কাল জল বন্ধের আশঙ্কা ৬ জেলায়
দুপুর থেকে একটানা ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সবচেয়ে সমস্যা হয় সরকারি হাসাপাতালে। অনেক জায়গায় জেনারেটর একটানা চালানো সম্ভব হয়নি। সে জন্য রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। বেশ কয়েকটি হাসপাতালে গরমের কারণে স্যালাইন হাতে নিয়ে রোগীদের বাইরে বসে থাকতে দেখা যায়। ভোগান্তি হচ্ছে পানীয় জল সরবরাহ নিয়েও। বিদ্যুৎ না-থাকায় বালুরঘাট, মালদহ, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে জল সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পরেও সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে, আজ, বুধবার বিদ্যুতের অভাবে শহর ও গ্রামের বহু জলাধারে জল তোলা যাবে না। সে জন্য পানীয় জলের তীব্র সঙ্কটের আশঙ্ক করছে পুরসভা-পঞ্চায়েত ও প্রশাসন। শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে অবশ্য কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে আগাম মাইকে জল সবরাহ বন্ধ থাকতে পারে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগম লিমিটেডের উত্তরবঙ্গের জোনাল ম্যানেজার অশোক সিংহ বলেন, “দুপুর ২টা নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। উত্তরবঙ্গে ‘পিক আওয়ার’ অর্থাৎ সন্ধ্যের সময়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। গ্রিড ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।” সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ শিলিগুড়ির বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। জোনাল ম্যানেজার বলেন, “কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা গিয়েছে। ধাপে ধাপে পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।” শিলিগুড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে পুর এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ ব্যহত হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন মেয়র গঙ্গোত্রেী দত্ত। মেয়র বলেন, “বিদ্যুৎ না থাকায় ফুলবাড়ি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে জল শোধন এবং তা পাইপের মাধ্যমে ওয়ার্ডে পাঠানোর কাজ ব্যহত হয়েছে।” সন্ধ্যা ৬টার পর কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ এলেও অধিকাংশ জায়গায় লোভল্টেজের সমস্যা দেখা দেয়। পাম্পে জল তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শিলিগুড়ি হাসপাতালে জেনারেটর চালিয়ে সমস্ত পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়। তবে অনেক ওয়ার্ডে সমস্ত আলো, পাখা চলেনি বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন। বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য নিজেই একাধিক হাসপাতালে যান। বিধায়ক বলেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য কাজকর্ম সমস্তই চলেছে। জেনারেটর চালাতে পর্যাপ্ত তেল মজুত রাখার জন্য বলা হয়েছে।” বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, সদ্যোজাত শিশুদের চিকিৎসা ইউনিট এসএনসিইউ বাদে বাকি ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এবং জেনারেটর বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বালুরঘাট পুরসভা পরিচালিত মাতৃসদনে বিকাল ৫টা নাগাদ জেনারেটর বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সদ্য অস্ত্রপচার করা দুই প্রসূতি এবং ৬ জন রোগীরা সমস্যায় পড়েন। এ দিন বিকাল থেকে পেট্রোল পাম্পগুলিতে তেল কেনার ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে। বিপর্যয়ের জেরে বিএসএনএলের পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বালুরঘাটে বিএসএনএলের মহকুমা টেলিফোন আধিকারিক নীতীন সরকার জানান, বালুরঘাট এক্সচেঞ্জ এবং মাইক্রোওয়েভ স্টেশন জেনারেটরের মাধ্যমে চালু রাখা সম্ভব হবে। তবে শহরের ১০টি টাওয়ার রাত ১১ টা পর্যন্ত চালু রাখা যাবে। আজ, বুধবার ভোর থেকে ফের পরিষেবা স্বাভাবিক হবে। এদিন বিকেলে ১০০ লিটার ডিজেল কিনে পতিরাম, গঙ্গারামপুর এক্সচেঞ্জ জেনারেটর দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। বালুরঘাট পুরসভা এলাকায় পিএইচই-র মাধ্যমে রাস্তার ট্যাপে জল সরবরাহ এ দিন দুপুরের পর থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিং চলায় দুপুর তিনটা নাগাদ বিকল হয়ে পড়ে জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরের জেনারেটর। