নি। রোগী মারা যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরে তাঁদের খবর দেওয়া হয়। কোনও ধরনের পর্যবেক্ষণ ছাড়াই রোগীকে মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মৃতের মা আসলাবিস্তা ছেত্রীর দাবি, “সকালেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। চিঁড়েভাজা খেতে চেয়েছিল। ছেলের অবস্থা যে ভাল নয়, এক বারও কেউ বলেনি।”
সুপার সন্তোষবাবুর ব্যাখ্যা, “চার ঘণ্টার আগে ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয় না। কিন্তু চার ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখাটা বাধ্যতামূলক নয়। অন্য রোগীদের আপত্তিতে মৃত রোগীকে বেশিক্ষণ শয্যায় ফেলে রাখা হয়নি। দেড় ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করেই ওই রোগীকে সরানো হয়েছিল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.