সম্পাদকীয় ২...
আইনের বাহিরে
সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাইয়াছিল, যাঁহারা স্বেচ্ছায় যৌনকর্ম নামক পেশাটিতে থাকিতে চাহেন, তেমন যৌনকর্মীদের কাজের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করিতে হইবে। কেন্দ্রীয় সরকার, স্বভাবতই, দ্বন্দ্বে পড়িয়াছিল। যৌনকর্ম এই দেশে পেশা হিসাবে আইনসিদ্ধ নহে। তেমন একটি পেশার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করিবার হুকুম হইলে কি ধরিয়া লইতে হইবে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত পেশাটিকেই স্বীকৃতি দিতেছে? সরকার সুপ্রিম কোর্টের নিকট প্রশ্নটি পেশ করিয়াছিল। কোর্ট জানাইয়াছে, পেশাটির আইনি বৈধতা সংক্রান্ত অবস্থান পরিবর্তিত হয় নাই, কিন্তু তাহা সত্ত্বেও অনুকূল পরিবেশ তৈরির নির্দেশটি যথাবিধি থাকিতেছে। আপাতদৃষ্টিতে পরিস্থিতিটি স্ববিরোধী। যে কাজটি বে-আইনি, আইন তাহাকে সর্ব প্রকারে দমন করিতে চেষ্টা করিবে, ইহাই স্বাভাবিক বলিয়া বোধ হয়। অন্তত, সংকীর্ণ নীতির যুক্তিতে। সেই যুক্তিতে ‘বে-আইনি’ হওয়াই শেষ কথা, তাহার পর আর আলোচনা চলে না। অতএব, নীতির যুক্তিকে আশ্রয় করিলে এই আলোচনা সম্ভব নহে যে কেন একটি ‘বে-আইনি’ পেশাকেও আইনি নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন পড়িতে পারে।
সেই কথাটি সম্যক বুঝিতে বৃহত্তর ন্যায়ের যুক্তির শরণাপন্ন হইতে হইবে। ভারতীয় আইন যৌনকর্মকে স্বীকৃতি দেয় নাই, বে-আইনি বলিয়াই তাহাকে অপরাধের পর্যায়ভুক্ত করিয়া দেখা হয়। কিন্তু, অপরাধ কী, ভাঙিয়া দেখিলে স্পষ্ট হইবে, অপরাধের সহিত অন্য কাহারও ক্ষতির অঙ্গাঙ্গি যোগ বর্তমান। ডাকাতি অপরাধ, কারণ তাহা অন্যের সম্পত্তির অধিকার হরণ করে। নদীতে দূষিত বর্জ্য ফেলা অপরাধ, কারণ তাহা নদীর উপর নির্ভরশীল জীবকুলের জীবন ও জীবিকার অধিকার হরণ করে। যৌনকর্মকে অপরাধের এই সংজ্ঞায় ধরা যাইবে না। এই পেশাটি সেই অতি-বিরল ‘বে-আইনি’ কাজ, যাহার সহিত অপরাধের বা অপরের অধিকার হরণের কোনও যোগসূত্র নাই। কেহ বলিতেই পারেন, যৌনকর্ম অপরাধ, কারণ এই পেশা পরিবারে ভাঙন ধরাইতে পারে, স্ত্রীর অধিকার হরণ করিতে পারে। এই কথাটির একমাত্র ভিত্তি সংকীর্ণ নৈতিকতা পুরুষতন্ত্রের বাঁধিয়া দেওয়া সংজ্ঞা মানিয়া চলা নৈতিকতা। এই স্বঘোষিত অভিভাবকদের নৈতিকতার নিদান শিরোধার্য করিবার দায় সমাজের নাই। ফলে, পেশা হিসাবে যৌনকর্মকে পৃথক ভাবে দেখাই সঙ্গত।
নৈতিকতার সংকীর্ণ যুক্তিকে যদি অস্বীকার করা যায়, তবে যে প্রশ্নটি অনিবার্য: আদৌ কেন যৌনকর্মকে ‘বে-আইনি’ করিয়া রাখা হইবে? কেন সংবিধান এই পেশাটিকে স্বীকৃতি দিবে না? এই প্রশ্নগুলির ন্যায্য উত্তর সন্ধান করা জরুরি, কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক দীর্ঘসূত্রতার কথা মাথায় রাখিলে তাহা সময়সাপেক্ষ। ন্যায়ের যুক্তি বলিবে, যত দিন তাহা না হয়, তত দিন এই পেশাকে পৃথক ভাবে দেখিতে হইবে, তাহার জন্য আলাদা করিয়া ভাবিতে হইবে। বাস্তব ভোলা বুদ্ধির কাজ নহে। যাঁহারা যৌনপেশার তীব্রতম বিরোধী, তাঁহারাও স্বীকার করিবেন, যে নারীরা এই পেশায় আছেন, তাঁহারা সম্ভবত সমাজে শোষিততম। একে তাঁহারা নারী, উপরন্তু তাঁহারা এমন একটি পেশার শরিক যাহাকে সমাজ ঘৃণ্য বোধ করে ফলে পরিবার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, কেহই তাঁহাদের সহায় নহে। তাঁহারা ক্লেদাক্ত পরিবেশে বাস করিতে বাধ্য হন, সমাজের মূলস্রোত প্রাণপণে তাঁহাদের তফাতে রাখে। আর, তাঁহাদের সন্তানরা জন্ম হইতেই ‘অচ্ছুত’ তাহারা জন্মসূত্রেই ‘পরিত্যাজ্য’। সংকীর্ণ নীতির যুক্তি এই কথাগুলিকে গ্রাহ্য করে না। কিন্তু ন্যায় জানে, এই বাস্তব হইতে মুখ ফিরাইয়া রাখিলে বিচার হয় না। সুপ্রিম কোর্টের আদেশটিকে এই প্রেক্ষিতে দেখা বিধেয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.