থামল ট্রেনের চাকা, টিভি চুপ
ঘুম ভেঙে দেখি, লোকে আল ধরে হাঁটা লাগিয়েছে
গ্রামবাংলায় রোজ টানা তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিং নতুন কিছু নয়। অন্তত গরমের দিনগুলোতে।
কিন্তু ফারাক হয়ে গেল দু’টো জায়গায়। এক, ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ না থাকায় রেলের চাকা বন্ধ। দুই, টিভি চলছে না। ফলে ঠিক কী ঘটছে, বোঝা যাচ্ছে না। মুখে-মুখে নানা উড়ো খবর ছড়াচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ যখন বিদ্যুৎ যায়, প্রথমটায় কারও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু তার পরেই খবর আসতে থাকে, ট্রেন চলছে না। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘটে যাওয়া বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ধাক্কা লেগেছে পূর্বাঞ্চলেও। কখন আদৌ বিদ্যুৎ আসবে, তার মাথামুন্ডু নেই। কর্মসূত্রে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া মানুষজন কী ভাবে ঘরে ফিরবেন, তা-ও অজানা। যাঁরা সময়ে বাড়ির জলের পাম্প চালাননি, তাঁরা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কত ক্ষণ জেনারেটর চালিয়ে ঠেকা দেওয়া যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাসপাতাল।
পশ্চিমে চিত্তরঞ্জন থেকে পূর্বে পূর্বস্থলী পর্যন্ত জেলা জুড়ে অন্ধকারের সমুদ্রে এক মাত্র ‘উজ্জ্বল’ ব্যতিক্রম দুর্গাপুর ইস্পাতনগরী। বর্ধমান শহরের কিছু এলাকায় দুপুর ৩টে নাগাদ এক বার বিদ্যুৎ ফিরেছিল। সাড়ে ৫টা নাগাদ তা ফের চলে যায়। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “হাসপাতাল, জল সরবরাহ এবং ইসিএলের কয়েকটি খনিতে আটকে পড়া কর্মীদের তুলতে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছিল।” বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, আগাম সতর্কতা থাকায় তারা বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুতই ছিল। বরং জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ পেয়ে সুবিধাই হয়েছে। জেলার অন্য হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখা হয়েছে জেনারেটর দিয়ে।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (গ্রামীণ) মৌসুমী দে জানান, জেলার গ্রামীণ এলাকায় দুপুর থেকেই একটানা বিদ্যুৎ ছিল না। তবে ভাতারের মাহাচান্দা ফিডার থেকে কিছু ক্ষণের জন্য বর্ধমান শহরে বিদ্যুৎ এসেছিল। সংস্থার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (শহরাঞ্চল) শান্তনু দাস বলেন, “বর্ধমান শহরের বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক ১০০ এমভিএ। দুপুরে তার ১০% বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। সিইএসসি থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে কোলাঘাটকে দেওয়া হয়। সেখান থেকে গ্রিডের মাধ্যমে বর্ধমানে বিদ্যুৎ আসে। জরুরি পরিষেবা বজায় রাখতে তা কাজে লাগানো হয়েছে।” বিকেল ৫টার পরে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরে বিভিন্ন এলাকায় আলো ফিরতে শুরু করে।
তবে শুধু বর্ধমান শহর নয়, বিকেলে দু’বার বিদ্যুৎ ফিরেছিল কালনা মহকুমার কিছু এলাকাতেও। কাটোয়া-হাওড়া লোকাল না চলায় বিপাকে পড়েন বহু যাত্রী। বাস-ট্রেকার ধরে তাঁরা গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। সমস্যায় পড়েন রোগীরা। সব্জি বিক্রেতারা শ্যাওড়াফুলি বা কলকাতার বাজার থেকে যেতে পারেননি। তাঁদের এক জন ইউসুফ শেখ বলেন, “সেই সাড়ে ১২টা থেকে বসে আছি। বিকেল গড়িয়ে গেল।”
কাটোয়ার আদি বাড়ি থেকে হাওড়া যাচ্ছিলেন দমদমের বাসিন্দা মহেন্দ্র দাস। তাঁর কথায়, “বৃষ্টি পড়ছিল। আমি ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়ি। পরে ঘুম ভেঙে দেখি, যাত্রীরা নেমে আলপথ ধরে হাঁটছেন। আমিও নেমে পড়ে হাঁটা লাগাই। ছাতনি মোড় থেকে রানাঘাট-কাটোয়া রুটের বাসে উঠি। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়। কাটোয়া থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে গড়াগাছা মোড়ে আমাদের অনেককে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আবার গাড়ি ভাড়া করে কাটোয়া ফিরেছি।” আলো ফেরায় তাঁরা সকলেই হাঁফ ছেড়ে টিভি খুলেছেন। সারা রাজ্য কতটা হাঁসফাঁস করল, জেনে নিতে হবে না?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.