বিতর্ক...
১৫ অগস্ট কাজের দিন, ছুটির দিন নয়
পক্ষে
ভুলের মাসুল গোনার সময়
১৫ অগস্ট ১৯৪৭ দেশভাগের দিন। কোটি কোটি মানুষের ভিটেমাটি হারিয়ে, উদ্বাস্তু হয়ে এ-পারে পালিয়ে আসার দিন। ক্ষমতায় বসার লোভে নেতাদের স্বাধীনতাকে উজ্জ্বল উৎসবে পরিবর্তন করে সার রাত ধরে গান-বাজনা-জলসার আয়োজন করার দিন। লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে অভিভাবক হিসাবে রেখে দেওয়ার দিন। আর এ সব আদিখ্যেতা দেখতে না-পেরে জাতির পিতা মহাত্মা গাঁধীর পালিয়ে এসে কলকাতার বেলেঘাটার হায়দার মঞ্জিলে লুকিয়ে থাকার দিন। তাই ১৫ অগস্ট আদৌ ছুটির দিন হিসাবে ফুর্তি করার দিন নয়। কাজ করে, আরও বেশি পরিশ্রম করে ১২৫ কোটি ভারতবাসীর অতীতের জাতীয় নেতাদের ভুলের মাসুল গুনে দেওয়ার দিন। ছুটির দিন নয়।


আমরা কি একটা দিনের আয়েসি ছুটি পাওয়ার জন্যই বিদেশি শত্রুদের তাড়াতে এত রক্ত ঝরিয়েছি? এতগুলি রোববার, ঈদ, বড়দিন, দুর্গাপুজো, মহরম বারো মাসের বাহান্ন পার্বণের ছুটিতেও কি আমাদের আশ মেটে না? দুশো বছরের বর্বরতাকে পর্যুদস্ত করে আমরা এত সাধের স্বাধীনতা পেয়েছি নিজেদের মনের মতো করে দেশকে গড়ব বলে। স্বাধীনতা দিবস তাই শপথের দিন। নতুন ভারতবর্ষ গড়ার শপথ। তাই ছুটি নয়, বড়জোর অফিসের কাজের ফাঁকে আমরা একটু মিস্টিমুখ করতে পারি।
১৫ অগস্ট অবশ্যই কাজের দিন। বাবলুকে রিকশা নিয়ে বেরোতেই হবে, বাসন্তী কাজে না-বেরোলে বাবুদের গোঁসা হবে। সবজি নিয়ে না-বসলে কালীপদকে পরের দিন টিপ্পনি শুনতেই হবে কী রে! ঝান্ডা তুলতে গিয়েছিলি? বাবলু-বাসন্তী-কালীপদদের মতো দিন মজুরের আবার ছুটির দিন!
যাঁদের ছুটির দিন ১৫ অগস্ট, তাঁদের এক অংশের আবার নিদারুণ ব্যস্ততা। কত জায়গায় পতাকা উত্তোলন এবং প্রায় মুখস্থ কিছু কথা আউড়িয়ে যাওয়া। বাবলু-বাসন্তী-কালীপদদের দিয়ে তো আর এই কাজ হয় না, তাই ‘ওঁদের’ উপর কত চাপ! কিন্তু প্রশ্ন যে ওঠেই না, বাবলু-বাসন্তী-কালীপদরা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মর্যাদা পায় না কেন? ওদের ‘কাজের দিন’-এ এক মহৎ কাজে ওরাও শামিল হোক।


আমি এক জন স্কুল ছাত্র। বেশির ভাগ স্কুলেই এই দিন খুব কম শিক্ষকই হাজির থাকেন। আমার নিজের স্কুলেও বেশির ভাগ শিক্ষকই এ দিন আসেন না। কোনও কোনও স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিজেই অনুপস্থিত থাকেন। ১৫ অগস্ট পালন না-করায় স্কুলে তালা পড়ে যায়। শিক্ষকরা যদি না-আসেন, ছাত্ররা তা হলে কী শিখবে? ছাত্ররাও টিউশন কামাই করে সাত-সকালে স্কুলে আসতে নারাজ। তাদের কাছে ১৫ অগস্ট স্কুলে আসা মানে বিস্কুট খাওয়া আর লেকচার শোনা ছাড়া আর কিছু নয়। এ দেশে স্বাধীনতার জন্য যাঁরা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, তাঁদের কোনও দামই তাঁরা দিতে জানেন না। প্রথমিক বিদ্যালয়ে এক জন শিক্ষকের দ্বারাই মোটামুটি ভাবে ১৫ অগস্ট পালিত হয়।
অন্যান্য কর্মক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম ছবি দেখা যায়। এই দিন হাজির না-থাকা মানে এই বিশেষ দিনটির মর্যাদা হ্রাস করা। এই দিনে হাজির না-থেকে এই দিনটির অবমাননা না করে কাজের দিন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা ভাল।

