শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় দুটি নতুন থানা তৈরির প্রস্তাব দিল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, লোকসংখ্যা, দূরত্ব ও আয়তনের নিরিখে যথাক্রমে সুভাষপল্লি-রবীন্দ্রনগর এবং ঘোঘোমালি-শান্তিনগরে দুটি থানা হওয়া দরকার। জেলা বামফ্রন্টের তরফে সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “শিলিগুড়িতে পুলিশ কমিশনারেট তৈরির জন্য রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুবই ভাল কথা। কিন্তু যে এলাকাগুলিকে নিয়ে কমিশনারেট তৈরি হচ্ছে, তাতে আমাদের কিছু প্রস্তাব রয়েছে। শহরের বাড়তে থাকা পরিধির কথা মাথায় রেখে অন্তত নতুন দুটি থানা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের প্রস্তাবে সেগুলি সবই উল্লেখ করা হয়েছে।” বামফ্রন্টের বক্তব্য, শিলিগুড়ি থানার আওতায় থাকা সুভাষপল্লি-রবীন্দ্রনগরের দূরত্ব থানা থেকেই অনেকটাই দূরে। একই অবস্থা ভক্তিনগর থানা থেকে শান্তিনগর-ঘোঘোমালি এলাকার। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বা অন্য কোনও ঘটনা ঘটলে থানা থেকে পুলিশ কর্মীদের পৌঁছাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে। দুটি এলাকায় শিলিগুড়ি পুরসভার মধ্যে রয়েছে। সেই সঙ্গে লোক সংখ্যা বাড়তে থাকায় দ্রুত থানা দুটি তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে ফ্রন্টের নেতাদের মত। সম্প্রতি বামফ্রন্টের সভায় এই বিষয়গুলি নিয়ে বিশদে আলোচনার পর রাজ্য পুলিশের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি ঠিক হয়। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিলিগুড়ি, প্রধাননগর, মাটিগাড়া, বাগডোগরা এবং ভক্তিনগর থানাকে নিয়েই নতুন কমিশনারেটের কাজ শুরু হবে। দার্জিলিং মোড় লাগোয়া মাল্লাগুড়ি পুলিশ লাইনে নতুন পুলিশ কমিশনারের দফতর তৈরি হচ্ছে। ওই পদে দার্জিলিং রেঞ্জের ডিআইজি আনন্দ কুমারকে রাজ্য সরকার বসাতে চলেছে। আগামী মাসের শুরুতেই শিলিগুড়ি এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনারেটের উদ্বোধন করবেন। তবে শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়ি থানাকে কমিশনারেটের বাইরে রাখা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-নেপাল সীমান্তের এই থানাগুলির গুরুত্ব বিচার করে নতুন কমিশনারেটে থানাগুলি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছে বামফ্রন্ট। ফ্রন্টের নেতারা জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের পর দার্জিলিঙের জেলা পুলিশ সুপার পাহাড় নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে থাকবেন। আর শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার নতুন কমিশনারেট এলাকার থানাগুলি নিয়ে। এতে ওই তিনটি সীমান্তবর্তী থাকার দেখভাল পুলিশের উপর মহল থেকে খুব একটা হবে না বলে আশঙ্কা। এতে আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যাও হতে পারে বলে ওই নেতাদের আশঙ্কা। তাই শিলিগুড়ি মহকুমার সবকটি এবং ভক্তিনগর থানাকে নিয়েই কমিশনারেট তৈরি করা দরকার।
পাশাপাশি, শিলিগুড়ি মহকুমার চারটি ফাঁড়িকে থানায় পরিণত করার প্রস্তাবও রাজ্য পুলিশকে জানিয়েছে ফ্রন্ট। এর মধ্যে খালপাড়া, সেবকরোড, বিধাননগর এবং এনজেপি ফাঁড়ি রয়েছে। জেলার সিপিএমের কয়েকজন নেতা জানান, এরমধ্যে খালপাড়া ফাঁড়ির আওতয়ার উত্তর পূর্বভারতের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নয়াবাজার রয়েছে। গত এক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী অপহরণ, খুন, ডাকাতির ঘটনা ওই এলাকায় ঘটেছে। সেই ভাবে হিলকার্ট রোড, বিধানরোডের ব্যবসায়িক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সেবক রোড বা পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়িকে থানা করাটা প্রয়োজন। কারণ, ওই এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলে গাড়ি, পুলিশ কর্মী মত পরিকাঠামো কম থাকায় সমস্যা বারেবারে উঠে আসে। একই ভাবে এনজেপি এবং ফুলবাড়ি এলাকায় এনজেপি স্টেশন, আইওসি টার্মিনাল, ফুলবাড়ি বাণিজ্য পথে রয়েছে। সেখানে পুরোদস্তুর থানা তৈরি করাটা প্রয়োজন। একই সঙ্গে শিলিগুড়ি লাগোয়া সুকনা, গাড়িধূরা এবং পানিঘাটা ফাঁড়িকেও থানায় রূপান্তর করার দাবি বামফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছে। |