সোনা চাই, ছোট থেকেই
স্কুলে ‘মগজধোলাই’

মুখ এবং শারীরিক গঠন পুরুষের মতো। মস্কো অলিম্পিকে ৪০০ মিটার মেডলিতে সোনাজয়ী সেই মহিলা সাঁতারু পশ্চিমী সাংবাদিককে বলেছিলেন, রুপোজয়ীকে সোনার মেডেলটা এক বাক্যে দিয়ে দেবেন, বিনিময়ে চান প্রতিদ্বন্দ্বীর স্বাভাবিক নরম গড়নটা। নিজের দেশ পূর্ব জার্মানিতে এই সোনাজয়ী পেট্রা স্নাইডার ছিলেন অবশ্য একটা নম্বর ‘স্পোর্টসপার্সন ১৩৭’।
কয়েক দশক পরে ষোড়শী ই শিওয়েনও কি তেমন কোনও গল্প বলবেন? লন্ডন অলিম্পিকে সাঁতারে তোলপাড় ফেলে দেওয়া শিওয়েন পশ্চিমের কাছে ফিরিয়ে এনেছেন পেট্রার স্মৃতি। হয়তো স্বাভাবিক এই মিলটা টেনে আনা। সোনাজয়ী সাঁতারু, পুরুষালি গড়ন, ডোপিংয়ের অভিযোগ। আর দু’জনেরই জন্ম খেলোয়াড় তৈরির এক অদ্ভুত কারখানায়। যার খবর মেলে শুধু বিদ্রোহী খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার বা পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
মেডেল-খরা কাটাতে এবং অবশ্যই পশ্চিমকে টেক্কা দিতে আশির দশকে চিনের কমিউনিস্ট সরকার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট জমানারই মডেল বেছে নেয়। যার মূল কথা, ‘ক্যাচ দেম ইয়ং।’ সব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নির্দেশ দাও, ‘খেলোয়াড় হতে পারে, এমন বাচ্চা দেখলেই স্থানীয় ক্রীড়া প্রশাসনকে খবর দাও।’ তার পরে বিশেষ স্কুল। বাড়িঘর ছেড়ে, বাবা-মায়ের থেকে দূরে শুধু দিনভর প্রশিক্ষণ। লক্ষ্য শুধু সোনা। ঘরের দেওয়ালেও তাই সব জায়গায় লেখা- ‘সোনা, সোনা, সোনা।’ কাঁদতে কাঁদতে দম বেরিয়ে যাবে, মনে হবে আর পারছি না, তবু রেহাই নেই। কয়েক বছর আগে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে গিয়েছিল খেলোয়াড় তৈরির স্কুলের ‘ভিতরের’ এই সব ছবি।
এ ভাবেই প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র
শিওয়েনের লম্বা লম্বা হাত-পা দেখে স্কুলের শিক্ষিকাও খবর দিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। ফলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিজের বাড়ি থেকে অনেক দূরে, চেন জিংলিন স্পোর্টস স্কুলে। সেখানে ঠিক হয়, মেয়েটা সাঁতারেই কামাল করতে পারবে। হলও তাই। ১১ বছর বয়সের আগেই জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে বড় জয়। শিওয়েনের মা অবশ্য বলেন, “বরাবরই মেয়েকে বলেছি, মেডেল পাওয়া বড় কথা নয়। তুমি যা করছ, তাতে আনন্দ পাচ্ছো কি না, সেটাই বড় কথা।” সমালোচকরা বলছেন, সাংবাদিকদের সামনে এ সব বলা যায়। কিন্তু মেয়ের প্রশিক্ষকের সামনে এ সব কথা যে শিওয়েনের মা কখনওই বলতে পারেননি, এ কথা হলফ করে বলা যায়। কারণ, খোদ শিওয়েনের কোচ ওয়েই ওয়েই বা সহ-সাঁতারু লু ইং সাংবাদিকদেরই যা বলেছেন, তা থেকে স্পষ্ট, স্কুলটা মোটেই মনের আনন্দে সাঁতার কাটার জায়গা নয়। ওয়েই বলেছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাঁতার কাটানো হত শিওয়েনকে। ছুটি মিলত কখন? যখন সুইমিং পুল পরিষ্কার করতে হত। আর সাঁতারের বাইরে? লন্ডন অলিম্পিকের আগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন লু। বলেছেন, “ওখানে আমরা বারবি কিউ পাটিতে যেতাম। চিনে? ভাবাই যায় না। ওখানে খালি ট্রেনিং, ট্রেনিং আর ট্রেনিং।” দেশে ফেরার পরে লুয়ের কী হবে, তা নিয়ে অবশ্য এখনই জল্পনা শুরু হয়েছে। শিওয়েন নিজে অবশ্য বলছে, “মোটেই সব সময় সাঁতার কাটতে হত না।” পশ্চিমী সাংবাদিকরা আবার প্রশ্ন তুলছেন, সাংবাদিকদের সামনে কী ভাবে কথা বলতে হবে, যন্ত্রণা, কষ্ট চেপে রেখে কী ভাবে মুখ ভাবলেশহীন রাখতে হয়, ছোট্টবেলা থেকে সেই শিক্ষাও তো দেওয়া হয়েছে এই স্কুলেই।
পশ্চিমী সাংবাদিকদের আরও দাবি, এই ‘দুর্গে’ একবার ঢুকলে আর বেরনো যায় না। অন্তত যত দিন যে খেলোয়াড়কে দিয়ে মেডেল পাওয়া যাবে, তত দিন পর্যন্ত ছাড় নেই। সোনার হাঁসকে ছাড়বে না সরকার॥
বেজিং অলিম্পিকের আগে ইয়াং ওয়েনজুন-ও মনের দুঃখ জানিয়েছিলেন একটি মার্কিন সংবাদপত্রকে। আথেন্স অলিম্পিকে ক্যানোয়িং-এ সোনা পাওয়ায় গরিব চাষি পরিবারের ছেলেকে কর্তৃপক্ষ সানি সিটিতে তিন বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছিল। সেখানে বিরাট স্ক্রোলে লেখা ছিল, ইয়াঙের সোনা এখানে সৌভাগ্য আনবে। সৌভাগ্য? “ঠিক উল্টোটাই।” চোখে জল এসে গিয়েছিল ইয়াঙের মা নি চুনহুয়ার। কেন? ছেলের লিভারের অসুখ। ট্রেনিংয়ের পরিশ্রমে হাঁফিয়ে পড়ে, কিন্তু কিছু করার নেই। ছেলে তো বাড়িতেই থাকে না। থাকে বিশেষ স্কুলে। আথেন্সে সোনা পাওয়ার পরেই খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন ইয়াং। কিন্তু পারেননি। কেন? ইয়াঙের অভিযোগ, “ওরা ভয় দেখিয়েছিল, খেলা ছেড়ে দিলে পরের আর্থিক সুবিধাগুলো আর পাব না। কিন্তু ওগুলো না পেলে খাব কী?”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.