একের পর এক আঘাতে মেঘাচ্ছন্ন ভারতে লগ্নির আবহাওয়া। সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র যখন দোলাচলে, তখন দু’দিন ধরে অর্ধেক দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় তাদের সমস্যা আরও বাড়াবে বলেই মনে করছে শিল্পমহল। শুধু তা-ই নয়, এই বিপর্যয় দেশের ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে ভবিষ্যতে লগ্নি টানার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেক শিল্পপতির।
দু’দিনের এই বিপর্যয়কে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে অভিহিত করলেও শিল্প মহল তা মানতে নারাজ। বিদ্যুৎ মন্ত্রকের যুক্তি, প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্যই এই বিপর্যয় হয়েছে, উৎপাদনের ঘাটতির জন্য নয়। এবং গত দশ বছরে এ রকম বিপর্যয় ঘটেনি। যার পাল্টা শিল্প মহল বলছে, এই প্রযুক্তিগত সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি। বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রের উন্নয়ন যে বহু দিন ধরেই অবহেলিত, এই ঘটনা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
ফিকি-র সেক্রেটারি জেনারেল রাজীব কুমার বলেন, “বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর দুর্বলতার জন্যই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা-জোগানের সমস্যার কথা সবাই জানেন। অনেক রাজ্যে বিদ্যুতের ঘাটতির জন্য মাসে এক বা একাধিক দিন শিল্প বন্ধ রাখতে হয়।” তাই শিল্প গড়লে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ মিলবে কি না, তা নিয়ে শিল্পমহলের সংশয় বাড়বে বলেই দাবি তাঁর। |
অন্ধকারেই কাজ চলছে সল্টলেকের একটি কলসেন্টারে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
অ্যাসোচেমের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াতেরও বক্তব্য, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা নেই কেন? দেশে যে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ নেই, এ ঘটনাই সেটাই প্রমাণ করছে বলে মনে করেন তিনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলাতেও কেন ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট’ নেই, সেই প্রশ্নও তুলেছেন রাওয়াত। তাঁকে সমর্থন করে আরও এক ধাপ এগিয়ে ফিকি-র পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান গৌরব স্বরূপ বলেন, “বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে।”
তাঁর ও রাওয়াতের আরও অভিযোগ, কয়লার অভাবে বহু বিদ্যুৎ কেন্দ্র অচল। সব মিলিয়ে প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা যাচ্ছে না। থমকে রয়েছে সংস্কার। আর তারই ফল এই ধরনের দুর্ঘটনা।
বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকে বিশ্বের শিল্পমহলে ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে বলে মনে করছে বণিকসভা সিআইআই। সেই ধারণা কাটাতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছেন সিআইআই-এর ডিজি চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোম ও মঙ্গলবারের দেশ জোড়া বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কত, তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানালেও বণিকসভাগুলির আশঙ্কা, ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকার কম হবে না। রাজ্যের অনেক শিল্প সংস্থাই এ দিন কারখানা ও অফিস বন্ধ করে দেয়। কেউ কেউ অবশ্য বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে কাজ চালিয়েছে। যেমন, সেক্টর ফাইভের বড় ও মাঝারি সংস্থাগুলি এ দিন জেনারেটরে কাজ চালিয়েছে দিনের অনেকটা সময়।
আজ বুধবারও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় এই আশঙ্কায় প্রচুর পরিমাণ ডিজেল মজুত করেছে সংস্থাগুলি। ছোট সংস্থাগুলির পক্ষে অবশ্য এমন কোনও ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তাদের বাধ্য হয়েই কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। |