|
|
|
|
পেট্রোকেমে ৮ বছর পর বার্ষিক সভা |
চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বিরোধিতা উড়িয়ে প্রাধান্য রাজ্যেরই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দীর্ঘ ৮ বছর পর হওয়া হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের বার্ষিক সাধারণ সভাতেও আধিপত্য বজায় রাখল রাজ্য। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বিরোধিতা সত্ত্বেও পাশ হল সব প্রস্তাবই।
পরিচালন পর্ষদের বৈঠকের ঝাঁঝ বা নাটকীয়তা এখানে ছিল না। ছিল না প্রকাশ্য কাজিয়া কিংবা তুমুল তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু তা সত্ত্বেও আট বছর পর অনুষ্ঠিত এই সভায় বজায় থাকল বিরোধিতার সুর। প্রস্তাব পাশ হলেও তা ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়নি। বরং তা গড়াল ভোটাভুটি পর্যন্ত। তবে শেষ পর্যন্ত সভায় প্রস্তাব পাশ করিয়ে ফের শক্তি প্রমাণ করল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী তথা সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও। বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ২০০৪-’০৫ থেকে ২০১১-’১২ সাল পর্যন্ত আর্থিক হিসেব এবং বিভিন্ন পদে নিয়োগ। এই আলোচনায় একে অন্যকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়েনি আদালতে যুযুধান দুই পক্ষ রাজ্য এবং চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
মতের অমিল সব থেকে স্পষ্ট ছিল নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে। বৈঠকে শেষে যা স্পষ্ট পার্থবাবু ও পূর্ণেন্দুবাবুর কথাতেই। এক দিকে, “সব ঠিক আছে” আশ্বাসের পরও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার জানালেন, “মনোমালিন্য একটু আধটু থাকবেই”। অন্য দিকে পার্থবাবু বলেন, “সামান্য বিরোধিতা হলেও প্রস্তাব সব পাশ হয়ে গিয়েছে।”
এ দিনের বৈঠকে সংস্থার পরিচালন পর্ষদে ডিরেক্টর হিসেবে জামশেদ গোদরেজের পুনর্নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তাদের দাবি, বহু দিন ধরে চাইলেও, এখনও সংস্থায় ডিরেক্টর পদে প্রতিনিধি বসাতে পারেনি পেট্রোকেমে অন্যতম বিনিয়োগকারী সংস্থা উইনস্টার। বার বার যুক্তি দেওয়া হয়েছে পদ খালি না-থাকার। গোদরেজের মেয়াদ শেষে সেই পদ খালি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফের তাঁর নিয়োগ উড়িয়ে দিয়েছে পর্ষদে উইনস্টারের ঢুকে পড়ার সেই সম্ভাবনাকে।
পার্থ ভট্টাচার্যকে সরিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদে রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণ সচিব সুমন্ত্র চৌধুরীকে নিয়োগ করারও বিরোধিতা করেছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তাদের দাবি, চুক্তি মাফিক তাদের মনোনীত প্রার্থীরই ওই পদে নিযুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু পর্ষদের বৈঠকের মতো এ দিনের আলোচনাতেও রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন আর্থিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। ফলে প্রাধান্য বজায় থেকেছে রাজ্যেরই।
সব মিলিয়ে, আইনি লড়াই ও বোর্ডরুমের অমিল সরিয়ে রেখে সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে ভাবনাচিন্তা এ দিনের আলোচনায় জায়গা পায়নি। যদিও পার্থবাবুর দাবি, ঠিক পথেই এগোচ্ছে সংস্থা। যে পরিকল্পনার ভিত্তিতে শিল্পমন্ত্রীর এই আশা, তা হল লাভের মুখ দেখতে অন্য সংস্থার হয়ে নিজেদের কারখানায় উৎপাদন করবে পেট্রোকেম। সে ক্ষেত্রে ন্যাপথা কিনে দেবে বরাত দেওয়া সংস্থাই। পণ্য বিক্রিও করবে তারা। শুধু পণ্য উৎপাদন বাবদ তাদের কাছে অর্থ নেবে পেট্রোকেম। অর্থাৎ ন্যাপথা কিনতে গাঁটের কড়ি খরচ করতে হবে না। থাকবে না বিপণনের দায়িত্বও। নিজেদের পরিকাঠামো ও কর্মীদের কাজে লাগিয়ে কার্যত বাড়তি কোনও খরচ ছাড়াই আয়ের রাস্তা প্রশস্ত করতে পারবে পেট্রোকেম। এই পরিকল্পনা অবশ্য প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ ভট্টাচার্যেরই তৈরি। মন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ৮টি সংস্থা।
একই সঙ্গে পার্থবাবুর দাবি, নিজেদের উৎপাদন চালিয়ে যেতে ন্যাপথা কেনার বিষয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েল এ নিয়ে কথা হচ্ছে হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে খরচ কমাতে আমদানি করার বদলে যতটা সম্ভব ন্যাপথা দেশীয় সংস্থার কাছ থেকেই কিনতে চায় পেট্রোকেম। |
|
|
|
|
|