‘ঘরছাড়া’ এক সিপিএম কর্মীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ঘটনা। নিহতের নাম লিয়াকত মিদ্যা (৫০)। পাত্রসায়র থানার কাঁটাদিঘি গ্রামে তাঁর বাড়ি। এই ঘটনায় তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি-সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে সিপিএমের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাটিকে ‘জনরোষের পরিণাম’ বলে দাবি করেছেন। নিহত সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ রয়েছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “দেহটি ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। খুনের অভিযোগের তদন্ত চলছে।” এই ঘটনাটি শনিবার ঘটলেও রবিবার রাত পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
এ দিন কলকাতায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেন, “ভাঙড়ে এবং পাত্রসায়রে তৃণমূলের হাতে দু’জন খুন হয়েছেন। দু’জায়গাতেই পুলিশকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। পাত্রসায়রে আমাদের কর্মীর অপরাধ, তিনি অনেক দিন বাড়িছাড়া থাকার পরে এ বার পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়েছিলেন।” তাঁর কটাক্ষ, “এ রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে কারওরই কোনও নিরাপত্তা নেই।” ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন সকালে বর্ধমান-বাঁকুড়া রাস্তায় ধগড়িয়া মোড়ে এবং পাত্রসায়র-বিষ্ণুপুর রাস্তায় বাইপাস মোড়ে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা পথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করে দুপুরে পাত্রসায়রে তৃণমূল মোটরবাইক নিয়ে পাল্টা মিছিল করে।
গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই পাত্রসায়র এলাকার অনেক বাম কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হন। ভোটের পর থেকে খেতমজুর লিয়াকতও গ্রামে থাকছিলেন না। পাত্রসায়র সদর ও অন্যান্য এলাকায় আত্মীয়দের বাড়িতে তিনি থাকতেন। সম্প্রতি গ্রামে ফেরার জন্য তিনি তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতা এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন বলে পরিবারের দাবি। শনিবার সকালে একই কারণে তিনি পাত্রসায়রে এসেছিলেন। সিপিএমের অভিযোগ, পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তৃণমূলের কিছু লোকজন তাঁকে একটি মোটরবাইকে তুলে নিয়ে যায় প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে পাত্রসায়র ক্যানাল লাগোয়া একটি মাঠে। সেখানে লিয়াকতকে বেধড়ক মারধর করে তারা পালায়। পুলিশ তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। রাতে সিপিএমের তরফে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের হয়।
নিহতের স্ত্রী একতারা বেগম বলেন, “স্বামী সিপিএমের সক্রিয় কর্মী হলেও কখনও কারও উপরে অত্যাচার করেননি। কিন্তু, বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূলের ভয়ে তিনি বাড়ি ঢুকতে পারেননি। এ বার বাড়ি আসতে চেয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, “স্রেফ রাজনৈতিক আক্রোশে তৃণমূলের গুণ্ডারা ওঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের অভিযোগ, “লিয়াকত বাড়ি ফেরার জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হতে পাত্রসায়র গিয়েছিলেন। কিন্তু, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করল।” তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা কার্যকরী সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “ওই এলাকায় লিয়াকতের বিরুদ্ধে আমাদের দলীয় কর্মীকে খুন থেকে শুরু করে লুঠপাটের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ছিল। জনরোষেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমাদের দল কোনও ভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।” এই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকের আরও অভিযোগ, লিয়াকতকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করতে সে ভাবে ‘সক্রিয় হয়নি’। তবে পুলিশ সুপার বলেন, “মারধরের খবর পেয়েই পুলিশকর্মীরা সেখানে রওনা দেন। ওই ব্যক্তির হদিস মেলার পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।” |