চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সি পরো, ভারতীয় দলের টিকিট জিতে নাও!
ভারতীয় ক্রিকেটে এই স্লোগানেরই কি জয়জয়কার চলছে?
দেশের ক্রিকেটমহলে অনেক দিন ধরেই এ রকম একটা ধারণা ঘোরাফেরা করছিল। রবিবার ভিভিএস লক্ষ্মণের বদলি হিসেবে জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী সুব্রহ্মণ্যম বদ্রীনাথকে বেছে নেওয়ার পর আরও প্রকট ভাবে তা ছড়িয়ে পড়েছে। আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যাঁর জন্য গলা ফাটাচ্ছিলেন সেই মনোজ তিওয়ারি শ্রীলঙ্কায় এক দিনের সিরিজে ভাল খেলে আসার পরেও উপেক্ষিতই থেকে গেলেন। হাওয়া খারাপ দেখে পূর্বাঞ্চল নির্বাচক রাজা বেঙ্কট একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কোনও পরিবর্তই নিতে হবে না। চোদ্দো জনের দল তো থাকছেই। তাঁদের মধ্য থেকে কেউ খেলবে। কিন্তু রাজার সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়।
স্বভাবতই খুব হতাশ মনোজ। নির্বাচনের খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে দিলেন অনেকক্ষণ। এক দিনের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করার পরেও ধোনির টিমের কাছ থেকে টানা উপেক্ষা জুটেছে তাঁর। শ্রীলঙ্কায় শেষ সফরে সুযোগ পেয়েই নিজেকে আবার প্রমাণ করলেন। মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, গারদ থেকে বোধ হয় ছাড়া পেলাম। কিন্তু যুক্তি-তক্ক দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দল নির্বাচনকে ব্যাখ্যা করা যে সব সময় সম্ভব নয়!
এ দিনের আনন্দবাজারে লেখা হয়েছিল, পাল্লা বদ্রীনাথের দিকেই ঝুঁকে। কিন্তু ক্রিকেটমহলে লক্ষ্মণের অবসরের মতোই বিস্ময় তৈরি হয়েছে বদ্রীনাথের নির্বাচন নিয়ে। ফেসবুক বা টুইটারে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের আক্রমণের মুখে পড়েছেন নির্বাচকেরাই। কেউ বদ্রীনাথের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। |
কেউ সরাসরি শ্রীকান্তের কমিটিকে এক হাত নিয়ে লিখেছেন, হাস্যকর নির্বাচন! কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলে অনেকে প্রশ্ন না তুলে পারছেন না যে, বোর্ড প্রেসিডেন্টের শহর এবং আইপিএল টিমের সদস্য বলেই কি হালফিলে দারুণ কিছু না করেও দলে ঢুকে পড়লেন বদ্রীনাথ?
শনিবার লক্ষ্মণ অবসর ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় নির্বাচকেরা তাঁর বদলি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেন। দু’এক জন নির্বাচক বিস্মিত ভাবে তখনই আবিষ্কার করেন, বদ্রীনাথকে নিয়ে জোরালো প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ উপেক্ষার পর শ্রীলঙ্কায় এক দিনের সিরিজে ভাল খেলে আসা মনোজ তিওয়ারির নাম বললে এঁদেরকে পাল্টা দু’টি নাম দেওয়া হয়। প্রথমে বলা হয়, টিম ম্যানেজমেন্ট মনোজ নয়, রোহিত শর্মাকে চাইছে। গরিষ্ঠ সংখ্যক নির্বাচকের আপত্তিতে রোহিতের নাম খারিজ হয়ে যায়। মুম্বইয়ের রোহিত বাতিল হয়ে গেলেও চেন্নাইয়ের বদ্রীনাথকে লড়াই থেকে ছিটকে দেওয়া যায়নি। মনোজের পক্ষে থাকা নির্বাচকেরা বলতে থাকেন, বদ্রীনাথকে তো দু’বছর আগে আমরাই খারিজ করে দিয়েছিলাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযুক্ত মানসিকতা নেই বলে। ও রকম ন্যাতানো শরীরী ভাষা দিয়ে যে হবে না, সেটা তো আমরাই বলাবলি করেছিলাম। এখন তা হলে পিছনে হাঁটতে যাব কেন? এর মধ্যে সাংঘাতিক কিছু তো ও করেনি!
কোচ ডানকান ফ্লেচারের বক্তব্য এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মনোজের টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফ্লেচার বলেন, টিম ম্যানেজমেন্ট বদ্রীনাথকে চায়। এক নির্বাচক উত্তেজিত ভাবে তখন ফ্লেচারকে পাল্টা বলেন, টেকনিকের কথাই যখন বলছ, তখন সুরেশ রায়নাকে তোমরা চাইলে কী করে? বাউন্সে তো ওরও সমস্যা আছে।
কিন্তু মনোজের জন্য লড়তে থাকা নির্বাচকেরাও দ্রুত বুঝে যান, কোথাও অদৃশ্য শক্তি আজ বদ্রিনাথের পক্ষে। আর সেটাই সর্বময় শক্তি। আজ ক্রিকেটীয় যুক্তি বা ফর্মের বিচারে নির্বাচন হচ্ছে না। হচ্ছে পর্দার আড়ালে থাকা সেই শক্তির প্রভাবে। তাঁরা-- নির্বাচকেরা আজ নাট্যমঞ্চের কয়েকটা চরিত্র মাত্র! |