|
|
|
|
|
ভুল ওষুধে বিরল অসুখ,
প্রাণে বাঁচল কিশোরী
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফল যে কী মারাত্মক হতে পারে, টের পেল চয়নিকা মুখোপাধ্যায়ের পরিবার। ত্বকের বিরল রোগ ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়েছিল ১৪ বছরের এই কিশোরী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী এই রোগে গোটা শরীরটা পুড়ে ঝলসে যাওয়ার মতো কালো হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে চয়নিকাকে পুরো সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরালেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
নবম শ্রেণির ছাত্রী চয়নিকাকে অ্যালার্জির চিকিৎসার জন্য পাড়ার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকেরা। অভিযোগ, সেই চিকিৎসক তাকে একটি অ্যালোপ্যাথি ওষুধের নাম লিখে দেন। সপ্তাহ দুয়েক সেই ট্যাবলেটটি খাওয়ার পরেই সারা শরীরে র্যাশ বেরোয় চয়নিকার। সঙ্গে প্রবল শ্বাসকষ্ট। ত্বকের চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, রোগটা গুরুতর। নাম ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’। বাঁচার আশা ক্ষীণ।
ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে টানা প্রায় এক সপ্তাহ লড়াই করার পরে ওই কিশোরীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরাতে সফল হন চিকিৎসকেরা। চয়নিকার মামা দেবাশিস মজুমদার জানান, ওই ট্যাবলেটটা খাওয়ার পরেই চয়নিকার গায়ে র্যাশ বেরোতে শুরু করেছিল। |
উপসর্গ |
গায়ে র্যাশ
কালো ছোপ
জ্বর, সর্দিকাশি
বমি
মাথা ব্যথা |
করণীয় |
আগে ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করুন
সামান্য উপসর্গ দেখলেই
ডাক্তারকে জানান
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না |
চিকিৎসা |
মূলত উপসর্গভিত্তিক
আইসিইউ-এ রাখা জরুরি
স্টেরয়েড/অ্যান্টি হিস্টামিনিক ওষুধ
প্রয়োজন পর্যাপ্ত ফ্লুইড |
|
স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে তিনি হামের চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু দ্রুত অবস্থার অবনতি হয়। শেষে এক চর্মরোগ চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, চয়নিকা ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোমে’ আক্রান্ত। দেবাশিসবাবু বলেন, “ভুল ওষুধ খাওয়ানোয় মেয়েটাকে হারাতে বসেছিলাম আমরা। এ বার ঠেকে শিখলাম। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা ওকে নতুন জীবন দিয়েছেন।”
এনআরএসের এক চিকিৎসক বলেন, “রোগটা খুবই বিরল। ১০ লাখে হয়তো এক জনের হয়। মেয়েটি খুবই সঙ্গিন অবস্থায় এসেছিল। আর একটু দেরি হলে আমাদের কিছু করার থাকত না।” ত্বকের জটিল এবং প্রাণঘাতী রোগ ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’-এর পরবর্তী ধাপ টক্সিক এপিডারমাল নেক্রোলাইসিস বা টেন, যেখানে জীবনহানির সংখ্যা খুব বেশি। এই রোগে চামড়ার উপরের অংশ পুড়ে কালো হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরেরসমস্ত অংশের মিউকাস ঝিল্লি নষ্ট হয়ে যায়। মূলত ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকেই ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’ হয়। পাশাপাশি জিনগত সমস্যাও কিছু ক্ষেত্রে এর কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগের পরিণতি মারাত্মক। চিকিৎসা দেরিতে শুরু হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
ফামাকোলজির অধ্যাপক স্বপন জানা বলেন, “বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়ার ফল যে কী ভয়ানক হতে পারে, চয়নিকার ঘটনা তার প্রমাণ। একটা অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটও যে ক্ষেত্র বিশেষে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, এটা মানুষকে বুঝতে হবে।”
চর্মরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষের কথায়, সব ক্ষেত্রে যে চিকিৎসকের দোষ তা নয়। একটা ওষুধ হয়তো এক হাজার জন খাচ্ছেন, ৯৯৯ জনের কোনও সমস্যা হল না। এক জনের ক্ষেত্রে তীব্র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। তাঁর মতে, কার কীসে অ্যালার্জি তা রোগী বা তার পরিবার না জানলে চিকিৎসকদের পক্ষে ব্যাপারটা বেশ ঝুঁকির হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়? তিনি বলেন, “কোনও ওষুধ খাওয়ার পরে সামান্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলেই চিকিৎসককে সেটা জানাতে হবে। র্যাশ বেরোলে বা শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করলে অবিলম্বে সেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।” |
|
|
|
|
|