শিক্ষক নাকি বৌ পেটান, তেড়ে এল প্রমীলা বাহিনী
প্রায় দুশো জনের প্রমীলা বাহিনী। কারও হাতে ঝাঁটা, কারও হাতে বঁটি-কাটারি। কেউ আবার চলে এসেছেন লাঠি আর জুতো হাতে। উদ্দেশ্য, বৌ পেটানো মাস্টারকে শায়েস্তা করা। ‘অস্ত্র’ প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ল না। রণসাজ আর হুঙ্কারেই কাজ হল। সুড়সুড় করে মুচলেকা লিখে দিলেন শিক্ষক ‘ভবিষ্যতে আর বউয়ের গায়ে হাত তুলব না’।
পশ্চিম মেদিনীপুরের রামগড়ের গ্রাম আউলিয়ার বাসিন্দা ওই শিক্ষক। বিনপুরের আঁধারিয়া অঞ্চলের একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। বছর পাঁচেক আগে বিয়ে করেছেন। স্ত্রীর বাপের বাড়ি গোয়ালতোড়ে। পেশায় শিক্ষক বলে বিয়ের সময় ‘দর’ উঠেছিল ভালই। শ্বশুরবাড়ি থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা ও আনুষঙ্গিক যৌতুক পেতে অসুবিধা হয়নি। ওই দম্পতির ৪ বছরের একটি মেয়ে ও দু’বছরের একটি ছেলে রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে নিত্য অশান্তি লেগে রয়েছে পরিবারে। রীতিমতো স্ত্রীকে মারধর করেন ওই শিক্ষক আর তাঁর মা। পাড়াপড়শিরা সবই জানেন। বছর দু’য়েক আগে জঙ্গলমহলের আন্দোলন-পর্বে এলাকায় যখন ‘জনগণের কমিটি’র প্রভাব, তখন কমিটির নেতৃত্বও ওই পরিবারের কলহ মেটাতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু বধূ-নির্যাতন থামেনি।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
রবিবার রাতে ফের স্ত্রীকে মারধর করেন ওই শিক্ষক এবং তাঁর বাবা-মা। এ বার আর চুপ করে থাকেননি এলাকার মহিলারা। সোমবার বিকেলে স্থানীয় স্বসহায়ক গোষ্ঠীর মহিলাদের উদ্যোগে আউলিয়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সভা ডাকা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, অত্যাচারিত ওই বধূর শ্বশুরবাড়ির লোককে ‘শিক্ষা’ দিতে হবে। এরপরই রণসাজে সেজে প্রায় দু’শো মহিলা ওই শিক্ষকের বাড়িতে চড়াও হন। হাতে লাঠি, ঝাঁটা, জুতো। মুখে স্লোগান ‘ঘরে বসে থাকব না, পুরুষের জুলুম মানব না’। ওই বধূর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে বাড়ি থেকে টেনে বার করে স্কুলপ্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সদস্য সীমা গিরি, ঝুমা গরাই, পূর্ণিমা খিলাড়ি, সবিতা গিরিদের সামনে তখন কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছেন বছর চৌত্রিশের ওই শিক্ষক এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা। বাক্যবাণে জর্জরিত হয়ে তাঁদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা! স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বলেন, “নিজে শিক্ষক হয়ে বৌকে পেটান, ছাত্রছাত্রীদের কী শিক্ষা দেবেন আপনি!” শিক্ষকের স্ত্রীকেও ‘বিচার সভা’য় ডেকে আনা হয়। সকলের সামনে ওই শিক্ষক স্ত্রীকে মারধরের কথা স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে আর এ কাজ করবেন না বলে মুচলেকা লিখে দেন। মুচলেকাটি স্বসহায়ক গোষ্ঠীর মহিলারা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছেন। তাঁদের হুঁশিয়ারি, বেগতিক দেখলে মুচলেকা পুলিশে জমা দেওয়া হবে। আর শুধু ওই শিক্ষক নন, গ্রামের যে কোনও পুরুষ স্ত্রীর উপর নির্যাতন করলে তাঁদের কপালেও ঝাঁটা-জুতো রয়েছে।
মঙ্গলবার ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেকেটে অস্থির ওই শিক্ষক। তাঁর বক্তব্য, “বৌয়ের জন্য সংসারে নিত্য অশান্তি। ও আমার বাবা-মা’কে অযত্ন করে। এসব নিয়ে বলতে গেলে বৌ পাল্টা চোপা করে। রাগের মাথায় বার কয়েক গায়ে হাত তুলেছি। ভবিষ্যতে আর করব না।”
যাঁর জন্য এত কাণ্ড, শিক্ষকের সেই স্ত্রী অবশ্য শাশুড়িকেই দুষছেন। স্বামীর প্রতি রীতিমতো নরম তিনি। সলাজ গলায় বলেন, “শাশুড়ির ইন্ধনে স্বামী আমাকে মারধর করেন ঠিকই, তবে ভালওবাসেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.