বাঁকড়া-কাণ্ড
আইডি-তে মৃত ২ শিশু, বিষক্রিয়ার উৎস অজানা
দু’টি শিশুর মৃত্যু এবং সাড়ে চারশোরও বেশি মানুষের অসুস্থতার পরেও উত্তর দমদম পুরসভা এলাকার বাঁকড়ায় খাদ্যে বিষক্রিয়ার উৎস অজানাই থেকে গেল। খোলা জায়গায় রান্না হয়েছিল, সেই তথ্যটুকু পাওয়া গেলেও খাবারের কোনও নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি। ফলে তা পরীক্ষা করে তথ্য জানারও কোনও সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এলাকায় দফায় দফায় ঘোষণা এবং হ্যালোজেন ট্যাবলেট বিলি ছাড়া মঙ্গলবার কার্যত আর কিছু করার ছিল না স্বাস্থ্য দফতরের।
স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ দিন জানান, যে বাড়িতে রান্না হয়েছিল, তার প্রত্যেক বাসিন্দাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ফলে তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা যায়নি। এ দিকে, রান্না হয়েছিল রবিবার সন্ধ্যায়। তার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে অসুস্থতার খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে খাবারের কোনও নমুনাও মেলেনি। সমস্ত বাসনও ততক্ষণে ধোয়া হয়ে গিয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, “জল থেকে বিষক্রিয়া হয়নি, এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। জল থেকে ছড়ালে এলাকায় কেউই সুস্থ থাকতেন না। আমাদের অনুমান, ঘুগনি ও কাটা ফল থেকেই বিষক্রিয়া হয়েছে। কাটা ফল না খাওয়া এবং জল ফুটিয়ে খাওয়ার ব্যাপারে ঘোষণা চলছে। সঙ্গে হ্যালোজেন ট্যাবলেটও বিলি হচ্ছে।”
এ দিকে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনায় মারা গিয়েছে আসমা খাতুন (৪) ও তনজির মোল্লা (৯) নামে দুই শিশু। আরও চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ দিন সকালে বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে ভর্তি হন আরও ১০ জন। তবে দুপুরের পরে বেশ কয়েক জনকে ছেড়েও দেওয়া হয়।
বাঁকড়ায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
সকাল থেকেই হাসপাতালে ছিল উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজনের ভিড়। মৃত দুই শিশুর পরিবারের লোকেরা দেহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সময় মতো স্যালাইন না দেওয়ার জেরেই অনেকের অবস্থা খারাপ হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা সাধ্য মতো ব্যবস্থা করছেন। ৬৬০ শয্যার হাসপাতালে অতিরিক্ত আরও সাড়ে চারশো রোগী ভর্তির মতো পরিকাঠামো তাঁদের ছিল না। তাই গোড়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। অন্য হাসপাতাল থেকে সরঞ্জাম এবং চিকিৎসক এনে সমস্যা মেটানো হয়।
এ দিকে, এ দিন সকাল থেকেই জেলা ও পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা বাঁকড়ায় প্রয়োজনীয় ওষুধ জোগান দেন। পুরসভা ও জেলার স্বাস্থ্য দফতর থেকে দু’টি পৃথক শিবির করা হয়। দুপুর দু’টো নাগাদ এলাকা পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবী। চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “জেলার সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তার অধীনে একটি দল সকাল থেকেই কাজ করছে। ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছে। ওআরএস এবং হ্যালোজেন ট্যাবলেট বিলি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। নতুন করে ভর্তি হওয়ার কোনও খবর নেই।”
উত্তর ২৪ পরগনার স্বাস্থ্য দফতরের সহ-অধিকর্তা বিমলকৃষ্ণ পাল জানিয়েছেন, বাঁকড়া এলাকার যে বাড়িতে রান্না হয়েছিল, সেখানকার বাসিন্দারা সুস্থ হলে তাঁদের বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সাবধানতার জন্য এলাকার জলের নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে থেমে নেই রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। চন্দ্রিমাদেবী সিপিএম-পরিচালিত উত্তর দমদম পুরসভার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঘটনাটি জানার পরে পুরসভার কর্মীরা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দেরিতে উদ্যোগী হন।” অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল চক্রবর্তী বলেন, “ঘটনাটি জানাজানি হতেই আমরা পাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাই। সোমবার রাতে গাড়ি করে অসুস্থদের পাঠানোর ব্যবস্থা আমরাই করেছি। তার পরেও এমন অভিযোগ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
অসুস্থদের দেখতে এ দিন আইডি হাসপাতালে যান বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। পরে তিনি বলেন, “হাসপাতাল পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে। ৩৭৭ জন এখন ভর্তি আছেন। তাঁরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন, আশা করি।”
প্রসঙ্গত, গত প্রায় এক মাস ধরেই পর্যাপ্ত স্যালাইনের অভাব ছিল বেলেঘাটা আইডি-তে। ভাঁড়ারে ছিল মাত্র হাজারখানেক স্যালাইন। বাইরে থেকে স্যালাইন কেনানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছেন অনেক রোগীর আত্মীয়। ঠিক তখনই বাঁকড়ার এই ঘটনা ঘটায় স্যালাইনের অভাবের বিষয়টি সামনে চলে আসে। জরুরি পরিস্থিতি সামলাতে এখন কলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে আইডি-তে স্যালাইন আনা হচ্ছে। হাসপাতালের টাকায় দোকান থেকেও কেনা হচ্ছে স্যালাইন। কেন এই আকাল? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই বছর থেকেই প্রথম ডিস্ট্রিবিউটরদের বদলে সরাসরি নির্মাতাদের থেকে স্যালাইন ও ওষুধ কেনা হচ্ছে। এই সংস্থাগুলির অধিকাংশই ভিন্ রাজ্যের। বরাত দেওয়ার পরে তাদের সরবরাহ করতে ৪০-৪৫ দিন লেগে যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.