|
|
|
|
আজ খুশির ঈদ |
বাড়িতে লাচ্ছা-সিমুই, আলোর রোশনাই দুই জেলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া |
প্রতীক্ষার পালা শেষ। আজ খুশির ঈদ। বিশ্বজোড়া আনন্দের শরিক হুগলি ও হাওড়া জেলার আনাচে-কানাচের মানুষও।
ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রমজান মাসে ‘রোজা’ পালন করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। এই এক মাস ভোর সাড়ে ৩টের সময় অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগেই ‘সেহেরি’ (ভোরের খাবার) খেয়ে নিতে হয়। তার পর সারা দিন জলস্পর্শ করা যায় না। পনেরো ঘণ্টা উপবাস করে সূর্যাস্তের পরে সন্ধ্যায় ‘ইফতার’ সারতে হয়।
ইফতারে নানা ধর্মের মানুষ আমন্ত্রিত থাকেন। ইফতারের পরেও বিশেষ ‘তারাবীর’ নমাজ পড়া হয় এই একমাস ধরে। রবিবার পর্যন্ত চলেছে এই পর্ব।
রমজান মাস যতই এগোতে থাকে ততই যেন প্রতীক্ষা বাড়ে ঈদের। রমজান মাসের আগে সাবান মাস। এই সময় থেকেই নতুন জামাকাপড় কিনতে শুরু করেন মানুষ। ঈদের দিন সকাল থেকেই সাজো সাজো রব পড়ে যায় প্রত্যেক মহল্লায়। রবিবার সারাদিন ধরে চলেছে উৎসবের প্রস্তুতি। জাঙ্গিপাড়া থেকে শিয়াখালা, নালিকুল থেকে হরিপাল, চুঁচুড়া থেকে পোলবা, পাণ্ডুয়া থেকে ধনেখালি, রিষড়া থেকে ডানকুনি অথবা আরামবাগ থেকে পুড়শুড়া হুগলির বিভিন্ন জনপদ সেজে উঠেছে।
অন্য দিকে, হাওড়ার বাউড়িয়া থেকে চেঙ্গাইল, উলুবেড়িয়া, বাগনান, সাঁকরাইল, পাঁচলা, ডোমজুড়ের কোলরা, জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাট সর্বত্রই উৎসবের মেজাজে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রায় সর্বত্রই মহল্লায় মহল্লায় কচিকাঁচারা রঙিন তোরণ তৈরি করেছে। তাদের উৎসাহ দিয়েছেন বড়রা। উলুবেড়িয়ার নিমদিঘি, সাঁকরাইলের ধুলাগড়ি, বাগনান সব জায়গাতেই মণ্ডপ শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রাস্তার ধারে দেখা যাচ্ছে বড় বড় তোরণ। সেগুলি সাজানো হয়েছে আলোকমালায়। রবিবার ঈদের আগের দিনকে বলা হয় ‘চাঁদ রাত’। তোরণের আশপাশে চাঁদ রাতে আনন্দে মেতেছে সবাই। প্রতিটি তোরণে মক্কার পবিত্র কাবা মসজিদের মিনারের আদল।
রবিবার সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন মহল্লা ভাসতে শুরু করেছে আলোর রোশনাইতে। আজ, সোমবার সকালে মসজিদে মসজিদে বিশেষ নমাজ পড়া হবে। তার পরে আলিঙ্গন পর্ব। ছোটদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের মানুষ মাতোয়ারা হয়ে উঠবেন আনন্দে।
আয়োজনের খামতি নেই মুসলিম গৃহস্থ বাড়িতে। কিশোরী-তরুণীদের হাতে উঠেছে মেহেন্দির রকমারি সৌন্দর্য। প্রত্যেকের পরনে রকমারি পোশাক। বাড়িতে বাড়িতে লাচ্ছা, সিমুই, মিঠাইয়ের জমজমাট আয়োজন। ভুরিভোজে নিমন্ত্রিত হিন্দু-সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ। মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করলে অথবা মোবাইলের এসএমএসে ভেসে উঠছে ঈদের শুভেচ্ছা। সব মিলিয়ে সৌহার্দের বাতাবরণ হুগলি-হাওড়া জেলা জুড়ে।
ইমাম ও মৌলানারা জানালেন, ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী ‘সামর্থ্যহীন’ মানুষের জন্য ‘ফিতরা’ এবং ‘জাকাত’ নামে দু’ধরনের দানের কথা বলা রয়েছে। সেই অনুযায়ী, এ বারে প্রত্যেক মুসলিম মানুষের জন্য ৩৩ টাকা করে ‘ফিতরা’ ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ, একটি পরিবারে ৫ জন থাকলে ১৬৫ টাকা। এই টাকা এলাকার দরিদ্র মুসলিমদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ‘জাকাত’ দিতে হয় মূলত উচ্চবিত্তদের। এই বিধান অনুযায়ী একটি উচ্চবিত্ত পরিবারকে টাকা এবং ধনসম্পদের হিসেব অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ‘জাকাত’ দিতে হয় গরিব মানুষকে। এই ভাবেই ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদও ভুলিয়ে দেয় পবিত্র ঈদ।
আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দের জোয়ার বইবে মুসলিমদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র ফুরফুরা শরীফ, ইমামবাড়া, বাঁকড়া, উলুবেড়িয়া, বাগনান-সহ দুই জেলার সর্বত্র। |
|
|
|
|
|