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “হাসপাতালগুলির উপর নজর রাখা হয়েছে। তবে বড় ধরনের কোনও সমস্যা হয়নি। শহরের পানীয় জল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোডশেডিং-র জেরে এদিন দুপুর থেকে উত্তর দিনাজপুর রায়গঞ্জ রেলস্টেশনের টিকিট বুকিং-এর লিঙ্ক ফেল হয়ে যায়। এতে বহু বাসিন্দা আর টিকিট কাটতে পারেননি। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের দুটি জেনারেটর দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড, জরুরি বিভাগ, ব্লাড ব্যাঙ্ক ও অপারেশন থিয়েটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ চলছে। তবে কম আলো রয়েছে হাসপাতালে। পাখা ঘোরেনি। গরমে বিপাকে পড়েন রোগীরা। এ দিন সকাল কোচবিহার জেলা সদর হাসপাতালে বর্হিবিভাগে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অন্যান্য বিভাগে জেনারেটর দিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়। তবে টানা এই পরিস্থিতি চললে হাসপাতালের অপারেশন থিয়াটারে সমস্যা হবে বলে সুপার রঞ্জিৎ মণ্ডল জানিয়েছেন। কোচবিহার স্টেশনে মোমবাতি দিয়ে কাজ করেন কর্মীরা। কোচবিহার জেনকিন্স স্কুল টিফিনের পর ছুটি দেওয়া হয়। জেলার বহু এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। দুপুরের পর ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদহ পুরসভা এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেলের সংরক্ষিত টিকিট পরিষেবা ও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আপাতাত চালু থাকলেও কতক্ষন তা টিঁকে থাকবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফের চলে যায়।

দুর্ভোগ
বিভ্রাটের খবর পেয়েই উদ্বিগ্ন বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। হাজির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শিলিগুড়ি হাসপাতালে। জেনারেটর ব্যবস্থার সাহায্যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে দেখে পর্যাপ্ত ডিজেল মজুত রাখার পরামর্শ দেন তিনি। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে ফোন করে পানীয় জলের পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা জানিয়ে ‘মাইকিং’ করতে বাসিন্দাদের জানাতে অনুরোধ করেন।
দুপুর ১টার পর থেকেই ঘন ঘন ফোন। উত্তর দিতে গিয়ে নাজেহাল রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ বণ্টন বিভাগের দুই মাইল শাখার কর্মীরা। তার চেয়ে বিপদগ্রস্ত মনে হচ্ছিল জোনাল ম্যানেজার অশোক সিংহকে। পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি নিজেই বিপাকে। দফতরের পদস্থ কর্তাদের কাউকেই ফোনে পাচ্ছেন না। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ শহরের কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলে স্বস্তি পান কর্মীরা।
বিদ্যুৎ না-থাকায় জেনারেটর চলছিল। হঠাৎ তা বিকল হয়ে গেল। জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের দফতরে। ঘেমেনেয়ে অপিসার-কর্মীরা বার হলেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল বাতানুকূল যন্ত্রগুলো থাকায় জেনারেটর অচল হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে জেলাশাসকের নির্দেসে বাতানুকূল যন্ত্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হল। আর পাঁচজনের মতো শুধু সিলিং ফ্যানেই ঠাণ্ডা হল ডিএম অফিস।
দুপুরে জানা গেল, কখন সরবরাহ স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেল কিনতে ছোটাছুটি পড়ল হাসপাতালে। বালুরঘাট, শিলিগুড়ি, মালদহ কোচবিহারএকই দৃশ্য। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বললেন, “আগামী দিনে আগে থেকে ডিজেল কেনার জন্য সকলকে বলা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.