শহরে অবৈধ নির্মাণ এবং রাস্তাঘাটের বেহাল পরিস্থিতির কথা তুলে পুর কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম নিয়ে সরব হলেন বিরোধী বামেরা। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে তা সামাল দিতে বেগ পেতে হয় শাসক গোষ্ঠীকে। অনিয়মের অভিযোগের পর ১১টি ভবনের নকশা অনুমোদন করা নিয়ে চাপের মুখে সেগুলির বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও এ দিন জানিয়ে দেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। মেয়র বলেন, “নকশাগুলি অনুমোদন করা হলেও তা সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারীদের দেওয়া হয়নি। এতগুলি ভবনের নকশা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে যত কঠিন সিদ্ধান্তই হোক কার্যকর করা হবে। অবৈধ কিছু কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। জরিমানা বা অবৈধ নির্মাণ ভাঙা, নিয়ম মতো যা করা উচিত সেটাই করা হবে।” ওই ১১ টি ভবনের নকশা অনুমোদনের আগেই কাজ শুরু করায় গত মে মাসের মাসিক সভায় প্রশ্ন তোলেন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা। কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক প্রশ্ন তোলেন তাঁর ওয়ার্ডে একটি ভবনের নির্মাণ কাজ নিয়ে। আপত্তি জানান বিরোধীরাও। তাতে আটকে পড়ে অনুমোদন। পুর কমিশনার, ডেপুটি মেয়র সরেজমিনে খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থাগুলিকে অনিয়মের বিরুদ্ধে চিঠি দেন। অনেক সংস্থা নিজেদের ভুল স্বীকার করেন। জুন মাসের বোর্ড মিটিংয়ে কোনও রকম পরিবর্তন ছাড়াই ফের তা পেশ করা হলে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের অনেকেই সরব হন। তার পরেও বোর্ড মিটিংয়ে তা কী ভাবে পাশ করানো হল এ দিন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসালম। তিনি জানান, ২ বার পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়ে ওই বেআইনি নির্মাণগুলি বন্ধ করার জন্য তাঁরা অনুরোধ করেছেন। নুরুলবাবু বলেন, “নকশা অনুমোদনের আগেই কাজ শুরু করা যে অবৈধ তা ‘বিল্ডিং রুল’-এ বলা রয়েছে। অথচ অন্যায় ভাবে তা পাশ করানো হয়েছে। সকলের কাছে তাই আবেদন করব ওই ১১ টি ভবনের নকশা যাতে অনুমোদন না করা হয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্যথায় আমরা মানুষের কাছে এর বিচার চাইব।” তিনি জানান, হিলকার্ট রোডে এবং তাঁর ওয়ার্ডে নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে আরও দুটি অনিয়মের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। সেবক রোডের একটি বাণিজ্যক ভবনের ব্যাপারেও ভাড়াটেরা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ তুলেছেন। বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহার অভিযোগ, নকশায় কোনও অনিয়ম নেই। অনুমোদনের আগে কাজ শুরু করার জন্য তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিরোধী দলের কাউন্সিলর দিলীপ সিংহ, শরদিন্দু চক্রবর্তী, কমল অগ্রবালরা এ দিন পুর এলাকায় রাস্তার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দিলীপবাবুর অভিযোগ, রাস্তাগুলি প্রায় বছর খানেক ধরেই খারাপ হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি বৃষ্টিতে তা একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পূর্ত বিভাগ কী পরিকল্পনা নিচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। নদীর জায়গা দখল হওয়া নিয়েও এই পুর বোর্ড কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য বিপত্তি ঘটেছে। পুর কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে নেই। তিনি বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্র নাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে বাম জমানায় পুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা গড়া হয়নি। তার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে। ভোট ব্যাঙ্ক বৃদ্ধি করতে নদীর চরে তাঁরা বাসিন্দাদের বসিয়েছেন। নুরুলবাবুরা সহযোগিতা করলে আমরা নদীর চর দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করতে চাই।” |