বৃষ্টি নামলেই ওদের ছুটি। গাছতলার ‘ক্লাস’ ছেড়ে তখন বই-খাতা বগলে দৌড় লাগায় খুদে পড়ুয়ারা। গত কয়েক বছর ধরে এ ভাবেই চলছে মানবাজার ২ ব্লকের টোপরবাইদ প্রাথমিক স্কুলের পড়াশোনা।
এই স্কুলের শ্রেণিকক্ষ তৈরি করার জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে টাকাও বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু স্কুল তৈরির জায়গা না মেলায় এখনও পর্যন্ত ওই খুদে পড়ুয়ারা মাথায় ছাদ পায় নি। অগত্যা আমগাছের নীচেই তাই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পড়াশোনা করান স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা ঊষা মুদি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৬ সালে এই স্কুলটি সরকারি অনুমোদন পায়। স্থানীয় এক বাসিন্দা ঘাট গ্রামের কাছে স্কুলঘর তৈরির জন্য জমি দান করেন। খড়ের চালা তুলে সেখানেই পঠনপাঠন শুরু হয়। কিন্তু এরপরেই অভিযোগ ওঠে, ওই জমি কংসাবতী জলাধারের। জমি বিতর্কের জেরে আর স্কুলঘর গড়ে ওঠেনি।
ঊষাদেবী বলেন, “২০০৮ সাল পর্যন্ত স্কুল ঠিকমতো চলেছিল। স্কুল ভবন নির্মাণের টাকাও এসে গিয়েছিল। কিন্তু জমি নিয়ে গোলমালের জেরে আর স্কুলঘর তৈরি হয়নি।” |
গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি তথা কুমারী পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের অঞ্জনা ওরাং বলেন, “ওই বিতর্কিত জমিতে কী করে স্কুলের অনুমোদন মিলেছিল জানি না। তবে স্কুলভবন তৈরি না হলেও ২০০৭-এর শেষ দিকে মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতি সেখানেই একটি নলকূপ ও শৌচাগার তৈরি করে দেয়।” ঊষাদেবী জানান, স্কুলে ২৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। মিড-ডে মিলের রান্না হয়। একজন শিক্ষক হওয়ায় সব সামলাতে সমস্যা হয়। বাড়িতে স্কুলের যাবতীয় খাতা-পত্র, আলমারি ও অন্যান্য জিনিসপত্র রয়েছে।”
স্কুলের পড়ুয়া রাজীব বাউরি, শেখ জাফর আলি, নেপুরা বাউরিরা বলে, “অল্প বৃষ্টি নামলেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়। গরমের দিনেও কড়া রোদে পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়। অন্যদের মতো আমাদের কেন স্কুল ঘর নেই?”
ঊষাদেবীর ক্ষোভ, এতদিন ধরে গাছতলাতে তাঁদের স্কুল চলার খবর স্থানীয় পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস থেকে প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের কর্তারা সব জানেন। অনেকে এসে দেখেও গিয়েছেন। কিন্তু স্কুলঘর আর তৈরি হয়নি। বছর দু’য়েক আগে এক শিক্ষক এসেছিলেন। এক বছর পরে তিনিও অন্যত্র চলে যান।
মানবাজার দুই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত মাহাতো বলেন, “পড়ুয়াদের অসুবিধার কথা ভেবে নলকুপ ও শৌচালয় তৈরি করা হয়েছিল। জমি নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় স্কুলের জন্য নতুন করে জমি দেখা হচ্ছে।” বোরো চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সৌমেন মণ্ডল বলেন, “স্কুলটির সমস্যার কথা জানি। জমি বিতর্কের জেরেই স্কুলঘর তৈরি করা যাচ্ছে না। তবে সম্প্রতি টোপরবাইদ গ্রামের কাছে একটি জমি মিলেছে।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নীলকমল মাহাতোর আশ্বাস, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের জেলা প্রকল্প আধিকারিক উদয়ন ভৌমিক বলেন, “ওই স্কুল সর্ম্পকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি।” |