এক সঙ্গে প্রায় দু’শো ট্রাক দাঁড়াবার জায়গা, চটজলদি পণ্য পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত জায়গার সুবিধা যুক্ত ওয়্যারহাউজ, একই ছাদের তলায় বহির্বাণিজ্যের বিভিন্ন দফতর চালু করতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি। মাস দু’য়েক আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক ফুলবাড়ি ‘ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন’-এর পরিকাঠামো। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই কাজ করেন। আগামী কাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এসজেডিএ’র তরফে ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনের দায়িত্ব শুল্ক দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবু বলেন, “ফুলবাড়িতে ওই অত্যাধুনিক এলসিএস-এর পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ। মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে তা উদ্বোধনের চেষ্টা হলেও ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যে তিনি এখনও সময় দিতে পারেননি। বরং দেরি না করে উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিজেদের করে নিতে বলেছেন। সেই মতো আগামী ২১অগস্ট শুল্ক দফতরের হাতে এলসিএসের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ বহির্বাণিজ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে এই স্থলবন্দর ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে।” পাশাপাশি এই পথে ভূটান-বাংলাদেশ এবং নেপাল-বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যের প্রভূত সম্ভাবনাও রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরাও ইতিমধ্যেই এই এলাকা দু’বার পরিদর্শন করেছেন। ভবিষ্যতে তাঁরা এখানে আরও উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। কী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এই ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনে? এসজেডিএ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এলসিএসের দোতলা প্রশাসনিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। পণ্য মজুত রাখার গুদাম, ‘ওয়ে ব্রিজ’ রয়েছে। গুদাম না থাকার এত দিন পণ্য রাখার কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। পণ্য এবং নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রশাসনিক ভবনে এবং ওয়্যারহাউসে অত্যাধুনিক এক্স-রে স্ক্যানার এবং ক্লোজড সার্কিট টিভি রাখা হয়েছে। রয়েছে এক সঙ্গে অনেক ট্রাক দাঁড়াবার ব্যবস্থা। প্রায় ১০ একর জায়গার উপর ওই এলসিএসের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। শুল্ক দফতরের উপ অধিকর্তা মহীন্দ্র লামা বলেন, “নতুন পরিকাঠামো গড়ে ওঠায় এই পথে বহির্বাণিজ্যের প্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে।” এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “প্রশাসনিক ভবনে শুল্ক দফতরের অফিস, ক্লিয়ারিং এজেন্টদের বসার জায়গা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। অ্যাসিস্টেন্ট টু স্টেট ফর ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট অব এক্সপোর্ট স্কিম (এসাইড) প্রকল্পে কেন্দ্রের তরফে এই কাজের জন্য মিলেছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। বাকি দু কোটি টাকা খরচ করেছে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ।” পচনশীল পণ্য পাঠানোর সুবিধার কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক হিমঘর তৈরি করার কথাও জানিয়েছেন এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া খাবার জিনিস আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে তার গুণমান পরীক্ষার জন্য গবেষণাগার বা ‘টেস্টিং সেন্টার’ তৈরি করা হবে। ব্যবসায়ীদের একাংশ অবশ্য জানিয়েছেন, বর্তমানে ওই সীমান্ত পথে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ দেশের অনুমোদন রয়েছে। তবে বাংলাদেশের তরফে সমস্ত পণ্য আমদানি-রফতানির অনুমোদন না-থাকায় হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য আনা নেওয়া করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলে আরও পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগ করে দেওয়া জরুরি। শুল্ক দফতরের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। পণ্য আমদানি-রফতানির পাশাপাশি ভবিষ্যতে দুই পারের মানুষের যাতায়াতের জন্য এই সীমান্ত পথ চালু করার জন্যও উদ্যোগী এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। ‘ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট’-এর পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। |