সরকারি ভাবে ৪০০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও চিকিৎসক ও পরিকাঠামোর অভাবে ২২৫ জনের বেশি রোগীকে ভর্তি রেখে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। বেডের অভাবে প্রতিদিনই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গড়ে প্রায় ৭৫ জন অতিরিক্ত রোগীকে মেঝেতে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা করতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সমস্যার কথা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের লিখিতভাবে জানিয়ে শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগ করা-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নের আর্জি জানানো হয়েছে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে ৪০০শয্যার অনুমোদন থাকলেও রয়েছে ২২৫টি চিকিৎসক ও ভবনের অভাবে বাকি ১৭৫টি শয্যা চালু করা যাচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত রোগীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মেঝেতে শুইয়ে রেখেই কোনও রকমে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজ চলছে। |
পরিকাঠামো নেই রায়গঞ্জ হাসপাতালে। ছবি তুলেছেন তরুণ দেবনাথ। |
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিষেবা দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছেন। তবে ভর্তি থাকা রোগীদের যাতে চিকিৎসায় গাফিলতি না হয় সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ করে একটি নতুন ভবন তৈরির আর্জি জানানো হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে মোট চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ৪৬। বর্তমানে ৪২ জন চিকিৎসক থাকলেও ৪০০ শয্যার পরিষেবা চালু করতে হলে আরও অন্তত ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জানানো হয়েছে। রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যাণ তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “পরিকাঠামোর অভাবে বহু রোগীকে মেঝেতে শুইয়ে পরিষেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালের সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা করছে।” ১৯৯২ সালে উত্তর দিনাজপুর জেলা গঠন হওয়ার পর ২০০ শয্যার রায়গঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল ৩০০ শয্যার জেলা হাসপাতালে উন্নীত হয়। কয়েক বছর আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালে ৪০০ শয্যা অনুমোদন করে। কিন্তু চিকিৎসক ও ভবনের অভাবে প্রথম থেকেই হাসপাতালে ২২৫টির বেশি শয্যা চালু করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু উত্তর দিনাজপুরই নয় সংলগ্ন দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ ও বিহারের বহু রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন রোগীকে রেখে পরিষেবা দেওয়া হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকার বহু বাসিন্দা প্রতিদিনই জ্বর ও পেটের রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই গড়ে ৩০০ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বেডের অভাবে প্রতিদিনই অতিরিক্ত প্রায় ৭৫ জন রোগীকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন এবং সার্জিকাল ওয়ার্ডে বহু রোগীকে মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজ চালাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শুধু তাই নয়, প্রসূতি ও শিশুবিভাগে একই বেডে দুজন করে রোগীকে ভর্তি রেখেও পরিষেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। করণদিঘির বাসিন্দা অনুপ সিংহ বলেন, “আমার এক আত্মীয় পেটের সমস্যা নিয়ে গত তিন দিন ধরে হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি। বেড না থাকায় তাঁকে মেঝেতে শুইয়েই চিকিৎসা করা হচ্ছে। এটা জেলা হাসপাতাল না স্বাস্থ্যকেন্দ্র তা বুঝতে পারছি না।” হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র পাল বলেন, “রোগীরা মেঝেতে শুয়ে থাকলে তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা-সহ ওষুধ, স্যালাইন ও অক্সিজেন দেওয়ার কাজে সমস্যা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” |