তখনও তিনি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই। ঘুরছেন নামনি অসমের ত্রান শিবিরে। এবং গত কালের মতো ক্ষুব্ধ শরণার্থীদের স্লোগানের সামনে পড়তে হল পি চিদম্বরমকে।
গত কাল কোকরাঝাড়ের দু’টি ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখেন চিদম্বরম। ত্রাণ শিবিরে, চিদম্বরমের সামনেই বিটিসি প্রধান হাগ্রামা মহিলারির নামে মুর্দাবাদ ধ্বনি উঠেছিল। বিটিসি ভেঙে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছিলেন শরণার্থীরা। আজ সংখ্যালঘু অধ্যূষিত ধুবুরির শরণার্থী শিবিরে চিদম্বরমের সঙ্গেই আসেন মন্ত্রী রকিবুল হুসেন। তাঁদের দেখামাত্র ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি ওঠে। তবে রকিবুল ও গণবন্টনমন্ত্রী নজরুল ইসলামের নামে মুর্দাবাদ ধ্বনি উঠলেও চিদম্বরমের নামে জিন্দাবাদ স্লোগানই দেওয়া হয়। শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন চিদম্বরম। তাঁরা জানান, বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও রকিবুল ও রাজ্যের মন্ত্রীরা তাঁদের বাঁচাতে কোনও ব্যবস্থা নেননি। চিদম্বরম শরণার্থীদের সাহায্য করা ও ঘরে ফেরানোর আশ্বাস দেন। লক্ষ্মীগঞ্জ হাইস্কুলের শিবিরে থাকা সংখ্যালঘু শরণার্থীরা চিদম্বরমের সামনে প্ল্যাকার্ড তুলে, অবিলম্বে এলাকার সব অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান। বড়োদের গ্রাম তাকিমারি ও রানিগঞ্জও ঘুরে দেখেন মন্ত্রীরা। এআইইউডিএফ নেতা বদরুদ্দিন আজমল, এসইউসি নেতৃত্ব ও আমসু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেন। |
তখনও তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ধুবুরির এক ত্রাণ শিবিরে সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত
শরণার্থীদের মুখোমুখি পি চিদম্বরম। মঙ্গলবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
চিদম্বরম বলেন, “আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শরণার্থীদের নিজ গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা হবে। সংবেদনশীল কিছু গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে। গত ৯৬ ঘণ্টায় কোনও হিংসা হয়নি। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” কয়েকদিনের সংঘর্ষকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বনাম বড়োদের লড়াই বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিটিসি ভেঙে দেওয়ারও দাবি উঠেছে। এর বিরোধিতা করে চিদম্বরম বলেন, “৬ জুলাই ও ১৯ জুলাই দুই গোষ্ঠীর কিছু নেতার উপরে হামলা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। ৬ জুলাইয়ের ঘটনায় জড়িত ২ জনকে ধরা হয়েছে।” তাঁর মতে, বিটিসি ভেঙে দেওয়া বা বড়ো চুক্তি বাতিল করার যে দাবি উঠছে, তা তাৎক্ষণিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, এটি ১০ বছরের পুরনো চুক্তি। গত বছর পরিষদীয় নির্বাচনে বিপিএফ জয়ী হয়েছে। বিধানসভায় বড়োভূমির ১৪টির মধ্যে ১১টি আসন বিপিএফ-এর। জনসমর্থন না থাকলে এটা হয় না। অসম বহু ভাষাগোষ্ঠী ও উপজাতির রাজ্য। এখানে সকলকে একসঙ্গে থাকা শিখতে হবে।” এ দিকে প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী আজ কোকরাঝাড় ঘুরে এসে গুয়াহাটিতে বলেন, “কংগ্রেসের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ অনুপ্রবেশের যে রমরমা চলছে তাতেই বড়ো এলাকায় হিংসা বাড়ছে।” সংঘর্ষ ছড়ানোর পরেও ৩ দিন রাজ্য চুপ করে বসে ছিল কেন-তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আডবাণী। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রও সমানভাবে দায়ী। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে অনুরোধ করছি, প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করুন।” তাঁর মতে, এটি ধর্মীয় লড়াই নয়, ভারতীয় বনাম বিদেশি বহিরাগতের সংঘর্ষ।” জাতীয় পঞ্জীকরণের (এনআরসি) কাজ দ্রুত মিটিয়ে বড়োভূমি থেকে জবরদখলকারীদের না হঠালে সমস্যা থেকেই যাবে বলে প্রাক্তন উপ-প্রধনামন্ত্রী (যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্বেও ছিলেন) আডবাণী মনে করেন। এ প্রসঙ্গে চিদম্বরম বলেন, “এনআরসি ধারাবাহিক, সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। হঠাৎ কিছু করা সম্ভব নয়।” |