সাইনাকেই নিজের ‘উত্তরসূরি’ বেছে দিয়ে গেলেন সচিন
ভ্রাতা লক্ষ্মণের বিয়োগান্ত অবসরের পরের দিনই তাঁর শহরে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘রাম’ পা রাখলেন! তিনি---রাজ্যসভার সাংসদ সচিন রমেশ তেন্ডুলকর ‘প্রথম টেস্ট’ খেলতে নামার চার দিন আগে অন্য একটা নজির গড়ে ফেললেন এ দিনই। এমনিতেই নিজামের শহর রবিবার প্রাক্-ঈদের উৎসবে মুখর। সেই আলোর রোশনাই আরও বেশি হায়দরাবাদের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা বানজারা হিলসের তাজ কৃষ্ণ হোটেলের গোল্ডেন বল রুমে। চাঁদের হাট। ক্রিকেটের ‘ভগবান’ সচিন থেকে ভারতের প্রথম ব্যাডমিন্টনে অলিম্পিক পদকজয়ী সাইনা। তেলুগু সিনেমার মহাতারকা নাগার্জুন থেকে কর্পোরেট জগতের হোমরাচোমরারা।
আর সেখানেই প্রধান অতিথি সচিন তেন্ডুলকর জীবনে প্রথমবার একটি বিএমডব্লিউ গাড়ির চাবি পুরস্কার প্রাপকের হাতে তুলে দিলেন। প্রাপকের নাম সাইনা নেহওয়াল। জিন্স আর সাদা টপ পরা দেশের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন তারকার বিস্ময়াবিষ্ট চোখমুখ দেখে অবশ্য মনে হচ্ছিল এ সব তাঁর কাছে চুলোয় গেছে। মাত্র বাইশ বছরে কুচকুচে কালো বিএমডব্লিউ-এর ঘোর-টোর নয়। সাইনা আসলে নার্ভাস। এক মঞ্চে, একটা চেয়ার পরেই নিজের ভগবানকে দেখার বিস্ময়! ব্যাডমিন্টনের বাইরে সাইনার মারাত্মক আকর্ষণ দু’টো জিনিসে। পিৎজা আর সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাটিং। অন্ধ্রপ্রদেশ রঞ্জি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক, বিসিসিআইয়ের জুনিয়র নির্বাচন কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান, হায়দরাবাদ ব্যাডমিন্টন সংস্থার প্রেসিডেন্ট চামুণ্ডেশ্বরনাথের দেওয়া রাজসিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাইনা প্রথমেই বললেন, “শরীরে মেদ অলিম্পিকের আগে বেড়ে যাবে বলে গোপী স্যর গত চার মাস আমাকে একটা টুকরোও পিৎজা খেতে দেয়নি। আজ আমার স্যরের উপর থেকে সব রাগ চলে গেল কারণ, ওঁর কোচিংয়ের জন্যই আমি অলিম্পিক মেডেল জিতেছি। আর সেটা জেতার জন্যই আজ আমি আমার ভগবানের হাত থেকে পুরস্কার নিতে পারছি। সচিন-স্যর আমার কাছে ক্রিকেটের ভগবান। ওকে এক মঞ্চে এত কাছে দেখতে পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত। নার্ভাস লাগছে।”
যুগলবন্দি। অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ীর হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিয়ে ক্রিকেটের মহাতারকা। রবিবার। ছবি:পিটিআই
সচিন বক্তব্য রাখতে রিমোট কন্ট্রোল মাইক হাতে নিতেই অনুরোধ এল, স্যর আপনার লম্বা টেস্ট ইনিংসগুলোর মতোই এখানে একটা লম্বা বক্তৃতা শুনতে চায় সবাই। সচিন অনুরোধের রসিক জবাব দিলেন, “আমার হাতে একমাত্র ব্যাট থাকলেই আমি লম্বা কিছু করার চেষ্টা করি। বাদবাকি আমি যতটা সম্ভব সংক্ষেপে করতে ভালবাসি।” তার পর সাইনার দিকে তাকিয়ে জিন্স আর ফুলস্লিভ টি-শার্টের সচিন, “দেখো বোন, নার্ভাস হয়ে নিজের গাড়ির বদলে অন্যের গাড়ির চাবি দিয়ে খুলতে যেও না।” একই অনুষ্ঠানে সাইনার মেন্টর গোপীচন্দ আর তাঁর অ্যাকাডেমির উৎপন্ন জুনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিভি সিধুকে দেওয়া হল অত্যাধুনিক হুন্ডাই গাড়ি। উনিশ বছর বয়সী পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির মেয়ে চার বছর পর রিও অলিম্পিকে সাইনার পাশাপাশি ব্যাডমিন্টনে ভারতের আর এক পদকের দাবিদার হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করলেন সচিন। সিধুর বাবা-মা ভারতের প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ভলিবলার শুনে খুশি হলেন। আবার কষ্ট পেলেন যখন তাঁকে গোপী আলাদা আলাপচারিতায় বলছিলেন, “এখন সবাই সাইনা আর আমাকে সংবর্ধনার পর সংবর্ধনা দিচ্ছে। কিন্তু পাঁচ-ছ’বছর আগে আমি যখন অ্যাকাডেমিতে অত্যাধুনিক পরিকাঠামোর জন্য কর্পোরেট হাউসগুলোতে গিয়ে টাকা চেয়েছি, বলেছি এখান থেকে আমি অলিম্পিক পদকজয়ী তৈরি করব, তখন কেউ হেসেছে। কেউ দ্বিতীয় বার আমার ফোন ধরেনি। তখন চামুণ্ডেশ্বরনাথের মতোই দু’একজন সাইনাকে সাহায্য করেছিল। সাইনার তেরো বছর বয়সে জুনিয়র ইউরোপিয়ান সার্কিটে যাওয়াই হত না যদি না চামুণ্ডি ওকে পঁচিশ হাজার টাকা দিত সেই সময়।”
সচিন গোপী-সাইনাকে, “আমাদের দেশের সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন জুটি’’ অ্যাখ্যা দিলেন। বললেন, “অনেক প্লেয়ার আছে যারা প্র্যাক্টিসে দুর্দান্ত কিন্তু বড় ম্যাচে কিছু করতে পারে না। সাইনা দেখিয়েছে ও দু’টো জায়গাতেই দুর্ধর্ষ। ও দারুণ একজন কোচ পেয়েছে। সে রকমই সুন্দর বাবা-মা পেয়েছে। সাইনার সাফল্যের পিছনে আমি প্রতিজ্ঞা, নিয়মানুবর্তিতা, কঠিন পরিশ্রম, নির্দিষ্ট লক্ষ্য, দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাই। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে ও-ই রোল মডেল।” ওই সাত তারা হোটেলেই ভারতীয় ক্রিকেট টিমের বসবাস এখন। টিমমেটদের কাছে ফেরত যাওয়ার আগে সচিন— দেশের সেরা রোলমডেল যেন তাঁর উত্তরসুরি বেছে দিয়ে গেলেন!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.