উৎসবের আঙিনায় ফিরছেন প্রবাসীরা
র তাঁদের অপেক্ষায় থাকে। অপেক্ষায় থাকেন ঘরণী। ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিন গোনে বাবার অসুখও।
ঈদের মুখে তাই দীর্ঘদিন বাদে ভিন রাজ্য থেকে ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরে আসায় সীমান্তে যেন খুশির বাঁধ ভেঙেছে।
গত বছর ঈদে কেরল থেকে বাড়ি ফিরতে পারেননি ডোমকলের সাইদুল ইসলাম। বন্ধুর হাত দিয়ে তিনি বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছিলেন। সেই টাকায় ছেলেমেয়ের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনলেও নিজের জন্য কিছুই কেনেননি সাইদুলের স্ত্রী জেসমিন বিবি। জেসমিন বলেন, “লোকটাই যখন বাড়ি ফিরতে পারল না, তখন আমি কি নতুন পোশাক পরে আনন্দ করতে পারি?’’
দিনকয়েক আগেই সপরিবারে বাজার করতে বেরিয়ে রীতিমত হই হই কাণ্ড। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডোমকলে এ দোকান ও দোকান ঘুরে ঘুরে বাজার করে ইফতারের আগে আগে বাড়ি ফিরেছেন সাইদুল-জেসমিন। সাইদুল বলেন, “পরবের দিনে বাড়ি ফিরতে না পারার কষ্ট বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এই ক’টা দিন স্ত্রী, ছেলে মেয়েদের সঙ্গে খুব আনন্দ করে কাটাব এরপর আবার বাড়ি ফিরতে ফিরতে তো সেই বছর গড়িয়ে যাবে।”
দিন দশেক আগে পশ্চিম এশিয়া থেকে বাড়ি ফিরেছেন জলঙ্গির আসমত শেখ। বাড়িতে আসার দিন থেকেই আসমতের ‘অত্যাচারে’ হেঁসেলঘরে ঢোকার উপায় নেই স্ত্রী ফিরোজার। কেন? স্বামীর উপরে রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলেন ফিরোজা। বলেন, “রান্নাঘরের সব জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাবু নানা পদ রান্না করে চলেছেন। বলুন, এটা অত্যাচার না?’’ আসমত বলেন, “আরে বাবা কাল রাতে খাসির মাংসটা কেমন রেঁধেছিলাম সেটা বলুক একবার।” এই ফিরোজাই আবার দিনকয়েক বাদে রান্নাঘরে ঢুকে মনখারাপ করে বসে থাকবেন। ফিরোজার কথায়, “ও চলে গেলেই তো আর রান্নাঘরটা এ ভাবে অগোছালো হয়ে থাকবে না। তখন সেই গোছানো হেঁসেলঘরে ঢুকলেই এইসব মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়ে যাবে। তাই যে ক’টা দিন বাড়িতে আছে, যা খুশি করুক।”
মাসকয়েক আগে রাতে হঠাৎ বুকে যন্ত্রণা শুরু হয় কুপিলা গ্রামের মোসলেম শেখের। রাতেই স্থানীয় একজন চিকিৎসককে দেখানো হয়েছিল। সেই চিকিৎসক বলেছিলেন, বহরমপুরের কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে। কিন্তু সে তো অনেক টাকার ব্যাপার। এরপর কেরলে কাজ করতে যাওয়া ছোট ছেলেকে ফোন করতে সেই মুশকিল আসান করে দিল। বাড়ি ফিরে কয়েকদিন আগে বাবাকে নিয়ে তিনি বহরমপুরে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন।
বেঙ্গালুরুতে থাকেন খরগ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। বছরে আর কোন সময় বাড়ি ফেরা হোক বা না হোক, ঈদের সময় তাঁর বাড়ি ফেরা চাই-ই চাই। তবে এ বার বাড়ির লোকজনের আবদার ছিল একটা রঙিন টিভির। ঈদের আগে সেই আবদার পূরণ করেছেন রবিউল। রবিউল বলেন, “কার্টুন দেখতে দেখতে ছেলেমেয়েরা খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। এই আনন্দটুকুর জন্যই অনেক কষ্ট ভুলে থাকা যায়। মন থেকে মুছে যায় বিদেশে পড়ে থেকে হাড়ভাঙা খাটুনির ধকল।” রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান জানমহম্মদ মণ্ডল বলেন, “সীমান্তের এই সব গ্রামগুলো থেকে বহু লোকজন বাইরে কাজে যান। তাঁদের পাঠানো টাকাতে এলাকার হতশ্রী চেহারাটা অনেক পাল্টে গিয়েছে।” পদ্মাপারের এইসব টুকরো টুকরো ছবিগুলোর জন্যই তো ভুলে থাকা যায় সীমান্তের শত কষ্ট। আরও একটা ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকা যায় বছরভর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.