|
|
|
|
গরহাজির চিকিৎসকদের শাস্তি বিহারে |
|
পড়শি পারলেও বঙ্গে
বেহাল নজরদারি
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
বিহার পারল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পারল কি?
সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে এক বছর আগে চিকিৎসকদের হাজিরা-নীতি চালু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। গোটা দেশে নজির গড়ে চিকিৎসকদের হাজিরা সংক্রান্ত তথ্য জানাতে চালু হয়েছিল এসএমএস সার্ভিস-ও। কিন্তু নজরদারির অভাবে মাস কয়েকের মধ্যেই সেই উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে চিকিৎসক মহলের অভিমত। অভিযোগ, নিয়ম না মেনেও এ রাজ্যে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছেন বহু চিকিৎসক। অথচ প্রতিবেশী রাজ্য বিহার নির্দেশিকা জারি করেই থেমে থাকেনি। সময়মতো হাজিরা না দেওয়ায় সেখানে ৬২ জন চিকিৎসকের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত পাকা। স্থির হয়েছে, শুধু সময়ে হাজির হওয়া নয়, হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা কখন বেরোচ্ছেন, সে দিকেও নজর রাখা হবে।
নিয়ম দু’রাজ্যেই হল। তা হলে নীতীশ কুমার যা পারলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ক্ষেত্রে তা আটকাচ্ছে কোথায়?
সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল যাঁরা, তাঁদের মতে, তফাতটা গড়ে দিয়েছে নিয়মের প্রয়োগ। বিহার নির্দেশিকা জারি করেই থেমে থাকেনি, প্রয়োজনে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। বিহার স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ওই রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে, অনেক ডাক্তারই সময় মেনে আসেন না। যাঁদের সকাল ৮টায় কাজে যোগ দেওয়ার কথা, তাঁদের আসতে ১১টা বেজে যায়। নির্দেশিকা জারির পরে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আচমকা হানা দিতে শুরু করেন সরকারি আধিকারিকরা। এই ভাবে মোট ৬২ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত এক মাসের হিসেব দেখে তাঁদের বেতন কাটা হবে। তার পরেও পরিস্থিতি না বদলালে সাসপেনশনের কথা ভাবা হতে পারে।
আর এ রাজ্যে?
সরকারি হাসপাতালগুলিতে আউটডোর সঠিক সময়ে খোলা নিশ্চিত করতে এবং ডাক্তারদের হাজিরার হার জানাতে গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘ওপিডি ট্র্যাকিং সিস্টেম’ চালু হয়। হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে তারা যেন স্বাস্থ্য ভবনে এসএমএস করে আউটডোর ক’টায় চালু হল এবং বিভাগগুলিতে কত জন চিকিৎসক এসেছেন, সেই তথ্য জানিয়ে দেয়। প্রথম দিকে সামান্য কিছু দিন সব নিয়মমতো চললেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এসএমএস পাঠানোয় ঢিলেমি এসে যায় বলে চিকিৎসক মহলের বক্তব্য। এমনকী, বহু হাসপাতাল এসএমএসে ‘মিথ্যে তথ্য’ পাঠাতে শুরু করে বলেও অভিযোগ। প্রায় প্রতি হাসপাতালেই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ রয়েছে।
সে জন্য শাস্তি তো পরের কথা, গত এক বছরে লিখিত ভাবে কোনও চিকিৎসককে সতর্ক করা হয়েছে কি? পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন গোড়ায় নিয়মিত কোনও না কোনও হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শনে যেতেন, তখন খানিকটা আলোড়ন শুরু হয়েছিল। বেশির ভাগ চিকিৎসকই হাজিরার সময় মেনে চলতেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পরিদর্শন বন্ধের সঙ্গে সঙ্গেই সেই হাজিরাতেও ভাটার টান।
তার পরেও কেন কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি এ রাজ্য? এ রাজ্যের এক শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘পলিটিক্যাল উইল’। কঠোর হতে গেলে কিছু ক্ষেত্রে অপ্রিয়ও হতে হয়। সেই ঝুঁকিটা নিতে পারছিলেন না কেউই।” তা হলে কি বিহার যা পারে, পশ্চিমবঙ্গ তা পারবে না? পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “পারতেই হবে। আগে স্বাস্থ্য ভবনে চালু হয়েছিল, এ বার এক সপ্তাহের মধ্যে এসএসকেএম, বর্ধমান, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ এবং বাঙুর হাসপাতালে বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ড্যান্স চালু হচ্ছে। এই বছরের মধ্যে মহকুমা স্তর পর্যন্ত হাসপাতালগুলিতে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সময়মতো হাজিরা না দিলে স্বাভাবিক নিয়মেই বেতন বা ছুটি কাটা হবে।” রাজ্যের শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তাও মনে করেন, “বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ড্যান্স চালু হলে হয়তো ছবিটা বদলাবে।” তবে এই পদ্ধতিতেও সুরাহা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে খোদ চিকিৎসক মহলেই।
বিহারের স্বাস্থ্য দফতর এর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ছুটি নিতে হলে সরকারি চিকিৎসকদের আগাম জানাতে হবে। না হলে মাসের শেষে তাদের বেতন কেটে নেওয়া হবে। তা নিয়ে রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠনগুলি প্রতিবাদ জানালেও কোনও ফল হয়নি। সরকার নিজের জায়গায় অনড় থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। |
|
|
|
|
|