নাগরিকত্বহীন জীবন যাপন কতটা কষ্টের সেটা সংবাদ শুনেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে ইন্টারনেট, প্রবন্ধের সূত্রে জানতে পারেন, গোটা বিশ্বের চোখের আড়ালে প্রায় ছয় দশক ধরে কেমন কষ্টকর দিন কাটাচ্ছেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহলের বাসিন্দারা। বিশ্বের কাছে নিজেদের সমস্যা যাতে ছিটমহলের বাসিন্দারাই কেউ তুলে ধরতে পারেন সেজন্য উদ্যোগী হয়েছেন জার্মানির হামবূর্গ শহরের বাসিন্দা গ্র্যাব্রিয়েলা কোরজেনিক। এই ব্যাপারে ছিটমহলের কোনও কিশোরীকে নিজের কাছে রেখে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান তিনি। জার্মান মহিলার ওই আগ্রহের কথা জেনে আলোড়ন পড়েছে কোচবিহারে। বেসরকারি সংস্থার হিসাব রক্ষক গ্র্যাব্রিয়েলা ই-মেল ও মোবাইল মারফত ওই আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি যোগাযোগ করেছেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমণ্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্তের সঙ্গে। ওই কমিটি সূত্রের খবর, জার্মানির বাসিন্দা ওই মহিলার প্রস্তাবের কথা কোচবিহার জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আইনি জটিলতা এড়িয়ে কীভাবে ওই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করা যায় তা নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের পরামর্শ নিয়েই এগোতে চাইছেন তাঁরা। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমণ্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক বলেন, “মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ওই জার্মান মহিলা নাগরিক নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে জানিয়ে ইমেল পাঠান। যেহেতু বিদেশ থেকে ওই প্রস্তাব এসেছে সেজন্য সরকার তথা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া আমরা সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। তা ছাড়া কিছু আইনি জটিলতাও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রশাসনের পরামর্শ ছাড়া এগোতে চাইছি না। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ছিটমহল কমিটি বিষয়টি জানিয়েছে। তবে জার্মানির ওই মহিলা সরাসরি যোগাযোগ করলে স্বরাষ্ট্র দফতরে বিষয়টি জানিয়ে দেব।” ছিটমহল বিনিময় সমণ্বয় কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গ্র্যাবিয়েলা কোরজেনিকের জন্ম পোল্যান্ডে। কর্মসূত্রেই তিনি জার্মানিতে যান। প্রায় ২০ বছর ধরে হামবূর্গে আছেন। জার্মানির নাগরিকত্বও পেয়েছেন। রেডিও নেদারল্যান্ডের বিশ্বসংবাদে প্রথম ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল সমস্যার কথা শোনেন। পরে জার্মানির বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছিটমহল নিয়ে প্রবন্ধ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহু তথ্য জেনেছেন। তারপরেই ছিটমহল ঘুরে যাওয়া এক ডাচ সাংবাদিকের কাছ থেকে কমিটির সহকারী সম্পাদকের ইমেল আইডি নেন। সেই সূত্রেই গড়ে ওঠে যোগাযোগ। ছিটমহল বিনিময় সমণ্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক বলেন, “ছিটমহলের সমস্যা যাতে গোটা বিশ্বের সামনে সেখানকার কোনও ভুক্তভোগী তুলে ধরতে পারেন সেই জন্যই গ্র্যাব্রিয়েলা সেখানকার এক কিশোরীকে ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান বলে ইমেলে জানিয়েছেন। এ জন্য বছরে ৪০০ ইউরো চার কিস্তিতে দিতে আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন তিনি। আমরা প্রাথমিক ভাবে বাছাইয়ের কাজ শুরুও করেছি। তবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি পেলেই ওই ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” |