বিপক্ষে
একটা খাঁটি জাতীয় উৎসব
কে বলেছে, ছুটির দিন কোনও কাজের দিন নয়। ছুটির দিন মানে কি ঘুমিয়ে সারা দিন কাটিয়ে দেওয়া? ছুটির দিন মানেই হল স্বাধীন ভাবে নিজের কাজ করার দিন। তা ছাড়াও বিশেষ দিনগুলিকে বিশেষ রাখার জন্য ছুটির দিন হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। সেই গতানুগতিক কাজের ঘেরাটোপে ঝুঁকে গেলে বিশেষ দিন কি আর বিশেষ দিন থাকে নাকি? স্বাধীনতা দিবস আর স্বাধীনতা দিবস থাকে?


বছরের বিভিন্ন ছুটিগুলো দেখলেই বোঝা যায় সেগুলোর অধিকাংশই ধর্মীয় সম্প্রদায় ভিত্তিক আর কিছু আঞ্চলিক। ১৫ অগস্ট মোটেও তা নয়। বরং বলা যায়, খাঁটি জাতীয় ছুটি। ১৫ অগস্টের মতো ধর্মনিরপেক্ষ এবং আঞ্চলিকতাবিহীন ছুটি অবশ্যই দেশবাসীকে একসূত্রে গাঁথতে পারে।
তা ছাড়া ১৫ অগস্টে অন্যান্য দিনের মতোই কাজ করলে এই বিশেষ দিনের তাৎপর্য কী ভাবে বোঝা যাবে? ছুটি না-দিয়েও অন্য ভাবে দিনটি পালনের সুযোগ বিভিন্ন সংস্থার কর্তারা কি দেবেন? তার চেয়ে ভাল যে যেমন চায়, তার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে একটা ছুটি। তাতে ১৫ অগস্টের প্রতি অভক্তি তৈরি হবে না।
১৫ অগস্ট দিনটি ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে উদ্যাপিত হয়। দীর্ঘ ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য এবং ভারতকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরতে প্রচুর বিপ্লবী, প্রচুর মহাপুরুষের অক্লান্ত পরিশ্রম তথা তাদের দেশের হয়ে প্রাণত্যাগ আমরা স্বর্ণাক্ষরে মনে রাখি। তাঁদের পরিশ্রম সার্থক। তার পর? সেই দিনে তাঁরা ক্লান্ত, অথচ তাঁরা উচ্ছ্বসিত, তাঁরা উল্লাসিত। তাঁদের কাছে তথা তৎকালীন ও উত্তরোত্তর আমাদের দেশবাসীর কাছে ১৫ অগস্ট দিনটি একটি উৎসবের সমান। ১৫ অগস্ট দিনটি তাঁদের কাছে তথা তাঁদের উত্তরসূরি হিসাবে আমাদের কাছেও আর কাজের দিন নয়, সেটা ছুটির দিন হিসাবেই অগ্রগণ্য হওয়া উচিত।
এ ক্ষেত্রে বাকি থাকেন আমাদের দেশের সেই সমস্ত মানুষ যাঁরা দৈনন্দিন রোজগারের উপর নির্ভর করে দিন অতিবাহিত করেন। তাঁদের কাছে সেই দিনটি ছুটির দিন হিসাবে মান্যতা নাও পেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা ও তাঁদের দলগুলি প্রচুর কাজের দিনে ধর্মঘট ও বন্ধ করে কাজের দিনকে ছুটির দিনে পরিণত করেন। সেই সময় কি তাঁরা খেটে-খাওয়া মানুষের কথা ভুলে যান? ভারতের অর্থনৈতিক বাজারের নিম্নগামী সূচকের কথা ভুলে যান?
তৎকালীন ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য প্রাণত্যাগী বিপ্লবী এবং মহাপুরুষদের কথা স্মরণ করে আমরা ১৫ অগস্ট দিনটিকে ছুটির আমেজে কাটাতেই পারি।
আমার মনে হয় না, তাতে ভারতের অর্থনৈতিক বাজারের নিম্নগামী সূচকের খুব একটা পরিবর্তন হবে।


আমরা যারা নির্মাণ কার্যে জড়িত, আমাদের তো কোনও শনিবার বা রবিবার নেই। আর কাজের সময়? প্রতি দিন ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। ১৫ অগস্ট, ২ অক্টোবর, ২৬ জানুয়ারি এ রকম কয়েকটি দিন তো ছুটি পাই। তাই নাই বা করলেন ওকালতি ১৫ অগস্ট কাজ করার জন্য।

সেপ্টেম্বর মাসের বিতর্ক
আপনার চিঠি পক্ষে না বিপক্ষে, তা স্পষ্ট উল্লেখ করুন।
চিঠি পাঠান ২৫ অগস্টের মধ্যে এই ঠিকানায়
সেপ্টেম্বরের বিতর্ক,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.