কীর্তনের আসর ছেড়ে খোলা হাওয়ায় ঘুরতে বের হওয়া চার কলেজ পড়ুয়ার মৃত্যু হল একটি পিক-আপ ভ্যানের ধাক্কায়। জখম হলেন তাঁদের সঙ্গী আরও চার পড়ুয়া।
শনিবার রাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া ৬০-এ জাতীয় সড়কের উপর ছাতনা থানার ঘোলগড়্যা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন কার্তিক বাউরি (১৯), গৌতম প্রামাণিক (১৯), বাপি মণ্ডল (১৯), ও সুশান্ত সিংহ ঠাকুর (১৯)। তাঁরা সকলেই ঘোলগড়্যা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা বিভিন্ন কলেজের প্রথম বর্ষে পড়তেন। আহতদের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণকান্ত মণ্ডলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। ছাতনার নোয়াডিহা গ্রামের বাসিন্দা ওই স্কুলছাত্র ঘোলগড়্যায় মামার বাড়িতে মনসা পুজো উপলক্ষে এসেছিল। বাকি তিন আহতকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং রাস্তায় ‘স্পিড ব্রেকার’ বসানোর দাবিতে রবিবার সকালে ঘণ্টাখানেক জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পরে ছাতনার বিডিও এবং ওসির আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মনসা পুজো উপলক্ষে ওই গ্রামে শনিবার রাতে কীর্তনের আসর বসেছিল। সেই আসর থেকে রাত প্রায় ১১টা নাগাদ ওই আট তরুণ কিছুটা দূরে ঘোলগড়্যা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে ঘুরতে যান। রাস্তার একপাশ দিয়ে তাঁরা হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁকুড়ামুখী একটি পিক-আপ ভ্যান পিছন থেকে এসে তাঁদের ধাক্কা মারে। এর পর ভ্যানটি একটি খালি বাড়ির দেওয়ালে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই বাপি মারা যান। আহতদের চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা
তাঁদের উদ্ধার করেন। বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথেই আরও তিন জনের মৃত্যু হয়।
রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় অবরোধ চলছে। বাপির কাকা জিতেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “ওই আট জনের খুব বন্ধুত্ব ছিল। রাতের খাওয়া সেরে কীর্তন শুনতে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি ছেলেটা মারা গিয়েছে। বিশ্বাসই করতে পারিনি।” পড়শিরা জানান, মৃত বাপি ও সুশান্ত বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজ, গৌতম বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ ও কার্তিক শালডিহা কলেজে কলা বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়তেন। আহত কৃষ্ণকান্ত ভগবানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। জখম বাকি তিন যুবক সাধন মণ্ডল, রাহুল মণ্ডল ও নীলোৎপল মণ্ডলও কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। দুর্ঘটনার পরে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কৃষ্ণকান্তের মামা শক্তিপদ মণ্ডল বলেন, “কৃষ্ণ মাঝেমধ্যেই এখানে বেড়াতে আসত। কেন যে ওরা কীর্তনের আসর ছেড়ে রাস্তার ধারে ঘুরতে গিয়েছিল!” |