কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আদালতের পিওন হিসেবে। পরে সাব-ইনস্পেকটর হিসেবে যোগ দেন মুম্বই পুলিশে। রাজনীতির দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তিনিই আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁরই হাতে।
মহারাষ্ট্রের সোলাপুরের এক দলিত পরিবারের সন্তান। আসল নাম ছিল জ্ঞানবা শিণ্ডে। বাবা-মা ডাকতেন ডাগরু নামে। মরাঠিতে যার অর্থ ভারী পাথর। পরে এফিডেভিট করে হন সুশীল কুমার। এই নামটা বাছার পিছনে একটা গল্প আছে। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢোকার পর ঝোঁক চেপেছিল অভিনয়ের। তাঁর কথায়, “একটা নাটক তো
|
সুশীলকুমার শিণ্ডে |
খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। তাতে ‘সুশীলকুমার’ চরিত্রটি মানুষের ভাল লেগে যায়।” নাটকের জনপ্রিয় চরিত্রের নামটিই নিজের জন্য বেছে নেন ডাগরু। সেই থেকে তিনি নাম পাল্টে সুশীলকুমার হয়ে যান পাকাপোক্ত ভাবে।
কলেজ পাশ করার পর আর অভিনয়ের সুযোগ পাননি তেমন। জুটিয়ে নেন একটা পিওনের কাজ। পরে যোগ দেন পুলিশে। বছর তিনেক সেই চাকরি করার ফাঁকেই আইন পাশ করেন। সেই সময়েই শরদ পওয়ারের নজরে পড়ে যান। চাকরি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন ’৭১ সালে। আর সে বছরেই বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হন সুশীলকুমার শিণ্ডে। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এর পর পাঁচ বার বিধায়ক হয়েছেন তিনি। কাজ করেছেন রাজ্যের অর্থ, স্বরাষ্ট্র, নগরোন্নয়ন, পরিবহণ ও স্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রী হিসাবে। বসন্ত দাদা পাটিল, ভি পি নায়েকের মতো মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সেই সঙ্গে মুম্বই ও মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। আবার নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় হন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য।
তবে কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ১৯৯৯ সালের পর থেকে ক্রমশ গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন শিণ্ডে। ’৯৯-এ অমেঠি থেকে লোকসভা ভোটে লড়েন সনিয়া গাঁধী। শিণ্ডে ছিলেন তাঁর প্রচারসচিব। বলতে গেলে শিণ্ডের রাজনৈতিক উত্তরণের রেখচিত্র তখন থেকেই উর্ধ্বগামী। দলিত নেতা হিসাবে ২০০২ সালে তাঁকে ভৈরোঁসিংহ শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করেন সনিয়া। কিন্তু তাতে পরাস্ত হওয়ার পরেও শিণ্ডের রাজনৈতিক জীবন থমকে যায়নি। বরং এর দেড় বছরের মধ্যেই তাঁকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী করেন সনিয়া। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শিণ্ডে খুব যে সফল ছিলেন তা নয়। উল্টে দলের মধ্যে থেকেও তাঁকে সরানোর দাবি উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালের শেষ দিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু দেড় বছর পরই ফের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন শিণ্ডে। তখন থেকেই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে তাঁর এই রাজনৈতিক উত্তরণের দিনে অবশ্য লেগে রইল কিছুটা ব্যর্থতার দাগ। দু’দিন ধরে প্রায় অর্ধেক দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য বিরোধীরা আজ তাঁর তীব্র সমালোচনা করেন। তাতে অবশ্য সুশীলের যাত্রা থামছে না। আজ ঘোষণা হয়নি ঠিকই, তবে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, অচিরেই লোকসভার নেতা করা হবে সোলাপুরের এই দলিত নেতাকে। |