নজরদারি বাড়লেও কমেনি গরু পাচার
সীমান্তে সর্বক্ষণ নজরদারি রয়েছে বিএসএফের। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে রয়েছে পুলিশ। আছেন মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা। দু’দেশের মধ্যে অনুপ্রবেশ, পাচার রুখতে রয়েছে প্রচুর চেকপোস্ট। পাচার ও অন্যান্য সমস্যা থেকে সীমান্ত নির্বিঘ্ন রাখতে নিয়মিত বিএসএফ এবং বিবিজি-র মধ্যে চলে ফ্ল্যাগ মিটিং। কিন্তু এত সব সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গরু পাচারে কোনও ভাটা পড়েন। যদিও বিএসএফ এবং পুলিশের যৌথ অভিযানে মাঝেমধ্যেই ধরা পড়ে পাচার হতে থাকা গরু, পাচারকারী। কিন্তু বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় গরু পাচারকারীদের দাপটের কাছে তা একেবারেই অকিঞ্চিৎকর।
পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরু। ছবি: নির্মল বসু।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে গরু পাচারকারীদের দাপট এতটাই আতঙ্ক তৈরি করেছে যে তাঁরা এখন বিএসএফ এবং পুলিশের উপরেও ভরসা করতে পারছেন না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিএসএফের এক নাগাড়ে নজরদারি, পুলিশের অভিযান সত্ত্বেও যে ভাবে পাচারকারীদের হাতে তাঁদের হেনস্থা হতে হচ্ছে, এমনকী অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে তা সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনাতেই প্রমাণ হয়েছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, কয়েক বছর আগেও বিএসএফ জওয়ানদের গুলির ভয়ে তটস্থ থাকত পাচারকারীরা। সেই কারণে দৌরাত্ম্যও কম ছিল। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভাল রাখতে গিয়ে সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালনার উপরে নিষেধাজ্ঞা বহাল হওয়ার পর থেকেই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা। সম্প্রতি স্বরূপনগর সীমান্তে কৈজুড়ি গ্রামে পাচারকারীদের হাতে এক মহিলা-সহ তিনজন জখম হয়েছেন গরু পাচারে বাধা দেওয়ায়। গত কয়েক মাসে কেবলমাত্র স্বরূপনগরে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে এক বিএসএফ জওয়ানও রয়েছেন। এ ছাড় পাচারকারীদের হাতে খুন হয়েছেন এক জওয়ান। একের পর এক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় প্রথমে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল তা এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। এতটাই যে পাচারকারীদের হাত থেকে নিজেদের ধন-প্রাণ রক্ষা করতে অনেকেই হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার পক্ষে। যদিও সীমান্ত পারের বাসিন্দাদের এমন মনোভাবের আঁচ পেয়ে নজরদারিতে বিএসএফ জওয়ানের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের সংখ্যাও। দিন কয়েক আগে কৈজুড়িতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিবিজি) এবং বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক প্রস্থ শান্তি আলোচনা অর্থাৎ ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে দুষ্কৃতীরা যাতে এদেশে ঢুকে না পড়তে পারে সেদিকে নজর রাখবে বিবিজি।
কৈজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান রূপসী মণ্ডল বলেন, “আমরা চাই গ্রামের মানুষ শান্তিতে থাকুক। গরু পাচার বন্ধ হোক। কিন্তু বিএসএফের গুলি চালনার উপরে নিষেধাজ্ঞা বহাল হওয়ার পর থেকেই পাচারকারীদের উপদ্রব ভীষণভাবে বেড়ে গিয়েছে।”
প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, “বসিরহাট মহকুমার প্রায় হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এই বিস্তীর্ণ সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নজরদারি এক কথায় অসম্ভব। তা ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ও বসিরহাট এই দুই মহকুমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে যে গরু পাচার হয় তার বেশিরভাগই আসে ভিন রাজ্য বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে। গঙ্গা পার হয়ে এই সব রাজ্য থেকে গরু এখানে আসে। গঙ্গা পার হওয়ার যে ৪-৫টি সেতু এখানে রয়েছে সেগুলিতে কড়া পাহারা বসালেই গরু আসা বন্ধ করা যাবে। ফলে পাচারও অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে।”
সম্প্রতি জেলার পুলিশ সুপার বসিরহাটে সাংবাদিক বৈঠকে গরু পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কাজ হয়নি তা দেখা গেল সম্প্রতি স্বরূপনগরে গিয়ে। দিনের বেলাতেই পুলিশ, বিএসএফের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরুর পাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.