অনেকেই কিছু দেখেননি। অনেককেই সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়নি। অধিকাংশ মানুষই শুধু শুনেছেন, হামলা হতে পারে। আর তাতেই কাজকর্ম গুটিয়ে ট্রেন ধরতে ছুটেছেন তাঁরা।
কেউ ট্রেনের কামরার জানলা আঁকড়ে ঝুলছেন। কেউ বসেছেন কারও কোলের উপরে। কেউ বা শৌচাগারের সামনে কোনও রকমে দাঁড়ানোর জায়গাটুকু করে নিয়েছেন।
শনিবার সকাল থেকে গুয়াহাটিমুখী যে তিনটি বিশেষ ট্রেন হাওড়া স্টেশন থেকে ছেড়েছে, তার প্রত্যেকটি কামরার অবস্থা প্রায় এ রকমই। সরাইঘাট এবং কামরূপ এক্সপ্রেসে জুড়তে হয় অতিরিক্ত কামরা। আবার ১৭০০ যাত্রী নিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে যে দু’টো ট্রেন আজ গুয়াহাটি
পৌঁছল, স্টেশনে থামার পর প্ল্যাটফর্মেই পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
প্রতিদিন এত মানুষ পুণে-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ-চেন্নাই থেকে দলে দলে উত্তর-পূর্বে ফিরছেন, কতটা সত্যিকার হুমকির জেরে আর কতটা স্রেফ গুজবের বশে, সেটাই ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে।
বেঙ্গালুরুতে নিরাপত্তা সংস্থায় সুপারভাইজার ছিলেন গিরীশ ফুকন। তিনি বলেন, “ইন্টারনেটে, মোবাইলে অসমের খবর আর ছবি আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।” রঙ্গিয়া স্টেশনে নেমে বেঙ্গালুরু-ফেরত নিরঞ্জন মুশাহারি স্বীকার করছেন, “আমাকে কেউ ভয় দেখায়নি। আমার পরিচিত কাউকেও ভয় দেখানো হয়নি। কিন্তু গুজবটা ছড়িয়েছে খুব।” রমেন নারজারি লোকমুখে শুনেছেন, উত্তর-পূর্বের মানুষদের ‘দেখে নেওয়া হবে’ বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়ির লোকে ফোন করে তাঁকে ফিরে আসতে বলেছে।
পুণেতে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন দেবান পেগু। গুয়াহাটিগামী বিশেষ ট্রেনের আশায় সপরিবার বসেছিলেন হাওড়া স্টেশনের ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। পুণেতে কোনও গোলমালও নেই। কেউ ভয়ও দেখাননি। তা হলে সকলে মিলে ফিরে যাচ্ছেন কেন?
গুয়াহাটির ধামাদি জেলার বাসিন্দা বললেন, “গ্রামে বাবা-মা আতঙ্কিত। তাঁদের ডাকেই ফিরে যাচ্ছি।” একই যুক্তি দেখিয়েছেন জোরহাট জেলার রাম সেওরা, তেজপুরের রহিন্ত মিতু, ওদালগুড়ির ড্যান্সরং দেমান ও অন্যরা।
বেঙ্গালুরুর একটি নিরাপত্তা কোম্পানির কর্মী উত্তম ছাউরা বলেন, “নানা গুজব রটছে। লোকে বলছে, ২০ তারিখের মধ্যে বেঙ্গালুরু ছাড়তে হবে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে চলে এলাম।”
সরাসরি শাসানি শোনার অভিজ্ঞতাও যে একেবারে নেই, তা নয়। বেঙ্গালুরু থেকে আসা হোটেলকর্মী অর্জুন বসুমাতারি বলেন, “মোটা মার্কেটে বাজার করতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমায় বলা হল, ‘ক’টা দিন পরে দেখে নেব।’ সেই শুনে আর থাকার ভরসা পাইনি।” চেন্নাই থেকে আসা জি বসুমাতারি হুমকি এসএমএস পেয়ে প্রেমিকাকে সঙ্গে করে পালিয়ে এসেছেন।
এই ভাবেই বিশেষ ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে যাঁরা এ দিন হাওড়া বা গুয়াহাটি পৌঁছলেন, তাঁরা তো রওনা হয়েছিলেন আগেই। চেন্নাই এবং পুণে থেকে এ দিনও নতুন করে রওনা হওয়ার বিরাম ছিল না। তুলনায় এ দিন কম লোক ওঠেন বেঙ্গালুরু থেকে। বেঙ্গালুরুর রেল কর্তারা এ কথা জানিয়ে বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য প্রশাসনের আশ্বাসে সাড়া দিয়েই এ দিন কম লোক শহর ছেড়েছেন। কিন্তু দক্ষিণের অন্য শহরে আতঙ্ক আর গুজবের রাজত্বে চিড় ধরেনি এখনও। |