মরসুমের সব চেয়ে বেশি বাংলাদেশি ইলিশ আজ ঢুকেছে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে। কিন্তু এটাই মরসুমের শেষ চালান কি না, সেই প্রশ্নও উঠে গেল এ দিনই। কারণ মঙ্গলবারই নির্দেশ জারি করে চিংড়ি ছাড়া সব ধরনের মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। নির্দেশে যদিও বলা হয়েছে, রমজান মাসে দেশীয় বাজারে বাড়তি চাহিদা মেটাতে এই নিষেধাজ্ঞা, কিন্তু তার পরেও রফতানি শুরু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান এ দেশের মাছ ব্যবসায়ীরা।
পদ্মা-মেঘনার ৪৮ টন ইলিশ আজ সকালে পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে চালান আসায় ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছিল। পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা-রূপনারায়ণের অববাহিকা অঞ্চলে এ বার বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশ প্রায় নিপাত্তা। মাঝারি সাইজের এক আধটা মাছ যা জালে পড়ছে, বাজারে আসছে ৮০০ থেকে হাজার টাকা কিলো দরে। কিছু দিন আগে ২৭ টন ইলিশ এসেছিল সীমান্তপার থেকে। |
কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা এত কম ছিল, বাজারে ইলিশের দামে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। ইলিশ আমদানিকারি সংস্থা ‘হিলসা’-র সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, এ দিন যে ৬০০ গ্রাম থেকে এক কিলোগ্রাম ওজনের মাছ এসেছে, তার পাইকারি দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আগের চালানের তুলনায় কিলোতে ১০০-১৫০ টাকা কম। এই মাছ আরও দু’একবার চালান এলে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের দাম একটু ‘ঠান্ডা’ হত বলে আশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিকেলেই ঢাকা থেকে আসা খবরে তাঁদের হতাশ হতে হল।
রমজান মাসে বাংলাদেশে মাছের চাহিদা বাড়ে। অনাবৃষ্টিতে বাংলাদেশেও এ বার ইলিশ-সহ অন্যান্য মাছের সরবরাহ কম। ফলে দাম ঊর্ধ্বমুখী। চট্টগ্রাম-সংলগ্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ভাল হওয়ায় সেখানে বেশ কিছু ইলিশ রোজই জালে পড়ছে। কিন্তু বর্ষায় ইলিশ যেখানে উপচে পড়ে, সেই বরিশাল-ভোলা-মহাখালি এ বার শুনসান। ফলে ঢাকা-খুলনা-ময়মনসিংহের বাজারে ইলিশ তো বটেই, সব মাছেরই আকাল। সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে মাছ ব্যবসায়ীরা ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভও দেখান। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সরকারের কাছে ইলিশ ও ছোট মাছ রফতানিতে লাগাম পরানোর সুপারিশ করে। কাল সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা। তার পরেই আজ চিংড়ি ছাড়া সমস্ত ধরনের মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করে নির্দেশ জারি করা হয়। বলা হয়েছে রোজার মাসে বাজারে মাছের চাহিদা ও দাম স্বাভাবিক রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।
রমজান মাস চলবে আরও দিন কুড়ি। যেটুকু ইলিশ বাংলাদেশের মোহানাগুলিতে এখন পাওয়া যাচ্ছে, তার পরে আর তা মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ভারতের ইলিশ আমদানিকারীরা।
তা ছাড়া, কয়েক বছর আগেও এক বার ইলিশ রফতানিতে ‘সাময়িক’ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা উঠতে বছর ঘুরে গিয়েছিল। তাই এই মরসুমে হয়তো এ পারের বাঙালির পাতে আর বাংলাদেশি ইলিশ পড়ছে না, এই আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। |