তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের জন্য রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করল বিজেপি। তাদের অভিযোগ, বামফ্রন্টের মতোই বর্তমান রাজ্য সরকারও সেই ‘আমরা-ওরা’ নীতিই মেনে চলছে। কৃষ্ণনগরে রবিবার ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার কর্মী সম্মেলনে এসে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “বেছে বেছে শুধু তৃণমূল কর্মীদের নামই বিভিন্ন মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।” শুধু তা-ই নয়, এর ফলে ‘দাগী আসামী’রা ছাড়া পেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। রাহুলবাবুর বক্তব্য, “সিপিএমের আমলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে বহু মিথ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, এই মামলাগুলো তুলে নেওয়া উচিত কিন্তু দেখতে হবে এই সুযোগে নির্দোষদের সঙ্গে যাতে প্রকৃত দোষীরাও ছাড়া না-পেয়ে যায়।”
কর্মী সম্মেলনে এ দিন রাহুলবাবু বলেন, “তৃণমূল আসলে সিপিএমেরই নতুন সংস্করণ! সিপিএমের আমলে বিরোধী দলের কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হত। এই সরকারও সেই একই কাজ করছে। কার্টুন-কাণ্ড থেকে বোঝা যায়, এই সরকার বিরোধী বক্তব্য একেবারেই সহ্য করছে না।” বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মেলনে গোলমাল পাকানোর অভিযোগে ধৃত শিলাদিত্য চৌধুরীর নাম না-করেই রাহুলবাবু বলেন, “সম্প্রতি এক জনসভায় এক যুবক প্রশ্ন করেছিলেন, কী খাব? শুধু সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে মাওবাদী তকমা দিয়ে জেল খাটানো হচ্ছে। সিপিএম-ও একই কাজ করত। কেউ বিরোধিতা করলেই তাকে মাওবাদী তকমা দিয়ে জেলে পুরে দিত। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে প্রশাসনের উপরে জঙ্গলমহলের মানুষের আস্থা ফিরেছিল। কিন্তু এই ঘটনায় আবার অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সিপিএমের মতো তৃণমূলও পুলিশ-প্রশাসনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।” প্রসঙ্গত, রাহুলবাবু ইতিমধ্যেই শিলাদিত্যের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিজেপি-র অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও ঘটনাক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি-র একা লড়ার কথা ঘোষণা করার পাশাপাশিই কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেছেন রাহুলবাবু। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস ও তৃণমূল, দুই দলই মানুষের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের শরিক হয়ে তার বিরোধিতা করছে তৃণমূল। আবার কংগ্রেস রাজ্য সরকারের শরিক হয়েও সেই সরকারের বিরোধিতা করছে। লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ব, সরকারের মধু খাব, আবার সরকারেরই সমালোচনা করব, তা হয় না! আসলে কংগ্রেস জানে রাজ্য সরকারে না-থাকলে তাদের ভিক্ষাপাত্রও জুটবে না! সরকারে থাকলে জোট-ধর্মটা পালন করাই উচিত।”
ইমামদের ভাতা দেওয়ার প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে এ দিনও কটাক্ষ করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়েও। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের অন্তর্কলহ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক নেতা আর এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের ষড়যন্ত্র করছে। কোথাও এলাকা দখল, কোথাও আবার অফিস দখল নিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে।” |