প্রণবকে সমর্থন বিতর্কে বিক্ষুব্ধদের পাশেই অশোক
লের মধ্যে প্রশ্নটাকে ধামাচাপা দিতে পেরেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন নিয়ে বাম শিবিরের মধ্যে বারেবারে যে অসন্তোষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, তাকে চাপা দিতে পারছেন না তাঁরা। এ বার প্রবীণ বামপন্থী অশোক মিত্রও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অস্বস্তি বাড়ালেন প্রকাশ কারাটদের। প্রণবকে সমর্থনের প্রতিবাদ জানিয়ে দল থেকে বিতাড়িত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের চিঠি লিখে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে একটি ইংরেজি পত্রিকায় লেখা নিবন্ধে দলের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন অশোকবাবু।
মাত্র দু’দিন আগেই কলকাতায় সিপিএমের অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সীতারাম ইয়েচুরি-বিমান বসুর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল অশোক মিত্রকে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্কে এই তিন পলিটব্যুরো সদস্যই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভোট দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। সিপিএমের ওই অনুষ্ঠানে বুদ্ধ-বিমান-ইয়েচুরিদের সঙ্গে এক মঞ্চে হাজির হলেও তিনি যে এ ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে একমত নন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন অশোকবাবু। এ বারে প্রয়াত লক্ষ্মী সহগলের স্মৃতিচারণে লেখা নিবন্ধেও তিনি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, অধিকাংশ দল সমর্থন করছে, এই যুক্তিতে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করার প্রয়োজন কেন পড়ল? কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করার পরেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নামার ভাবনাই বা কতটা বিশ্বাসযোগ্য হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই প্রবীণ বামপন্থী।
তাঁর আক্ষেপ, “যে দলের প্রতি লক্ষ্মী সহগল আমৃত্যু বিশ্বস্ত ছিলেন, সেই দলই করুণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”
অতীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এ পি জে আব্দুল কালামের বিরুদ্ধে এই লক্ষী সহগলকেই প্রার্থী করেছিল সিপিএম। সে বারও কালামের পক্ষে প্রায় সব দলের সমর্থন ছিল। হার নিশ্চিত জেনেও প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরির কথায় সে বার নির্বাচনে লড়তে সম্মত হয়েছিলেন সহগল। তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়েই অশোকবাবু যে ভাবে এ বারের ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাতে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে সিপিএম নেতৃত্ব। অশোকবাবু লিখেছেন, ‘মতাদর্শ-নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও কাজ দেশপ্রেমের সঙ্গে খাপ খায় না, এ কথা লক্ষ্মী সহগল তাঁর দলকে বোঝাতে পারেননি। এটাই হয়তো তাঁর জীবনের অন্যতম হতাশা হয়ে থাকবে।” অশোকবাবুর বক্তব্যেই স্পষ্ট, মতাদর্শগত প্রশ্নে তিনি সিপিএম শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে কোনও ভাবেই একমত নন।
যে মতাদর্শগত প্রশ্নে প্রণবকে সমর্থনের বিরোধিতা করেছেন অশোকবাবু, সেই একই যুক্তিতে পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তর প্রতিবাদ করেছিলেন কারাট-ঘনিষ্ঠ নেতা প্রসেনজিৎ বসু। যার ফলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সিপিআই, আরএসপি-র মতো অন্য বাম দলগুলির মধ্যেও প্রণবকে সমর্থন নিয়ে আপত্তি ছিল। ওই সব বাম দলের নেতারা এখন প্রসেনজিতের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রসেনজিতের সঙ্গে কলকাতায় কথা হয়েছে অশোকবাবুরও। প্রসেনজিতের মতোই জেএনইউ-র এসএফআই নেতারাও দল ছেড়েছিলেন একই প্রশ্ন তুলে। আজ কলকাতা থেকে তাঁদের চিঠি লিখে অশোকবাবু মতাদর্শগত প্রশ্নে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, প্রবীণরা ভুল করলে নবীনদেরই দায়িত্ব নিতে হয় সংশোধনের। প্রবীণ এই বামপন্থী লিখেছেন, ‘তোমরা যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকো, যে মতাদর্শ রক্ষায় লড়াই করছ এবং যত দূর প্রয়োজন যেতে রাজি, তা হলে এগিয়ে যাও। ইতিহাসে বারেবারেই দেখা গিয়েছে, প্রবীণরা কোনও আন্দোলনে ভুল করে থাকলে নবীনরা তার সংশোধন করেছেন’। যাঁদের উদ্দেশে অশোকবাবুর এই লেখা, সেই বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা সিপিএমের ছাত্র সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হলেও নিজেদের জেএনইউ-এসএফআই বলেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন। এই ছাত্র নেতাদের অশোকবাবুর পরামর্শ, ‘গত কাল পর্যন্ত যাঁরা তোমাদের ঘনিষ্ঠ কমরেড ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে সর্বশক্তি দিয়ে তর্ক করো, কিন্তু তিক্ততার মধ্যে যেও না। পাকাপাকি সম্পর্ক ছেদ হলেও তা যেন তোমাদের দিক থেকে না হয়।’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.