কুমার রাণা (‘স্রেফ খিচুড়ি সেন্টার নয়...’, ২৭-৬) ঠিক বলেছেন। সারা রাজ্যে ইতিমধ্যেই গত পাঁচ-ছয় বছরে প্রচুর নতুন প্রোডাক্ট ও অতিরিক্ত নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু হলেও প্রকল্প পরিচালনার মূল আধিকারিক সি ডি পি ও-র পদ অর্ধেকেরও বেশি ফাঁকা। এক এক জন সি ডি পি ও-কে দুটি-তিনটি করে প্রোজেক্টের দায় বহন করতে হচ্ছে। সহকারী সি ডি পি ও পদটি লোপ করে দেওয়া হয়েছে। সুপারভাইজার পদও ষাট শতাংশ ফাঁকা। এই অবস্থায় ভয়াবহ এক সংকটের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই দফতরের কাজ চলছে। বিগত সরকার যেমন, বর্তমান সরকারও গত এক বছরে দু’বার মন্ত্রী বদল ছাড়া তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি। নতুন নিয়োগ চালু করে আই সি ডি এস প্রজেক্টের হাল ফেরানোর সদিচ্ছা সুদূরপরাহত। যদিও এই প্রকল্পের প্রতিটি অনুমোদিত পদের দায়ভার কেন্দ্রীয় সরকার বহন করে। |
কর্মী ও আধিকারিক নিয়োগ বা পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সচেষ্ট না-হলেও সম্প্রতি রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন দফতর, যাঁরা আই সি ডি এস প্রকল্প পরিচালনা করেন, এক আশ্চর্য নির্দেশ জারি করেছেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে নিয়মিত খিচুড়ি ডিম সেদ্ধর পরিবর্তে এ বার থেকে সপ্তাহে নানা রকম খাদ্য পরিবেশন করা হবে। কোনও দিন ভাত-ডিমের তরকারি, কোনও দিন ভাত-ডাল-সবজি, কোনও দিন খিচুড়ি। মজার ব্যাপার হল, এই মুখ-বদলের স্বার্থে শিশুপ্রতি আর্থিক বরাদ্দ (বর্তমানে প্রতিদিন শিশুপ্রতি চার টাকা) একটুও বাড়ানো হয়নি। বাজারদরের নিরিখে স্বাদবদলের আয়োজন কী ভাবে করা যাবে, সে নিয়ে দফতরের কর্তারা নিশ্চুপ। অথচ তাঁদেরই নির্দেশনামা অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করতে গেলে শিশুপ্রতি ন্যূনতম ছ’টাকা খরচ হতে বাধ্য।
কেন্দ্রীয় সরকারের যে-অনুদানে এই খাদ্যের ব্যবস্থা, সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পরিবেশিত খাদ্যের মাধ্যমে শিশুরা যাতে ন্যূনতম দুশো ক্যালরি শক্তি পায় তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। খিচুড়ি-সবজি-সয়াবিন-ডিমসেদ্ধ ‘একঘেয়ে’ হলেও তাতে ওই প্রয়োজনীয় ক্যালরির সংস্থান হত। স্বাদ বদলের পরিবর্তিত মেনুতে তার সম্ভাবনা নেই। নতুন নীতি নির্ধারকদের নির্দেশে অপুষ্টির প্রসঙ্গ কি আড়ালেই থেকে গেল?
সংযুক্তা দাশগুপ্ত। কলকাতা-৩২
|