দশ দিন ধরে তাঁর খোঁজে পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া আর হরিয়ানার নানা প্রান্তে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। অবশেষে রাতভর নাটকের পরে আজ রাজধানীর অশোক বিহার থানায় আত্মসমর্পণ করলেন হরিয়ানার প্রাক্তন মন্ত্রী গোপাল কাণ্ডা। কাণ্ডার বিরুদ্ধে তাঁর সংস্থার প্রাক্তন কর্মী গীতিকা শর্মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।
৮ অগস্টের পরে কাণ্ডার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য পরোয়ানা জারি করেছিল দায়রা আদালত। আগাম জামিনের আর্জিও খারিজ করে দেয় দায়রা আদালত ও দিল্লি হাইকোর্ট। তার পরে কাণ্ডার আত্মসমর্পণ প্রত্যাশিতই ছিল। তবে ঠিক কোন সময়ে তিনি আত্মসমর্পণ করবেন তা নিয়ে অন্ধকারেই
ছিল পুলিশ।
গত কাল গভীর রাতে অশোক বিহার থানায় প্রথমে আসেন কাণ্ডার ভাই গোবিন্দ। তিনি পুলিশকে জানান, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাণ্ডা আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু, কাণ্ডাকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করার অভিযোগে গোবিন্দকেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাত পৌনে একটা নাগাদ আসরে নামেন কাণ্ডার আইনজীবী। অশোক বিহার থানায় এসে তিনি বলেন, দশ মিনিটের মধ্যেই কাণ্ডা আসছেন। |
আদালতের পথে গোপাল কাণ্ডা। ছবি: পি টি আই |
উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেফতারির জন্য প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু, পুলিশকে ফের ধোঁকা দিয়ে ‘প্রেস’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে থানায় আসেন কাণ্ডা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। কাণ্ডার বক্তব্য, তদন্তে সাহায্য করতে স্বেচ্ছায় থানায় এসেছেন তিনি। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পি করুণাকরন জানান, “কাণ্ডাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রাক্তন মন্ত্রীর সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সুইসাইড নোটে গীতিকা কাণ্ডা ও তাঁর সহযোগী অরুণা চাড্ডার নামে অভিযোগ করেছিলেন। অরুণাকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এক সময়ে কাণ্ডার বিমানসংস্থায় বিমানসেবিকা ছিলেন গীতিকা। ওই বিমানসংস্থা বন্ধ হওয়ার পরে প্রাক্তন মন্ত্রীর অন্য একটি সংস্থায় উচ্চ পদে ছিলেন তিনি। কাণ্ডার সঙ্গে গীতিকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জামিনের আর্জিতে কাণ্ডা বলেছিলেন, গীতিকা তাঁকে একই সঙ্গে ভালবাসতেন ও ঘৃণা করতেন।
কাণ্ডাকে হরিয়ানা সরকার সাহায্য করছে বলে অভিযোগ গীতিকার ভাই অঙ্কিতের। তাঁর বক্তব্য, কাণ্ডার গতিবিধির কথা পুলিশ জানত। পুরোটাই সাজানো নাটক। মোট ১২ দিন হাতে পেয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। সমস্ত প্রভাব খাটিয়ে প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করেছেন তিনি। অঙ্কিতের আশঙ্কা, তদন্তও স্বচ্ছ না হতে পারে। কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির উপস্থিতিতে কাণ্ডার জবানবন্দি নেওয়ার দাবি করেছেন তিনি।
অঙ্কিতের আরও অভিযোগ, গীতিকার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পরেও ওই অ্যাকাউন্ট খোলা ছিল। পরিবারের কেউ গীতিকার পাসওয়ার্ড জানতেন বলে দাবি করেছেন অঙ্কিত। পুলিশ সূত্রে খবর, সংস্থার অনেক কর্মীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অরুণা চাড্ডা জানতেন বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।
অরুণা অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সাইবার ক্রাইম সেলের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |