নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যয়
পূর্ব-ভারত জুড়ে পাওয়ার-গ্রিড বসে যাওয়ায় মঙ্গলবার দুই মেদিনীপুরেও বিপর্যস্ত হল বিদ্যুৎ সরবরাহ। এ দিন দুপুর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া এবং কোলাঘাট শিল্পাঞ্চল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ-বিপর্যয়ের প্রভাপ পড়ে। রেল-পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়। চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। এ দিন বেলা ১টা ৩ মিনিটে কোলাঘাট তাপবিদ্যু-কেন্দ্রের ৬টি ইউনিটের সবক’টিই বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও তা সরবারহ করতে না-পারার কারণে বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিতে হয় এই কেন্দ্র।
আবার কোলাঘাট থেকে বিদ্যুৎ সরবারহ না হওয়ায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলেও প্রভাব পড়ে। বিদ্যুতের অভাবে ধাতব প্যাকেজিং যন্ত্রের কারখানা মানাক্সিয়া লিমিটেড, ফেরো-অ্যালয় উৎপাদনের কারখানা রোহিত ফেরোটেক, মর্ডান ইন্ডিয়া-সহ একাধিক ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে মিৎসুবিসি, আইওসি, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল, টাটা কেমিক্যালের মতো বড় কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উপাদন-কেন্দ্র এবং অন্যান্যদের জন্য টাটা পাওয়ারের সরবরাহ অব্যাহত থাকায় বন্ধ হয়নি ওই সব কারখানা। তবে গেঁওখালিতে জুস্কোর মাধ্যমে জল-সরবারহ বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ নেই। বন্ধ ট্রেন চলাচল। সুনসান সদাব্যস্ত খড়্গপুর স্টেশন।
এই পরিস্থিতিতে আইওসি, মিৎসুবিসির মতো কারখানাও তাদের উৎপাদন কতক্ষণ চালিয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। দুই জেলার বিভিন্ন পুর-এলাকাতে পানীয় জল-সরবরাহ নিয়েও সংশয় তৈরি হয়। ঘাটাল পুরসভার পক্ষ থেকে জল-অপচয় না করার জন্য প্রচার শুরু হয়।
এই বিপর্যয়ের ফলে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হয় ট্রেনযাত্রীদের। মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিভিন্ন স্টেশনে এবং লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। মেদিনীপুর স্টেশনে দু’টি হাওড়া-মেদিনীপুর লোকাল আটকে পড়ে। শ্যামচকে আটকে ছিল হাওড়া-খড়্গপুর লোকাল। গিরি ময়দানে আটকে পড়ে মেদিনীপুর-হাওড়া লোকাল। বেলদার বাখরাবাদের কাছে আটকে পড়ে দুরন্ত এক্সপ্রেস। মেচেদা ও কোলাঘাটের মাঝে আটকে পড়ে ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস। বাঁকুড়া থেকে খড়্গপুর আসার পথে চন্দ্রকোনারোড স্টেশন ঢোকার আগে আটকে পড়ে আরও একটি দুরন্ত। গিধনি স্টেশনে খড়্গপুর-ঘাটশিলা লোকাল আটকে পড়ে। যে সব ট্রেন স্টেশনে আটকে পড়ে, তার যাত্রীরা খাবার ও জল পেয়েছেন। কিন্তু দুই স্টেশনের মাঝে আটকে পড়া ট্রেনের যাত্রীদের চূড়ান্ত ভোগান্তি হয়। তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে রেলের পক্ষ থেকে ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে সেই সব ট্রেনকে খড়্গপুরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা হয়। পাঁশকুড়া-হলদিয়া, মেচেদা-দিঘা শাখাতেও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলেনি। দিঘা-হাওড়া কাণ্ডারী এক্সপ্রেসও আপ ও ডাউনে বাতিল হয়। দিঘা থেকে হাওড়াগামী দুরন্ত এক্সপ্রেস এ দিন বেলা সাড়ে তিনটের সময়ে ছাড়ার কথা থাকলেও সন্ধে পর্যন্ত ছাড়েনি। রেলের হলদিয়ার চিফ-কমার্সিয়াল ইন্সপেক্টর অনুপম পালোধি জানান, যতক্ষণ বিদ্যুৎ-সরবরাহ বন্ধ থাকবে, ততক্ষণ ট্রেন চালানোর উপায় নেই। বহু ট্রেনই বাতিল করতে হয়েছে। ট্রেন বন্ধ হওয়ায় বাস-ট্রেকারে ভিড় বাড়তে থাকে। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
মেচেদায় ট্রেন বন্ধ থাকায় উপচে পড়া ভিড় বাসে।
জেনারেটর থাকায় রাত পর্যন্ত হাসপাতালগুলিতে অবশ্য খুব একটা সমস্যা হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র জানিয়েছেন, দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলতে পারে জেনেই প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে অতিরিক্ত তেল কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়। যাতে এক মুহূর্তের জন্যও জেনারেটর বন্ধ না থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি করার পরে সম্ভব হলে মাঝে কিছুক্ষণ জেনারেটর বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। সন্ধে পর্যন্ত জেনারেটরের মাধ্যমেই কাজ চালানো গিয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ-সহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে। বড় সঙ্কট কিছু হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা-পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল হাসান জানান, সমস্ত হাসপাতালে জেনারেটর রয়েছে। তাই তেমন প্রভাব প্রভাব পড়বে না। তবে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেখানে জেনারেটর নেই সেখানে সমস্যা হলে মোকাবিলার চেষ্টা হবে। একই বক্তব্য, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কালীদাস দত্তেরও।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ ও পার্থপ্রতিম দাস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.